ঢাকা ০৯:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে রাজধানী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে, বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রা প্রাথমিকের ৬৫৩১ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করল হাইকোর্ট ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার সদস্যরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভাঙা বাড়ি থেকে যে যার মতো জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন মূর্তি না ভেঙে শত্রুর শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা, শক্তি ও হেজেমনি গড়ে তোলা উচিত: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আগামী জুনের মধ্যেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সপ্তাহজুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকা শীর্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভেঙে দেওয়ার কাজ এখনও চলছে

অস্থিতিশীল চালের বাজার, দাম কমাতে আমদানির চাল আসছে বাজারে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৩৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৮২ Time View

বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই ভারত থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানি করা ৫০ হাজার টন চাল বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আমদানির এই চাল শিগগিরই বাজারে আসছে। এমনকি আগামী এক মাসের মধ্যে আরো দেড় লাখ টন চাল একই পদ্ধতিতে ভারত থেকে দেশে এসে পৌঁছাবে। প্রয়োজনে ভারতের বাইরেও অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি করে সরকারি মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। আর এসব চাল সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবহার করে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো হবে। এতে চালের বাজারে দাম কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তাহমিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি চালের বাজারদর বিষয়ে শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ কিছু দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চালের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে নানামুখী সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানি করা চাল ভারত থেকে চলে এলে চালের দাম কমে যাবে। ইতোমধ্যেই প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার টন চাল এসেছে। শিগগিরই আরো চাল আসবে। এতে পর্যাপ্ত না হলে ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশ চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নানা জটিলতা কাটিয়েও এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করলেও এ তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, এ বছর বন্যায় পানিতে ভেসে আসা পলির কারণে ধানের গাছ উর্বর হয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহে ছেয়ে ছিল ঠিকই, কিন্তু উৎপাদন কম হয়েছে। প্রতি একরে ৪০ মণ ধান হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর ২৫ থেকে ২৬ মণের বেশি কোথাও ধান উৎপাদন হয়নি। এ কারণেই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ধানের সরবরাহ হচ্ছে না। এতে ধানের দাম অতীতের অনেক বছরের তুলনায় বেশি।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। যে মৌসুমে মাঠের ধান কৃষকের গোলায় উঠছে, সে সময়ে বাজারে চালের এই মূল্য বৃদ্ধি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গতানুগতিক আদেশ-নির্দেশের পরেও চালের বাজারে কোনো পরিবর্তন আসেনি, কমেনি চালের দাম, উল্টো আরো বেড়েছে। চালের সরবরাহ বাড়ানো এবং দাম কমানোর বিষয়ে মিলারদের প্রতি বিভিন্ন হুমকি-ধামকি, আদেশ-নির্দেশ, অনুরোধ করলেও তাতে তারা কর্ণপাত করেনি।
