সিলেটের ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি) ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের দুই মাস ৮ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে ওই ঘটনায় গ্রেফতার আট ছাত্রলীগ কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) সকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বহুল আলোচিত এই গণধর্ষণ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য সিলেটর মুখ্য মহানগর হাকিম আবুল কাশেমের আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন বলে আদালত পুলিশের সহকারী কমিশনার খোকন চন্দ্র সরকার জানান।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আটজনের জনের মধ্যে ছয়জন ধর্ষণে সরাসরি জড়িত, বাকিরা সহযোগিতা করেছে।
সরাসরি জড়িতরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া।
আর রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, চার্জশিট দাখিলের প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়ে দুপুর ১২টায় নগরের শাহজালাল উপশহরের এসএমপির উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।
তিনি বলেন, মামলার আসামিদের ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দাখিলে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার তিনদিনের মাথায় পুলিশ আদালতে চার্জশিট প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে।
গত রবিবার হাতে পাওয়া ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণেরস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের সঙ্গে মামলার আসামিদের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। এর আগে গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর দুদিনে এ মামলায় গ্রেফতার ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারের ডিএনএ ল্যাবে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তীতে এ প্রতিবেদন তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌছে রোববার (২৯ নভেম্বর) ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে একটি রাস্তায় প্রাইভেট কারের মধ্যেই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
সিলেটের ওই ঘটনার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনায় এ ধরনের অপরাধের শাস্তি বাড়ানোর দাবি আবারও আলোচনায় আসে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বিক্ষোভের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। পরে তা সংসদেও আইন হিসেবে পাস হয়।
অবশ্য আগের আইনেও ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল।