ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনার পর ‘ভয়াবহ পরিণামের’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরনা এর প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে খামেনি বলেন, ইসরায়েলের হামলায় জায়নবাদি শাসকরা নিজেদের জন্য একটি তিক্ত ও বেদনাদায়ক নিয়তি নিশ্চিত করেছে। নিশ্চিতভাবেই তাদেরকে ওই পরিণাম দেওয়া হবে। জায়নবাদি শাসকদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘মহান ইরান জাতির উদ্দেশে বলছি! জায়নবাদিরা তাদের অশুভ ও রক্তাক্ত হাত দিয়ে আমাদের প্রিয় দেশের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এবং আবাসিক এলাকায় আঘাত করে তাদের দুর্বিনীত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।’
এদিকে হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, রাজধানী তেহরানে আইআরজিসি-এর সদর দপ্তরে হামলার সময় হোসেইন সালামি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা ছাড়াও রেভল্যুশনারি গার্ডের সদর দপ্তরেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাগুলো ধ্বংস করা। এই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে, কারণ ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
এদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানান, ভোররাতে চালানো এই অভিযানে তারা ইরানের ডজনখানেক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাকে” লক্ষ্যবস্তু করেছে। তার দাবি, ইরানের কাছে এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা দিয়ে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
ইসরায়েলি দৈনিক টাইমস অব ইসরায়েলকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা নেশন অব লায়ন্স” নামের এক বিমান অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান থেকে আসা তাৎক্ষণিক হুমকি মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে, তেহরান শহর ও আশপাশে একাধিক জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ইরান তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে এবং ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলাকে প্রতিরোধমূলক আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ইরান থেকে শিগগিরই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ভোর ৩টা থেকে জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।