শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ হেমন্তকাল, ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
রাত পোহালেই সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে প্রথম যাত্রা শুরু করবে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ আচরণবিধি লঙ্ঘন তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১২ জনকে ইসির শোকজ তফসিল পুনর্নির্ধারণের আর কোনো সুযোগ নেই: ইসি সচিব নির্বাচনে অংশ নিতে ৮২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ৩১৪০ পদে নিয়োগ আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে খুব উদ্বেগ নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন প্রার্থীরা আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি

এক নজরে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবন

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৯ Time View

শুভ জন্ম : মক্কার প্রসিদ্ধ ও সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের বনু হাশেম শাখায়। ‘আমুল ফিল’ তথা আবরাহার হস্তিবাহিনীর কাবাঘর আক্রমণের বছর ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন সুবহে সাদিকের সময়।

‘মুহাম্মদ’ নামটি যেভাবে এলো

গর্ভে থাকাকালেই মা আমিনা স্বপ্নে দেখেন যে শিশু ভূমিষ্ঠ হবে, তাঁর নাম হবে মুহাম্মদ। এর অর্থ সর্বজন প্রশংসিত।

স্বপ্নে মা আমেনা আরো নির্দেশিত হলেন, ‘তুমি বলবে, আমার এই সন্তানকে সকল হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। ’ সন্তান প্রসবের পর মা আমিনা সন্তানের দাদা আবদুল মুত্তালিবকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত জানান।

দাদা সে অনুযায়ী শিশুটির নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। একই সঙ্গে দাদা প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের এই সন্তানকে আমরা সকল হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। ’

আবদুল মুত্তালিব নাতিকে কোলে নিয়ে পবিত্র কাবা শরিফে প্রবেশ করলেন এবং আল্লাহর শোকর আদায় করলেন। (ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-১৫৮)

(নামকরণের বিষয়েও মতভিন্নতা পাওয়া যায়।)

 শৈশবঃ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খৃীস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আমিনা এবং পিতার নাম আব্দুল্লাহ।
জন্ম নেয়ার পরেই আমেনা দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে খবর পাঠান । আব্দুল মুত্তালিব খুশিতে তখনি শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে কোলে নিয়ে তার নাম রাখেন মুহাম্মদ ।

দুগ্ধ পান কালঃ
সর্ব প্রথম তাঁকে তাঁর মাতা হযরত আমেনা দুগ্ধ পান করান। অতঃপর আবু লাহাবের বাঁদী ‘সুওয়াইবা’ তাকে দুগ্ধ পান করায়। অতঃপর ধাত্রীর সন্ধান করতে থাকেন। ‘হাওয়াযিন’ গোত্রের বানী সা’দ এর মহিলা হালীমা ছা’দিয়া এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হন।

দুধপানকালে হালীমা নবী করীম (সাঃ) এর অলৈাকিক ও বরকতময় অনেক র্দশ্য প্রত্যক্ষ করে । বিবি হালিমার বর্ননা সূত্রে ইতিহাসবিদ ইবনু ইসহাক্ব বলেন যে, বিবি হালীমাহ এবং তার স্বামী তার দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান সহ বনু সা’দ গোত্রের এক দল মহিলার সঙ্গে অর্থের বিনিময় দুধমান করাবে এমন শিশুর সন্ধানে মক্কা যান । বিবি হলিীমাহ বলেন, আমি আমার একটি সাদা মাদী গাধার পিঠে সাওয়ার হয়ে চলছিলাম ।আমার সঙ্গে উটও ছিল । কিন্তু তার উলানেও দুধ ছিল না।  আমার সঙ্গে শিশুটির জন্যও একবিন্দু  দুধ ছিল না আমার বুকে । আর আমাদের সাথে গাধাটি ছিলো দূর্বল তাই আমাদের কাফেলার পিছনে পরে থাকতাম ।

তারপর আমাদের দলে এমন কনো মহিলা ছিল না যে যার কাছে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে দুধ পপান করানোর প্রস্তাব দেয়া হয়নি । কিন্তু সকলেই তাকে নিতে অস্বীকার করল । দলের সকল মহিলারা একটি করে শিশু সংগ্র করে নিল বিাকি রইলাম শুধু আমি । পরবরতীতে আমি আমার স্বামীকে বললাম , সকলেই দুধপান করানোর জন্য শিশু নিয়ে ফিরছে আরি আমাকে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে । তার চেয়ে আমি সেই ইয়াতিম ছেলেকেই নিয়ে ফিরে যাই ।

শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে যখন তাবুতে ফিরে আসি তারপরে দুজন শিশুই দুগ্ধপানকরতে সক্ষম হন । এবং আমার স্বামী উট দোহন করাতে গিয়ে দেখেন তার ওলান দুধে পরিপূর্ন । বাড়ি ফেরার পথে আমাদের বাহন আর আগের মতন দূর্বল ছিল না । সকলে বলতে লাগলে এটিই কি তোমাদের পূরেবর বাহন ।
আমি বল্লাম হ্যা এটিই সেই বাহন যার সওয়ার হয়ে এসেছিলাম ।
আমাদের বকরীগুলো সবসময় উদর ভরে ঘাস খেয়ে আসতো । এবং আমরা সবাই পরিপূর্নভাবে দুধ দোহন করতাম ।

লালন-পাললনের দু-বছর পুরন হতেই শিশুটি বড় এবং সুঠাম দেহের অধিকারী হয়ে যায় ।

দাদা ও চাচার তত্ত্বাবধানেঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর মাতা-পিতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব নেন। তিনি তাকে খুব স্নেহ করতেন। এমনকি নিজের ছেলেদের উপরও তাঁকে প্রাধান্য দিতেন।তাকে নিজের আসনে বসাতেন। দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই তিনি তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্ব নেন। তখন তার বয়স ছিল আট বছর। তিনি চাচা আবু তালিবকে বকরী লালন-পালন ও শাম দেশের ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন।

খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহঃ
মুহাম্মদ (সাঃ) এর সততা এবং ব্যবসায়ীগুনাগুন দেখে খাদিজা (রাঃ) তাকে বিবাহের জন্য ইচ্ছা করেন ।
তিনি তার মনের বাসনা তাঁর বান্ধবী নাফীসা বিনতে মুনাব্বিহ এর নিকট ব্যক্ত করলেন এবং বিষয়টি নিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট আলোচনার জন্য বললেন ।

নাফীসা বিষয়টি মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে বললেন এবং মুহাম্মদ (সাঃ) বিষয়টি সম্মতি জানালেন এবং চাচা আবু ত্বালিবকে জানান । আবু ত্বালিব বিষয়টি খাদিজা (রাঃ) পিতৃবের সাথে আলোচনা করে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

নবীজীর সীনা চাক:

বনূ সা’দ গোত্রে থাকা অবস্থায় একদা দু’জন ফিরিশতা শিশু মুহাম্মাদের কাছে এলেন। তারা তাঁর পেট চিরে তাঁর হৃদপিণ্ড থেকে কালো এক টকুরো রক্তপিণ্ড বের করে ফেলে দিলেন। এভাবে চার বার তাঁর সীনা চাক করা হয়। প্রথম বার চার বছর বয়সে ২য় বার ১০ বছর বয়সে, ৩য় বার চলি­শ বছর বয়সে, ৪র্থ বার ৫১ বছর বয়সে তাঁর সীনা চাক করা হয়।

মিরাজ তথা উর্দ্ধারোহনএমন সময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। কথিত আছে, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশ্‌ত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা ইতিহাসে মি’রাজ নামে পরিচিত। এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ই অতিবাহিত হয়নি বলে বলা হয়।

নবুওয়াতী লাভ ও প্রথম কুরআন নাযিলঃ
রাসূল (সাঃ) চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়াতী লাভ করেন । তিনি মক্কা থেকে দুই মাইল দূরত্বে অবস্থিত (জাবালে নূর) হেরা গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতেন এবং এখানেই প্রথম কুরআনের আয়াত নাযিল হয় ।

