বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে ইহুদিদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। কোরআনে কারিমে তাদের অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুদখোর ও ধনলিপ্সু জাতি হিসেবেও তাদের একটা পরিচয় রয়েছে। এ জাতি যুগ যুগ ধরে খোদাদ্রোহিতা, কুফরি ও তাদের খারাপ কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের কাছে অত্যন্ত ঘৃণাভরে পরিচিতি পেয়ে এসেছে।
জন্মগতভাবেই এই জাতি খুবই চতুর ও ধুরন্ধর হওয়ায় বিভিন্ন ছলচাতুরী দিয়ে মানুষকে বশীভূত রাখার কৌশল অবলম্বন করে। এর মাধ্যমে তারা অন্যের ওপর দিয়ে যুগে যুগে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের ওপর আরোপ করা হলো লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল।
ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, ইব্রাহীমের পুত্র ইসহাক, তার পুত্র ইয়াকুব ওরফে ইস্মাইল এর বংশধরগণ বনী-ইসরায়েল নামে পরিচিত। বনি ইসরাইল হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ইব্রাহিম এর বংশধরদের একটি শাখা। ইয়াকুবের বারো পুত্রের নামে বনী-ইসরায়েলের বারোটি গোষ্ঠির জন্ম হয়, যার মধ্যে ইয়াহুদা‘র ছেলেমেয়েরা যারা যুডিয়া প্রদেশের কেনানে বসবাস করতো, এ শাখারই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে।
ধর্মগত দিক থেকে মুসলিমদের সাথে ইহুদিদের মিল সবচেয়ে বেশী। তাদেরকে আহলে কিতাব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাই একজন মুসলিম ইহুদিদের হাতে জবেহকৃত পশু খেতে পারে, তাদের নারীদের ধর্মান্তরিত না করেও বিয়ে করতে পারে, তারা মুসলিমদের মতনই খৎনা করে, শুকরের মাংস খায়না। তাদের সম্পর্কে একটু জানাশোনা থাকলে টুপি-দাড়িওয়ালা ধার্মিক মুসলিম ও ইহুদি রাব্বির যত মিল পাবেন, খ্রীষ্টান পাদ্রী বা মিনিস্টার প্যাস্টরের সাথে তার ভগ্নাংশও পাবেন না। ইহুদিদের সিনাগগে(মসজিদে) ঈশ্বর বা ঈশ্বরের পুত্রের কোন মুর্তি পাবেন না। মুসলিম আর ইহুদিরা একই নিরাকার প্রভুকে মানে। এরপরও আমাদের আর তাদের সাথে বিরোধ কেন এত বেশী?
তার আগে আরেকটি কথা বলা জরুরী। খ্রিষ্টানদের সাথে ইহুদিদের বিরোধ কিন্ত আরও অনেক গুণ বেশি। ইহুদিরা ঈসাকে কখনই নবী বা মসিহা বলে মানেনি। তারা ঈসা নবীর ভার্জিন বার্থ বা ঈশ্বরত্ব মানতে পারেনি। আর ইহুদিদের বলা হত “ক্রাইস্ট কিলার” বা “জিশুর হন্তারক”।
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ইসরাইল ভূখন্ডের তৎকালীন রোমান গভর্নর পিলেত যীশুখ্রীষ্টকে মৃত্যুদন্ড দিতে আগ্রহী ছিল না। মূলত ইহুদিদের চাপে সে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। আর এই ইহুদিরা নিজেদের বংশধরদের উপরও খ্রীষ্ট হত্যার দায়ভার গ্রহণ করে, এটা নিয়ে গর্ব বোধও করে।
যাই হোক, এভাবে বিতাড়িত হতে হতে একসময় হাজার হাজার বছরের বাসস্থান থেকে উৎখাত হয়ে ইহুদিরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করলো।
ইসলামের নবীর আগমনকালে ইহুদিদের প্রধান কয়েকটি বসতি ছিল মদিনা ও তার আশেপাশে। ইসলামের নবীর আগমনের পর থেকে প্রথমে মদিনা ও পরবর্তীতে সিরিয়া ও সমগ্র আরব ভূমি থেকে ইহুদি তথা ইসরাইলিদের তাদের ষড়যন্ত্র মূলক কর্মকাণ্ডের জন্য হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করা হয়, যার প্রমাণ ইসলামের ইতিহাস ও কোরান-হাদিস সর্বত্র সহজ প্রাপ্য।
সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদি-বিদ্বেষ খুবই বহুল প্রচলিত একটা টার্ম। ইহুদি-বিদ্বেষ বলতে ইহুদি জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের প্রতি বৈরিতা বা বিদ্বেষ বোঝানো হয়ে থাকে। এধরনের বিদ্বেষের মধ্যে ব্যক্তিগত ঘৃণা থেকে শুরু করে সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ডও পড়ে। ইংরেজিতে একে বলা হয় এন্টি-সেমিটিজম, যার অর্থ দাঁড়ায় সেমিটিয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ। খ্রিস্টান-শাসিত ইউরোপে সংখ্যালঘু ধর্মীয়-গোষ্ঠী হিসেবে ইহুদিরা বিভিন্নসময় ধর্মীয় বিদ্বেষ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হত। ধর্মীয় নির্যাতনের মধ্যে ছিল ধর্ম-পালনে বাধা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, দেশ থেকে বিতাড়ন ইত্যাদি। শিল্প-বিপ্লবের পর ইহুদিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিঘটতে থাকে দ্রুত। এসময় ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে ইহুদিদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ দেখা দেয়।
এই জাতিগত বিদ্বেষ ভয়াবহ চরম আকার ধারণ করে বিংশ শতকের তৃতীয় দশকে,হিটলারের নাৎসি দল-শাসিত জার্মানিতে। ইহুদি-বিরোধী এই জাতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের দায়ও ইহুদিদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা বিভিন্ন অত্যাচার এবং নিধনমূলক আইন-কানুন প্রণয়ন করে। ১৯৩৯ সালে হিটলার বিভিন্ন দেশ আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটালে ইউরোপে ইহুদি নির্যাতন ও নিধন চরমরূপ নেয়। তারা আইন করে ইহুদিদের নিজস্ব নিবাস অধিগ্রহণ করে বন্দী-নিবাসে প্রেরণ করে এবং পর্যায়ক্রমে ইহুদিদের হত্যা করে। প্রায় ৬০ লক্ষ/৬মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়, যা ইতিহাসে ‘হলোকাস্ট‘ নামে পরিচিত।
ইহুদিদের সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী
আল্লাহ ইহুদিদের ওপর স্থায়ীভাবে লাঞ্ছনা, অপমান ও নির্যাতন নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যুগে যুগে, ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে তাদের লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন। মিসরের ফেরআউন শাইশাক জেরুসালেম দখল করে এবং ইহুদিদের তাড়িয়ে দেয়। তারপর ব্যাবিলনের রাজা বখতে নসর জেরুসালেম দখল করে ইহুদিদের বন্দি করে নিয়ে আসে এবং তাদের দাস বানিয়ে রাখে। পরে পারস্য সম্রাট ইহুদি দাসদের সেখানে ফেরত পাঠান সত্য, কিন্তু তখন পারস্য সম্রাটেরই অধীন ছিল। ৬৬ খ্রি. রোমান সম্রাট তাইতুস জেরুসালেম দখল করে এবং ইহুদিদের ব্যাপক হারে হত্যা করে। উপরন্তু ৭০ খ্রি. রোমান বাহিনী হাজার হাজার ইহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যায় এবং তাদের দাস বানায়।
এডলফ হিটলার জার্মানির নাৎসি নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি ইহুদিদের হত্যা করেছিলেন। হিটলারের ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার কারণ হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের জন্য ইহুদিদের দায়ী করার কথা বলা হয়। যদিও এটা একটা ধারণা মাত্র।
হিটলারের ইহুদি হত্যার আসল কারণ হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মুহূর্তে ইহুদি নেতারা বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইহুদিরা ওই সময় পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের দেশত্যাগ প্রয়োজন। কিন্তু কোনো ইহুদি ইসরাইল রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল না।
তখন ইহুদি নেতারা হিটলারের সাথে এক গোপন ইহুদি হত্যা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। যাতে করে বিশ্বব্যাপী ইহুদিদের মধ্যে ভয় ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা যায় এবং তারা ইসরাইলের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪ লাখ ৫০ হাজার ইহুদির মধ্যে মাত্র ৭ হাজারকে ইসরাইলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং অবশিষ্টদের হত্যার নীলনকশা করা হয়। হিটলার ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে জড়ো করে গ্যাস বোমা মেরে হত্যা করে।
এরপরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইহুদিরা ইসরাইলের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করতে রাজি না হওয়ায় ইহুদি নেতারা বিশ্বের সর্বত্র ইহুদি হত্যার গোপন পরিকল্পনা হাতে নেয়। যাতে করে তাদের মধ্যে ভয়ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়। ইহুদিরা ইসরাইলের হাইফা বন্দরে এসেও জাহাজ থেকে নামতে রাজি না হওয়ায় ইহুদি বোঝাই জাহাজটিকে তাদের নেতা ডেভিড গুরিওন বোমা মেরে সাগরে ডুবিয়ে দেয়। এভাবে আল্লাহর ঘোষণা সত্যে পরিণত হয়। (ইসলাম ও অন্যান্য মতবাদ : পৃ. ৮৪)।
এতদসম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আরো স্মরণ করো, যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত সবসময় বনি ইসরাইলের ওপর এমন লোককে প্রভাবশালী করবেন যারা তাদের নিকৃষ্টতম শাস্তি দান ও নির্যাতন করতে থাকবে। (সূরা আরাফ : ১৬৭)।
ইরশাদ হয়েছে, তাদের ওপর অপমান ও অভাব লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও গজবের শিকার হয়েছে। কেননা, তারা আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করেছে এবং নবীদের হত্যা করেছে, এটা ছিল তাদের নাফরমানি এবং তারা ছিল সীমালঙ্ঘকারী। (সূরা বাকারা : ৬১)।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ করেন, যারা আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করে, নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারীদেরও হত্যা করে, তাদের কষ্টদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। তারাই ওই সকল যাদের আমল দুনিয়া এবং আখেরাতে ব্যর্থ বেকার এবং যাদের কোনো সাহায্যকারী নেই। (সূরা আল ইমরান : ২১-২২)। আল্লাহ ইহুদিদের ব্যাপারে আরো বলেন, তারা মন্দ কাজ থেকে বিরত হয় না, যা তারা ইতঃপূর্বে করেছে এবং তারা যা করে তা কতই না খারাপ। (সূরা মায়েদা : ৭৯)।
তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে গজবপ্রাপ্ত জাতি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী তাদের ধ্বংস অনিবার্য। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক হাদিসের আলোকে বলা যায়, বর্বর নৃশংস অত্যাচারী ইহুদিরা অবশ্যই ধ্বংস হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষণ না মুসলিমদের সঙ্গে ইহুদিদের যুদ্ধ হবে। মুসলিমরা ইহুদিদের হত্যা করতে থাকবে। তখন তারা (ইহুদিরা) পাথর ও গাছের পেছনে লুকিয়ে আশ্রয় নেবে। তখন পাথর ও গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা, এই তো ইহুদি আমার পেছনে লুকিয়ে আছে। এসো, তাকে হত্যা করো। (সহীহ মুসলিম)।
তবে নির্দিষ্ট করে জানা নেই, সে চূড়ান্ত যুদ্ধটি কতদূরে। আর এর আগে ইহুদিদের হাতে ঝরবে কত মুসলমানের প্রাণ? আল্লাহ আপনি পরীক্ষার সময়টি দ্রুত সমাপ্ত করে সহসাই মুক্তি ও বিজয়ের চূড়ান্ত দিনটির সূর্য উদিত করুন।
যুগে যুগে ইহুদিদের অপকর্ম ও ঐতিহাসিক শাস্তি
ইহুদি জাতিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভুগেছেন হজরত মুসা (আ.)। কোরআন শরিফের বহু জায়গায় এর বিশদ বর্ণনা এসেছে।
হজরত দাউদ (আ.) প্রতি শনিবার আল্লাহর কিতাব জবুর পাঠ করতেন, ওই সময় সমুদ্রের মাছও কিনারে এসে তাঁর তেলাওয়াত শুনত। কিন্তু ইহুদিরা ওই সময় মাছগুলো ধরে নিত। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওই দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে তারা আল্লাহর বিধানেও তাদের কূটবুদ্ধির অবতারণা করে, তারা শনিবার মাছ ঘেরাও করে রেখে রবিবার তা ধরত। আল্লাহ এর শাস্তিস্বরূপ তাদের একদলকে বানরে পরিণত করেন। তিন দিনের মাথায় ওই বানরের দল সব মারা যায়। (সুরা বাকারা, আয়াত ৪৯-৭৩)