এদিকে পরিকল্পিতভাবে সরবরাহ বন্ধ রেখে দেশব্যাপী চালের বাজার অস্থির করে তুলছেন মিল মালিকরা। এতে রাজধানীতে সপ্তাহ ব্যবধানে চালের দাম বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগুলো দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর মিল মালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম। তবে এ সংকট সাময়িক কারণ কয়েকদিন পরেই নতুন চাল বাজারে আসবে। পাইকারদের অভিযোগ, অর্ডারের টাকা নিয়েও চাল দিচ্ছে না মিলাররা। এ অবস্থায় শুল্ক তুলে দিয়ে আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ পাইকারি ব্যবসায়ীদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্বত্র সরকারের (খোলা বাজারে বিক্রি) ওএমএস কার্যক্রম না চললেও যেসব জেলায় চলছে সেসব জেলায় তা চালানোসহ আরো কিছু কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেওয়া হবে চাল। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) আবারো পরিবর্তন করে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বাজারে সরকারের আমদানি করা চালের সরবরাহ ব্যাপকহারে বাড়বে। যা দাম কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সময়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে মোটা চালের দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এবার সমানতালে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ফলে নিম্নআয়ের মানুষকে পড়তে হয়েছে কিছুটা বিপাকে। করোনাপরবর্তী সময়ে অনেকেরই আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। অনেকেই হয়েছেন বেকার। কারো কারো আয় কমেছে অর্ধেকের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে চালের এই মূল্য বৃদ্ধি জীবনযাত্রা পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই নিম্নমধ্য আয়ের মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সরু চাল সর্বোচ্চ ৬৭ ও মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। তিন মাস আগে যথাক্রমে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭ ও ৫০ টাকা। যা স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরু চালের মধ্যে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৩০০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ৬০০ টাকা। পাশাপাশি মাঝারি আকারের চালের মধ্যে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ২০০০-২০৫০ টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১৫০-২২০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। এরপর হঠাৎ করেই পরের বছর চালের দাম ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমেছিল। কিন্তু এরপর আবার চালের দাম লাগাম ছাড়া হয়। তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর পরবর্তী বছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা।
এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতি বছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে।
এ বিষয়ে চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানিয়েছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। তবে এর বেশি আর বাড়বে না। তিনি বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে পারলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ দায়িত্বটি সরকারকে পালন করতে হবে। লায়েক আলী জানান, আসলে এ বছর ধানের উৎপাদন কম হয়েছে।
খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খাতুন বলছেন, চালের দাম বাড়ার মূল কারণ কৃষকেরা ধান কম বিক্রি করছেন। এ মুহূর্তে স্কুল কলেজ বন্ধ। নানা ধরনের সরকারি সাহায্য যাচ্ছে। করোনার জন্য খরচও কমেছে। তাই হয়তো অনেকের ধান বিক্রির তাড়া নেই। সে কারণেই ধান মিলে কম যাচ্ছে। যারা বিক্রি করছেন তারাও একটু লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। কৃষকরা টাকাও পাচ্ছে। এখন যে দাম বাড়ছে চালের সেটি কোনোভাবে সংকট জনিত কারণে নয়। তিনি বলেন, তারপরেও নানা কারণে বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অনেক সময় র‌্যাশনিং বা বিতরণ করতে হয় সরকারকে। সে জন্য মজুদ রাখার দরকার হয়। কৃষকের কাছ থেকে নিলে বাজারে সংকট হতো। তাই সরাসরি আমদানি করা হচ্ছে। খাদ্য সচিব জানান, প্রথম চালানের ৫০ হাজার টন ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া জানুয়ারির মধ্যে আরো অন্তত দেড় লাখ টন চাল বাংলাদেশে আসবে। তবে এ আমদানির সঙ্গে বাজারে চালের দামের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ধান বা চালের কোনা সংকট নেই। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে এ বছর। তারপরেও সেটি খুব একটা বেশি নয় বলেই কোনো সংকট তৈরি হয়নি।