জিবরিল (আঃ)- এর আগমনঃ  
তিনি যখন হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন তখন আল্লাহর ফেরেস্তা জিবরাইল (আঃ) আগমন করেন ।
জিবরিল (আঃ) তার নিকট আগমন করে বললেন ‘তুমি পড়” । তিনি বললনে পড়ার অভ্যাস নেই আমার । তিনি আবারও বললেন ‘তুমি পড়” তিনি বললনে পড়ার অভ্যাস নেই আমার। তিনি তৃতীয় বার বুকে জরিয়ে নিলেন , তারপর নিনি আবারও বললেন ‘পড়’  তখন রাসূল (সাঃ) পড়তে শুরু করলেন :

পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।

নবুওয়াতের পর মক্কায় নবী জীবন (৪১-৫৩ বছর)

প্রথম তিন বছর (৬১০-৬১২) : ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ১ ফেব্রুয়ারি (১৭ রমজান) নবুওয়াত লাভ করেন ও প্রথম ওহি নাজিল হয়। প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত খাদিজা সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করেন। পরে হজরত আবু বকর, হজরত আলী ও পালক পুত্র জায়েদ ইবনে হারেসার ইসলাম গ্রহণ। গোপনে চলে ঘনিষ্ঠ মহলে ইসলামের দাওয়াত। হজরত আবু বকর রা:-এর প্রচেষ্টায় উসমান বিন আফফান, আবদুর রহমান বিন আউফ, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, তালহা বিন উবায়দুল্লাহ, জুবায়ের বিন আওয়াম ও উবাইদা বিন জাররাহ রা: প্রমুখ সম্ভ্রান্ত যুবকদের ইসলাম গ্রহণ। হজরত খাদিজা রা:-এর আত্মীয়-স্বজন ও কিছু দাস-দাসী ইসলাম কবুল। নওমুসলিমদের ওপর নেমে আসে নির্মম শারীরিক নির্যাতন। হজরত আরকামের ঘরে ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়। প্রথম তিন বছরে আনুমানিক ৪০ জন লোকের ইসলাম গ্রহণ।

দ্বিতীয় তিন বছর : প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতের বিধান। রাসূলুল্লাহ সা: আপন আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের দাওয়াত দেন। কিন্তু পূর্বপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করতে খুব কম লোক রাজি হয়। মুসলিমদের ওপর কুরাইশদের অত্যাচার ও নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের রজব মাসে গোপনে চারজন মহিলাসহ ১৫ জন মুসলিম আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। এদের মধ্যে ছিলেন হজরত উসমান রা: ও তার পতœী রাসূলকন্যা হজরত রুকাইয়া রা:। আবু জাহিল রাসূলকে শারীরিক নির্যাতন করে। প্রতিবাদে হজরত হামজা ইসলাম গ্রহণ করেন।

তৃতীয় তিন বছর : কুরইশরা ইসলামের প্রতি আরো কঠোর হয়ে উঠে। রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর সাথীদের সমাজচ্যুত করে তিন বছর সময় ‘শিআবে আবি তালিব’-এ অবরুদ্ধ করে রাখে।

নবুওয়াতের দশম বছর : রাসূল সা:-এর জন্য শোকের বছর। এই বছর প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত খাদিজা রা: ও চাচা আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন।
কাফিরদের অত্যাচার সীমাহীন বৃদ্ধি পায়। মহানবী তায়েফ গমন করেন। কিন্তু তায়েফবাসী কর্তৃক নির্যাতিত হন। রাসূলের মিরাজ গমন।

নবুওয়াতের একাদশ বছর : হজরত উমরের ইসলাম গ্রহণ ও প্রকাশ্যে কাবা চত্বরে সালাত আদায়। আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের দ্বিতীয় দলের হিজরত। মদিনার লোকদের আকাবার বায়আত। মক্কার বাইরের বিভিন্ন গোত্রের লোকের ইসলাম গ্রহণ।

নবুওয়াতের দ্বাদশ বছর : মদিনাবাসী কর্তৃক আকাবার দ্বিতীয় বায়আত। ক্রমে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কুরাইশদের নির্যাতন বৃদ্ধি।
বেশ কিছু সংখ্যক মদিনাবাসীর ইসলাম গ্রহণ ও মদিনায় ইসলাম প্রচারকেন্দ্র স্থাপন। নবুওয়াতের ত্রয়োদশ বছর : হজরত সাওদা ও হজরত আয়েশার সাথে রাসূল সা:-এর বিয়ে। নবীজীর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত।

