বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন
১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শরৎকাল, ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অভিনেতা আবদুল কাদের মায়ের কবরে চিরশায়িত

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৯৫ Time View
বরেণ্য অভিনেতা অভিনেতা আবদুল কাদের আজ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন   (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে এই অভিনেতার বয়স হয়েছিলো ৬৯ বছর। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলী শেষে শনিবার বাদ মাগরিব বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন হয় এই অভিনেতার। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদু হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
এর আগে আবদুল কাদেরের প্রথম নামাজে জানাজা বাদ জোহর রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস সেন্ট্রাল মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় হয়। প্রথম জানাজায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অভিনেতার আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠজন ও মসজিদের মুসুল্লিরা অংশ নেন।
পরে তার মরদেহ নিয়ে  যাওয়া হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে শ্রদ্ধা জানান শিল্পকলার মহা-পরচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার এবং ডিরেক্টর গিল্ডের পক্ষে পরিচালক এসএ হক অলিকসহ অনেকশিল্পী ও সাধারণ মানুষ।  এ সময় লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আবদুল কাদের ছিলেন আমাদের সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
শ্রদ্ধা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী মসজিদে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত অভিনেতা আবদুল কাদের শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মৃত্যুকালে এই অভিনেতা স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগে অসুস্থ আবদুল কাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়। সেখানকার হাসপাতালে পরীক্ষার পর গত ১৫ ডিসেম্বর তার শরীরে ক্যান্সারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকরা জানান, সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে কেমোথেরাপিও দেওয়া যায়নি।
গত ২০ ডিসেম্বর নিজের কাটা টিকিটে পরিবারসহ দেশে ফিরেছিলেন আবদুল কাদের। পরদিন স্বজনরা তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। ২১ ডিসেম্বর তার শরীরের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
১৯৫১ সালে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন। বিটপী ছাড়ার পর তিনি ৩৫ বছর বাটায় কাজ করেন।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন আবদুল কাদের। তিনি থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর যুগ্ম-সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। পরে ছিলেন থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ)।
তার অভিনীত মঞ্চনাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে-‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’। বিটিভিতে শিশুকিশোরদের জন্য নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’র মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু তার। টিভিতে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’রও প্রিয় মুখ ছিলেন এ অভিনেতা।
এছাড়া টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের (টেনাশিনাস) সহ-সভাপতি ছিলেন আবদুল কাদের। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘আমার দেশের লাগি’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘দীঘল গায়ের কন্যা’, ‘ভালমন্দ মানুষেরা’, ‘দূরের আকাশ’ অন্যতম। ‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও বেশকিছু বিজ্ঞাপনের কাজ করেছেন গুণী এ অভিনেতা।
বদুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে চাকরি করেন। সেখানে ছিলেন ৩৫ বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর প্রথম নাটকে অভিনয়।
১৯৭২-৭৪, পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে আন্তহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে পুরস্কার পাওয়া আবদুল কাদের ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তাঁর।
টেলিভিশনে আবদুল কাদের অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের (টেনাশিনাস) সহসভাপতি ছিলেন। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন।
থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’। ১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এ অভিনয়। এ ছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, দিল্লি, দুবাই এবং দেশের প্রায় সব কটি জেলায় আমন্ত্রিত হয়ে অভিনয় করেছেন।
টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন কাদের। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকআপ’, ‘ঢুলি বাড়ি’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’ ইত্যাদি। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন এ সফল অভিনেতা।
More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102