টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ লোক এখন পানিবন্দি। এসব এলাকার প্রধান নদীসমূহের পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি। এ অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১২ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
তবে আগামী তিন দিন বৃষ্টি কমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক সপ্তাহ আগে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রভাবে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। তবে তিন দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়িসহ দক্ষিণ–পূর্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। গত পরশু থেকে সিলেট অঞ্চলেও বৃষ্টি শুরু হয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয় ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল।
এতে চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারে বন্যা হয়। পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছে ৪৫ লাখ মানুষ। আর এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বন্যাকবলিত এসব এলাকায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের ঠিকানা হয়েছে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরে। বিভিন্ন স্কুলের ছোট ছোট কামড়ায় জবুথবু হয়ে রয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষ, শিশু ও তরুণ। দুর্গত এলাকায় বুধবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই; নেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় দুর্গম এলাকায় বাসিন্দারা কেমন আছেন, তা-ও জানা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আজ শুক্রবার সকালে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বিভাগসহ কিছু অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১৫১, চট্টগ্রামে ১৪৩ এবং রাঙামাটিতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
নদীবন্দরের জন্য ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে, আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বৃষ্টি কমে আসবে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আজ সকালে কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উজানে বৃষ্টি কমেছে এবং সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারতে পানি কমছে।