ইসলাম প্রচারে আত্ননিয়োগঃ  
নবুওয়াতের পরে তিন বছর গোপনে দাওয়াত কাজ করেন রাসূল (সাঃ) । তার প্রথম অবস্থাতে তিনি তার পরিবারে নিকট দাওয়াত প্রচার করেন । তাদের মধ্যে প্রথম ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন নবীপত্নী খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) বিনতে খুওয়াইলিদ,তার ক্রীতদাস যায়দ বিন হারিসাহ বিন শুরাহবীল কালবী, তার চাচত ভাই ‘আলী বিন আবু ত্বালিব, এবং তার সাওর গুহার সঙ্গী আবু বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) । তারপরে আবু বক্র (রাঃ) ইসলাম প্রচারে অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন ।

সাফা পরবতে আহরন:  রাসূল (সাঃ) সাফা পহারে উঠে বিভিন্ন গোত্রকে ডাকতে থাকেন , এবং বলতে থাকেন, হে কুরাইশ বংশীয়গণ ! তোমরা বল, আজ আমি তোমাদের যদি বলি পর্বতের ইপর প্রান্ত থেকে একদল তোমাদের ইপর হামলা করতে অপেক্ষা করছে তাহলে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে । তারা সবাই উত্তর দিলেন হ্যাঁ । আপনাকে কখনো মিথ্যা বলতে দেখিনি ।

যদি তাই হয় তা হলে শুনে রাখ আমি তোমাদেরকে কঠোর দন্ডের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি । তোমরা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর এবং আল্লাহর নিকট নিজেকে সপেঁ দাও । সকল গোত্রকে তিনি সতর্ক করেন ।

মদিনায় নবী জীবন (৫৪-৬৩ বছর)
প্রথম হিজরি : মুহাজির আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন প্রতিষ্ঠা। ঐতিহাসিক মদিনা সনদ তৈরি। কুবায় মসজিদে তাকওয়া নির্মাণ। বনু সালেম মহল্লায় প্রথম জুমার নামাজ আদায় । আবু আইউব আনসারী রা:-এর ঘরে আতিথ্য গ্রহণ। মসজিদে নববী নির্মাণ।

দ্বিতীয় হিজরি : কিবলা পরিবর্তন। বদরের যুদ্ধ। জাকাত ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ। রাসূলকন্যা রুকাইয়ার ইন্তেকাল। হজরত ফাতিমা ও হজরত আলী রা:-এর বিয়ে।
তৃতীয় হিজরি : হজরত উসমান রা:-এর সাথে রাসূলকন্যা উম্মে কুলসুমের বিয়ে। হজরত হাসান রা:-এর জন্ম। উহুদের যুদ্ধ, রাসূলের দাঁত মোবারক শহীদ হয়। হজরত হামজার শাহাদাত।

চতুর্থ হিজরি : গাদ্দারি ও নবীজীকে হত্যা চেষ্টার অপরাধে বনু নজিরকে অবরোধ। বীরে মাউনায় ৭০ জন সাহাবির শাহাদাত। রাসূলের সাথে হজরত উম্মে সালমার বিয়ে। পর্দার বিধান জারি। মদপান নিষিদ্ধ।
পঞ্চম হিজরি : আহজাব বা খন্দকের যুদ্ধ। রাসূলের দৌহিত্র আবদুল্লাহ বিন উসমানের ওফাত। জয়নাব বিনতে জাহাশের সাথে রাসূল সা:-এর বিয়ে। হজরত খালিদ ও আমর ইবনে আসের ইসলাম গ্রহণ। বনু কুরাইজার যুদ্ধ।

ষষ্ঠ হিজরি : খায়বারের যুদ্ধ। হুদায়বিয়ার সন্ধি। বায়আতে রিদওয়ান। রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি নবীজীর চিঠি ও ইসলামের দাওয়াত।

সপ্তম হিজরি : রাসূল সা:-এর ২০০ সাহাবিসহ উমরাহ পালন। হজরত উম্মে হাবিবাকে বিয়ে।
অষ্টম হিজরি : মক্কা বিজয়, মানবতার অগ্রযাত্রা। হুনাইনের যুদ্ধ। হজরত আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ। মুতার যুদ্ধ।

