ঢাকা ১২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
আজকের নামাজের সময়সূচি ১১ ফেব্রুয়ারি আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে কাজ করছে: বিএনপি মহাসচিব অপারেশন ডেভিল হান্ট: ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে গ্রেপ্তার ১৫২১ দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়ে দেড় লাখ ছুঁই ছুঁই করছে আট দিনে ৬৪ জেলায় সমাবেশের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি এ বছর ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ তিন বছরের মধ্যে একটি হতে পারে: মেট লিবিয়ায় দুই গণকবর থেকে ৪৯ অভিবাসী-শরণার্থীর মরদেহ উদ্ধার চুক্তি অনুযায়ী তিন জিম্মির বিনিময়ে ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এসএসসি-এইচএসসির ক্লাস শুরু ১ ফেব্রুয়ারি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:৩৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১
  • ২৪৫ Time View
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি,এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্তত তিন মাস ক্লাস নিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর এই পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রতিটি বিষয়ের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাবোর্ডেগুলোতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বোর্ড থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছে দেওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে এসএসসি ও সমমানের অন্তত ২০ লাখ পরীক্ষার্থী অটোপাসসহ বেশ কিছু দাবি বাস্তাবায়নে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে সরকার তাদের অটোপাসের দাবি মেনে নিবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ  বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধু পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসও খুলে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এনসিটিবি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে দিয়েছে। আশা করছি আগামীকালই (আজ) সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। কত দিন ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অন্তত তিন-চার মাস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আমাদের প্রত্যাশা ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পুরোদমে ক্লাস নেওয়ার। পরীক্ষার আগেভাগে রুটিন দিয়ে দিবো যাতে পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে পারে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, অটোপাসের দাবি কোন ভাবেই যৌক্তিক না। পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস ট্রেনডেনসিটাই খারাপ। পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীদের এ গ্লানি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনসিটিবির (ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ) ও  সংক্ষিপ্তি সিলেবাস তৈরির প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি বিষয়ের মূল সিলেবাস থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে বিষয়গুলো না শিখলেই নয়; সেগুলো সিলেবাসে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফেব্রুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব হলে দুই থেকে আড়াই মাস যাতে ক্লাসে পাঠদান করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। আর করোনার কারণে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা  না যায় সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, গত ১৬ মার্চ প্রত্যক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। সিলেবাস কাস্টমাইজ (কাটছাঁট) করার কার্যক্রম চলছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে জানা যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে পড়ানোর উদ্যোগ নেব। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ২০২১ সালের জুন নাগাদ এই পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করব। জুলাই-আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাজট কমাতে বিগত কয়েক বছর ধরে বিশেষ কারণ ছাড়া ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আয়োজন করে আসছে। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারেনি। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ফল ঘোষণার সিদ্বান্ত নেয়। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা করা হলেও শতভাগ শিক্ষার্থীকে ভার্চুয়াল ক্লাসে যুক্ত করতে পারেনি। যে কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবি তুলেছে।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এসএসসি-২০২১ ব্যাচ’ ব্যানারে ‘করোনা পরিস্থিতিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২১ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি’ বিষয় তাদের প্রস্তাবসমূহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রায়ান উৎস নামের এক পরীক্ষার্থী গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। তাতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পক্ষে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, পরীক্ষা নিতে হলে সিলেবাস শেষ করার মতো যৌক্তিক সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, অল্প সময়ে পরীক্ষা নিলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে অন্তত তিন মাস আগে ঘোষণা করা, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলে সব রকম ফি নেওয়া বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দেওয়া।
রাজধানীর বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও কর্মসূচির সমন্বয়ক রায়ান উৎস দাবি করে বলেন, এখনো ভ্যাকসিন আসেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ১৮ বছরের নিচের কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। আমরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে যদি আক্রান্ত হলে পরীক্ষা দিতে পারবো না। ১৪ দিন আমাদের কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে। কোন পরীক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে তার একটি বছর শেষ হয়ে যাবে। আরেকটি কারণ হচ্ছে- জুন মাসে পরীক্ষা হলে রেজাল্ট দিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর লেগে যাবে। কলেজে ভর্তি হতে অক্টোবর মাস শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে। শিক্ষা জীবন থেকে প্রায় এক বছর শেষ হয়ে যাবে। আর এখনই অটোপাস ঘোষণা করে কলেজে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করা হলে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে না।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু  বলেন, গত ১৬ মার্চের পর থেকে ১০ম শ্রেণিতে কোনো ক্লাস হয়নি। পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিলম্বে পরীক্ষা নিতে হলেও সরকারের অপেক্ষা করা উচিত। না পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, এই স্তরের পড়াশুনা উপরের শ্রেণিতে দরকার হবে। অটোপাসের বিরোধীতা করে তিনি বলেন, করোনা চির দিন থাকবে না। আগামী মাসে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মকর্তারা ভ্যাকসিন পাবেন, তখন আতঙ্ক কেটে যাবে। সরকার ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দশম ও দাদ্বশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস শুরু করার কথা বলেছে। আমরা সরকারের এই সিদ্বান্তের সঙ্গে একমত।

