ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ পশুর কিছু অংশ ফেলে দিতে বলা হয়েছে, যা খাওয়া নিষিদ্ধ। তা হলো, প্রবাহিত রক্ত, অণ্ডকোষ, চামড়া ও গোশতের মধ্যে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি, মূত্রথলি, পিত্ত, নর ও মাদির যৌনাঙ্গ।
হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বকরির সাতটি জিনিস অপছন্দ করেছেন- পিত্ত, মূত্রথলি, মাংসগ্রন্থি, নরও মাদির যৌনাঙ্গ, অণ্ডকোষ, প্রবাহিত রক্ত। (কিতাবুল আসার, হাদিস-৮০৮)
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত মুজাহিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বকরির সাত জিনিস (খাওয়াকে) অপছন্দ করেছেন। (তাহলো)- প্রবাহিত রক্ত, পিত্ত, মূত্রথলি, মাংসগ্রন্থি, নর-মাদা পশুর গুপ্তাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ।’ (বায়হাকি)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রক্ত ছাড়া হালাল পশুর অন্য কোনো অংশ হারাম নয়।’ তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হালাল পশুর এ অংশগুলো অপছন্দ করতেন-
– প্রবাহিত রক্ত
– অণ্ডকোষ
– চামড়া ও গোশতের মাঝে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি
– মূত্রথলি
– পিত্ত
– নর ও মাদা পশুর গুপ্তাঙ্গ।
সর্ব সম্মতিক্রমে পশুর রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ। সুতরাং কুরবানির পশু হোক কিংবা হালাল যে কোনো পশু হোক; সব হালাল প্রাণীর রক্ত খাওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ। সুতরাং হাদিসের অনুসরণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপছন্দনীয় অংশগুলো না খাওয়াই উত্তম।
কোরবানির পশুর আরও কিছু বিধান
কোরবানির পশুর গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়ে দেবে এবং গরিব-মিসকিনকে সাদকা করবে। গোশত বিতরণের মুস্তাহাব পদ্ধতি হলো তিন ভাগ করে এক ভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখবে এবং বাকি দুই ভাগের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আর এক ভাগ গরিব-মিসকিনকে বণ্টন করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৪৭৩)
কয়েক ব্যক্তি একসঙ্গে শরিক হয়ে যদি একটি পশু কোরবানি করে তবে পাল্লা দ্বারা মেপে সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নেবে। অনুমান করে বণ্টন করা জায়েজ নয়। কেননা ভাগে কমবেশি হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে। অবশ্য যদি গোশতের সঙ্গে মাথা, পায়া এবং চামড়াও ভাগ করে দেয়, তবে যেভাগে মাথা, পায়া ও চামড়া থাকবে সে ভাগে যদি গোশত কম হয়, তবে এই বণ্টন শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যে ভাগে গোশত বেশি সেই ভাগে মাথা, পায়া বা চামড়া দিলে বণ্টন শুদ্ধ হবে না, সুদ হবে এবং গুনাহগার হতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/২৩২)
কোরবানির গোশত অমুসলিমকেও দেওয়া বৈধ। কিন্তু মজুরি বাবদ দেওয়া বৈধ নয়। অবশ্য মুসলিমদের দেওয়াই উত্তম। কসাইকে গোশত বানানোর মজুরি হিসেবে গোশত, চামড়া, রশি ইত্যাদি দেওয়া বৈধ নয়। পারিশ্রমিক দিতে হলে তা ভিন্নভাবে আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০)
কোরবানির পশুর গোশত কাটা ইত্যাদি কারণে যথোচিত মূল্যের কমে কসাইয়ের কাছে চামড়া বিক্রয় করা বৈধ নয়।