নবম হিজরি : রোমানদের বিরুদ্ধে তাবুকের যুদ্ধ। হজরত আবু বকর রা:-এর নেতৃত্বে। ইসলামের প্রথম হজ আদায়। নবীজীর সাথে আরবের বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ ও ইসলাম গ্রহণ।

দশম হিজরি : লক্ষাধিক সাহাবিসহ নবীজীর বিদায় হজ। বিদায় হজের ভাষণ ও মক্কায় ১০ দিন অবস্থান।
একাদশ হিজরি : উসামা বিন জায়েদের নেতৃত্বে সিরিয়ায় অভিযানের প্রস্তুতি। সফর মাসের শেষ ভাগে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অসুস্থতা। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ (মতান্তরে ১/২) সোমবার দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে পরম বন্ধুর সান্নিধ্যে গমন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

কা’বা পূণনির্মাণে অংশ গ্রহণ:
যুবক মুহাম্মাদের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কুরায়েশরা কা’বা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এক পর্যায়ে কাজ শুরু করে দেয়। যুবক মুহাম্মাদ সামাজিক জীবনে মক্কার অন্যান্য অধিবাসীদের সাথে মিলেমিশে চলতেন সে মতে তিনি এ কাজেও অংশ নেন।

তখন কা’বা ঘরটি নানা কারণে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো। তাই ঘরটি সংস্কারের জন্য আরবরা সম্মিলিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যে আরবদের বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা কা’বা-ঘরের বিভিন্ন অংশ ভাগ করে নিলো। কিন্তু কা’বা ঘরের দেয়ালে যখন ‘হাজরে আসওয়াদ’ (পবিত্র কালো পাথর) বসানোর সময় এলো, তখন বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেলো। অবস্থা এতদূর পর্যন্ত গড়ালো যে, অনেকের তলোয়ার পর্যন্ত কোষমুক্ত হলো। চারদিন পর্যন্ত এ ঝগড়া চলতে থাকলো। পঞ্চম দিনে আবু উমাইয়া বিন মুগীরা প্রস্তাব করেন যে, আগামীকাল সকালে যে ব্যক্তি কা’বা-ঘরে সবার আগে হাজির হবে, এর মীমাংসার দায়িত্ব তাকেই দেয়া হবে। সে যা সিদ্ধান্ত দিবে, তা-ই পালন করা হবে। সবাই এ প্রস্তাব মেনে নিলো। পরদিন সকালে যার আগমন ঘটলো তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.)। ফয়সালা অনুযায়ী তিনি ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন করতে ইচ্ছুক প্রতিটি গোত্রের একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে বললেন। অতঃপর একটি চাদর বিছিয়ে তিনি নিজ হাতে পাথরটিকে তার ওপর রাখলেন এবং বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিগণকে চাদরের প্রান্ত ধরে পাথরটিকে ওপরে তুলতে বললেন। চাদরটি তার নির্দিষ্ট স্থান বরাবর পৌঁছলে তিনি পাথরটিকে যথা স্থানে নিজ হাতে স্থাপন করলেন। এতে সবাই খুশী হলেন এবং আসন্ন যুদ্ধের মহা বিপর্যয় থেকে জাতীকে রক্ষা করলেন। এখানে সাম্য-মৈত্রীর যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করলেন, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমাদের সমাজপতিদের এখান থেকে শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু রয়েছে, যদি আমরা সত্যিকারে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, গড়তে চাই একটি আদর্শ সমাজ, যে সমাজে থাকবেনা জুলুম-নির্যাতন, বন্ধ হবে পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ, মারামরি-হানাহানি, দূর হবে বর্ণ বৈষম্য। মনের ভিতর থাকবেনা কোন ভয়-ভীতি, আতঙ্ক, মানুষ হবে মানুষের জন্য। তাহলে কেবল রাসূল (সা.)-এর আদর্শ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব।

মাদানী জীবনঃ নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রের সাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবে পরিগণিত হত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকম নয়, কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধন হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হত। এটি তখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়। ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামী পঞ্জিকার বর্ষের শেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ: After Hijra।