ইহুদি জাতি হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ওফাতের পর পারস্পরিক বিভক্তি এবং ধর্মদ্রোহিতা ও কুকর্মের পথ অবলম্বন করে। কোনো কোনো নবী এসে আল্লাহর নির্দেশে ইহুদিদের এ ধরনের কার্যকলাপের শোচনীয় পরিণাম সম্পর্কে সতর্কবাণী শোনালেও তারা তাঁর কথা না মেনে উল্টো নবীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে। তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়।
এরপর কিছুদিন তারা মোটামুটি ভালোভাবে চলে, কিন্তু তাদের উপাদানগত কুপ্রবৃত্তি তাদের ভালো থাকতে দেয়নি। তারা খোদাদ্রোহিতার বশবর্তী হয়ে মূর্তিপূজা আরম্ভ করে। হজরত ইলিয়াস (আ.) ইহুদিদের পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ইহুদিদের বিরাগভাজন হয়ে নির্যাতনের শিকারই শুধু হননি, তারা তাঁকে হত্যার জন্যও উদ্ধত হয়। পরিণামে আবার তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়। তারপর অবস্থার যিকঞ্চিৎ উন্নতি হয়।
অতঃপর আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে তাদের ওপর বাবেল সম্রাট বুখতে নসর চড়াও হয়। সম্রাট বায়তুল মাকদিসে আক্রমণ চালিয়ে মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দেয়। হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে শহরটি উজাড় করে দেয়। এরপর ইহুদিরা বায়তুল মাকদিস থেকে নির্বাসিত হয়ে বাবেলে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে চরম লাঞ্ছনা ও দুর্গতির মধ্যে ৭০ বছর পার করে। অতঃপর জনৈক ইরান সম্রাট বাবেল দখল করে ইহুদিদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদের আবার সিরিয়ায় পৌঁছে দেয়। এ সময় তারা আবার মসজিদে আকসা নির্মাণ করে।
অতঃপর ঈসা (আ.)-এর জন্মের ১৭০ বছর আগে আবার তারা পাপে লিপ্ত হলে আন্তাকিয়ার সম্রাট তাদের ওপর চড়াও হয়ে ৪০ হাজার হত্যা করে এবং ৪০ হাজার বন্দি করে। সম্রাট মসজিদে আকসারও অবমাননা করে। এর অনেক বছর পর বায়তুল মাকদিস রোম সম্রাটের দখলে চলে গেলে সে ইহুদিদের সাহায্য করে। এর আট বছর পর ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয়।
এভাবে বারবার ইহুদি রাজ্যের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছলেও এরা আল্লাহর নাফরমানি করতে থাকে। নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে। (তাফসিরে বয়ানুল কোরআন : ২/৩৬৭-৩৬৮)
হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ইহুদিদের অশ্লীল কার্যকলাপের বিরোধিতা করলে তারা তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে কতল করে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম : ১/১২৬)
খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র
হজরত ঈসা (আ.) তাদের বিরাগভাজন হন, তাদের ক্রোধের আগুনে পড়ে মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু আল্লাহ নিজ মহিমায় হজরত ঈসা (আ.)-কে তাদের হাত থেকে রক্ষা করে আসমানে উঠিয়ে নেন।
হজরত ঈসা (আ.)-কে আসমানে ওঠানোর পর ঈসা (আ.)-এর ধর্মের পতন হয়। এরপর ঈসা (আ.)-এর সঙ্গীদের ফাঁদে ফেলে খ্রিস্টধর্মের নামে নতুন ধর্ম প্রণয়ন করে এক কট্টরপন্থী ইহুদি। তার নাম ছিল ‘শাওল’। পরে সে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘পৌল’। ‘পৌল’ নামের এই ইহুদি ঈসা (আ.)-এর চরম দুশমন ছিল। এর জের ধরেই সে ছদ্মবেশে খ্রিস্টানদের ভেতর ঢুকে খ্রিস্টধর্মকে বিকৃত করে ফেলে। খ্রিস্টানরা তার ফাঁদে পা দেয় এবং সে এ কাজে শতভাগ সফল হয়। বলা যায়, বর্তমান খ্রিস্টধর্ম ঈসা (আ.)-এর রেখে যাওয়া খ্রিস্ট ধর্ম নয়, বরং এটা হলো পৌল ধর্ম। (সূত্র : ঈসাইয়্যাত কিয়া হ্যায়, পৃ. ১০৩-১০৬)