Tag :

শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে রাজধানী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা

অস্থিতিশীল চালের বাজার, দাম কমাতে আমদানির চাল আসছে বাজারে

Update Time : ০৫:৩৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই ভারত থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানি করা ৫০ হাজার টন চাল বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আমদানির এই চাল শিগগিরই বাজারে আসছে। এমনকি আগামী এক মাসের মধ্যে আরো দেড় লাখ টন চাল একই পদ্ধতিতে ভারত থেকে দেশে এসে পৌঁছাবে। প্রয়োজনে ভারতের বাইরেও অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি করে সরকারি মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। আর এসব চাল সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবহার করে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো হবে। এতে চালের বাজারে দাম কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তাহমিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি চালের বাজারদর বিষয়ে শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ কিছু দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চালের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে নানামুখী সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানি করা চাল ভারত থেকে চলে এলে চালের দাম কমে যাবে। ইতোমধ্যেই প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার টন চাল এসেছে। শিগগিরই আরো চাল আসবে। এতে পর্যাপ্ত না হলে ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশ চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নানা জটিলতা কাটিয়েও এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করলেও এ তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, এ বছর বন্যায় পানিতে ভেসে আসা পলির কারণে ধানের গাছ উর্বর হয়েছে। মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহে ছেয়ে ছিল ঠিকই, কিন্তু উৎপাদন কম হয়েছে। প্রতি একরে ৪০ মণ ধান হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর ২৫ থেকে ২৬ মণের বেশি কোথাও ধান উৎপাদন হয়নি। এ কারণেই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ধানের সরবরাহ হচ্ছে না। এতে ধানের দাম অতীতের অনেক বছরের তুলনায় বেশি।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। যে মৌসুমে মাঠের ধান কৃষকের গোলায় উঠছে, সে সময়ে বাজারে চালের এই মূল্য বৃদ্ধি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গতানুগতিক আদেশ-নির্দেশের পরেও চালের বাজারে কোনো পরিবর্তন আসেনি, কমেনি চালের দাম, উল্টো আরো বেড়েছে। চালের সরবরাহ বাড়ানো এবং দাম কমানোর বিষয়ে মিলারদের প্রতি বিভিন্ন হুমকি-ধামকি, আদেশ-নির্দেশ, অনুরোধ করলেও তাতে তারা কর্ণপাত করেনি।
এদিকে পরিকল্পিতভাবে সরবরাহ বন্ধ রেখে দেশব্যাপী চালের বাজার অস্থির করে তুলছেন মিল মালিকরা। এতে রাজধানীতে সপ্তাহ ব্যবধানে চালের দাম বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগুলো দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর মিল মালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম। তবে এ সংকট সাময়িক কারণ কয়েকদিন পরেই নতুন চাল বাজারে আসবে। পাইকারদের অভিযোগ, অর্ডারের টাকা নিয়েও চাল দিচ্ছে না মিলাররা। এ অবস্থায় শুল্ক তুলে দিয়ে আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ পাইকারি ব্যবসায়ীদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্বত্র সরকারের (খোলা বাজারে বিক্রি) ওএমএস কার্যক্রম না চললেও যেসব জেলায় চলছে সেসব জেলায় তা চালানোসহ আরো কিছু কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেওয়া হবে চাল। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) আবারো পরিবর্তন করে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বাজারে সরকারের আমদানি করা চালের সরবরাহ ব্যাপকহারে বাড়বে। যা দাম কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সময়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে মোটা চালের দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এবার সমানতালে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ফলে নিম্নআয়ের মানুষকে পড়তে হয়েছে কিছুটা বিপাকে। করোনাপরবর্তী সময়ে অনেকেরই আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে। অনেকেই হয়েছেন বেকার। কারো কারো আয় কমেছে অর্ধেকের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে চালের এই মূল্য বৃদ্ধি জীবনযাত্রা পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই নিম্নমধ্য আয়ের মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সরু চাল সর্বোচ্চ ৬৭ ও মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। তিন মাস আগে যথাক্রমে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭ ও ৫০ টাকা। যা স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরু চালের মধ্যে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৩০০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ৬০০ টাকা। পাশাপাশি মাঝারি আকারের চালের মধ্যে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ২০০০-২০৫০ টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১৫০-২২০০ টাকা। যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। এরপর হঠাৎ করেই পরের বছর চালের দাম ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমেছিল। কিন্তু এরপর আবার চালের দাম লাগাম ছাড়া হয়। তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর পরবর্তী বছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা।
এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতি বছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে।
এ বিষয়ে চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানিয়েছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। তবে এর বেশি আর বাড়বে না। তিনি বলেন, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে পারলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ দায়িত্বটি সরকারকে পালন করতে হবে। লায়েক আলী জানান, আসলে এ বছর ধানের উৎপাদন কম হয়েছে।
খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খাতুন বলছেন, চালের দাম বাড়ার মূল কারণ কৃষকেরা ধান কম বিক্রি করছেন। এ মুহূর্তে স্কুল কলেজ বন্ধ। নানা ধরনের সরকারি সাহায্য যাচ্ছে। করোনার জন্য খরচও কমেছে। তাই হয়তো অনেকের ধান বিক্রির তাড়া নেই। সে কারণেই ধান মিলে কম যাচ্ছে। যারা বিক্রি করছেন তারাও একটু লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। কৃষকরা টাকাও পাচ্ছে। এখন যে দাম বাড়ছে চালের সেটি কোনোভাবে সংকট জনিত কারণে নয়। তিনি বলেন, তারপরেও নানা কারণে বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অনেক সময় র‌্যাশনিং বা বিতরণ করতে হয় সরকারকে। সে জন্য মজুদ রাখার দরকার হয়। কৃষকের কাছ থেকে নিলে বাজারে সংকট হতো। তাই সরাসরি আমদানি করা হচ্ছে। খাদ্য সচিব জানান, প্রথম চালানের ৫০ হাজার টন ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া জানুয়ারির মধ্যে আরো অন্তত দেড় লাখ টন চাল বাংলাদেশে আসবে। তবে এ আমদানির সঙ্গে বাজারে চালের দামের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ধান বা চালের কোনা সংকট নেই। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে এ বছর। তারপরেও সেটি খুব একটা বেশি নয় বলেই কোনো সংকট তৈরি হয়নি।