 স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা  সংবিধান প্রণয়নমুহাম্মাদ মদীনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করেছিলেন। মদীনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদীনা সনদ স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভুতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদী গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির)। এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। এই সনদের মাধ্যমে মদীনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হন তার প্রধান।

মক্কার সাথে বিরোধ  যুদ্ধমদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে। মুহাম্মাদ(স)মদীনায় এসে আশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকল মুসলিমদের সম্পত্তি ক্রোক করে। এই অবস্থায় ৬২৪ সালে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠায়। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়। আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়। মুসলিমদের মতে এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তা করেছিলেন। যাহোক, এই সময় থেকেই ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর ৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিতে হয়। এতে প্রথম দিকে মুসলিমরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। কুরাইশরা বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত মুহূর্তের নীতিগত দূর্বলতার কারণে পরাজিতের বেশে মক্কায় প্রবেশ করে। ৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।

মদীনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্কঃ কিন্তু এ সময় মদীনার বসবাসকারী ইহুদীরা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকী হয়ে দেখা দেয়। মূলত ইহুদীরা বিশ্বাস করতনা যে, একজন অ-ইহুদী শেষ নবী হতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয়নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটি করে ইহুদী গোত্রের উপর আক্রমণ করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনু কাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকল ইহুদীকে মদীনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এই ইহুদী বিদ্বেশের দুটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক। ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবীকে মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে, ইহুদীরা মদীনার জন্য একটি হুমকী ও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।

 হুদাইবিয়ার সন্ধিঃ কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জ্বের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ ককরা আছে, তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ্ব আদায় করতে পারছিল না। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দিব্যদর্শনে দেখতে পান তিনি হজ্জ্বের জন্য মাথা কামাচ্ছেন। এ দেখে তিনি হজ্জ্ব করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মদীনার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাঁধা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেলেও মুহাম্মাদ এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণঃ রাসূল (সাঃ)সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছ দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে এ কাজে মননিবেশ করেন। সেসময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য (the holy roman empire),এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের ‘আযীয মুকাউকিস’,ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একইদিনে এদেঁর কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।

প্রেরিত দূতগণের তালিকাঃ

  1. দাহিয়া ক্বালবী (রাঃ)কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে।
  2. আবদুল্লাহ বিন হুযাফা (রাঃ)কে পারস্যসম্রাট পারভেজের কাছে।
  3. হাতিব বিন আবূ বুলতা’আ (রাঃ) কে মিশরৈর শাসনকর্তার কাছে।
  4. আমর বিন উমাইয়া (রাঃ) কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে।
  5. সলীত বিন উমর বিন আবদে শামস (রাঃ) কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।
  6. শুজাইবনে ওয়াহাব আসাদী (রাঃ)কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।

শাসকদের মধ্য হতে শুধুমাত্র বাদশাহ নাজ্জাসী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি।

অব্যাহত মৃতু যন্রণাঃ 
বিদায় হজ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে হযরত মোহাম্মদ সা. ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। ধীরে ধীরে অসুস্থতা তীব্র হওয়ায় তিনি হযরত আবু বকর রা. কে ইমামতি করার জন্য নির্দেশ দেন আবু বকর রা. নবীজির জীবদ্দশায় প্রায় অনেক দিন নামাজের ইমামতি করেন। অতঃপর যখন রাসুল সা. এর আয়ুকাল সমাপ্তির সন্নিকটে পৌঁছায় তখন নিজের মধ্যে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন তাই তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে হযরত আয়েশা রা.-এর কামরায় অবস্থান করেন। সেদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট সাত কিংবা আট দিনার মওজুদ ছিল নবী সা. মৃত্যুর একদিন পূর্বে এগুলোও দান করে দেয়ার হুকুম দেন। বলা হয় এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে এগারোতম হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাসের বারোতম তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। নবীজির জামাতা হযরত ফাতেমা হযরত আলী রা. তাঁকে গোসল দেন এবং কাফন পরান। হযরত আয়েশা রা.-এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, জানাযার পর সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।

(রাসূল (সাঃ) এর জীবনী কয়েক পৃষ্ঠায় লিখে শেষ করা যাবে না । তারপরেও যতটুক সম্ভব তুলে ধরেছি )

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102