Tag :

আজকের নামাজের সময়সূচি ১১ ফেব্রুয়ারি

এসএসসি-এইচএসসির ক্লাস শুরু ১ ফেব্রুয়ারি

Update Time : ০৪:৩৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি,এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্তত তিন মাস ক্লাস নিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর এই পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রতিটি বিষয়ের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাবোর্ডেগুলোতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বোর্ড থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছে দেওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে এসএসসি ও সমমানের অন্তত ২০ লাখ পরীক্ষার্থী অটোপাসসহ বেশ কিছু দাবি বাস্তাবায়নে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে সরকার তাদের অটোপাসের দাবি মেনে নিবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ  বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধু পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসও খুলে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এনসিটিবি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে দিয়েছে। আশা করছি আগামীকালই (আজ) সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। কত দিন ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অন্তত তিন-চার মাস ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আমাদের প্রত্যাশা ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পুরোদমে ক্লাস নেওয়ার। পরীক্ষার আগেভাগে রুটিন দিয়ে দিবো যাতে পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে পারে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, অটোপাসের দাবি কোন ভাবেই যৌক্তিক না। পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস ট্রেনডেনসিটাই খারাপ। পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীদের এ গ্লানি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনসিটিবির (ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ) ও  সংক্ষিপ্তি সিলেবাস তৈরির প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি বিষয়ের মূল সিলেবাস থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে বিষয়গুলো না শিখলেই নয়; সেগুলো সিলেবাসে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফেব্রুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব হলে দুই থেকে আড়াই মাস যাতে ক্লাসে পাঠদান করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। আর করোনার কারণে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা  না যায় সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, গত ১৬ মার্চ প্রত্যক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। সিলেবাস কাস্টমাইজ (কাটছাঁট) করার কার্যক্রম চলছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে জানা যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে পড়ানোর উদ্যোগ নেব। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ২০২১ সালের জুন নাগাদ এই পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করব। জুলাই-আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাজট কমাতে বিগত কয়েক বছর ধরে বিশেষ কারণ ছাড়া ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আয়োজন করে আসছে। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারেনি। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ফল ঘোষণার সিদ্বান্ত নেয়। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা করা হলেও শতভাগ শিক্ষার্থীকে ভার্চুয়াল ক্লাসে যুক্ত করতে পারেনি। যে কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবি তুলেছে।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এসএসসি-২০২১ ব্যাচ’ ব্যানারে ‘করোনা পরিস্থিতিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২১ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি’ বিষয় তাদের প্রস্তাবসমূহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রায়ান উৎস নামের এক পরীক্ষার্থী গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। তাতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পক্ষে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, পরীক্ষা নিতে হলে সিলেবাস শেষ করার মতো যৌক্তিক সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, অল্প সময়ে পরীক্ষা নিলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে অন্তত তিন মাস আগে ঘোষণা করা, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলে সব রকম ফি নেওয়া বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দেওয়া।
রাজধানীর বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও কর্মসূচির সমন্বয়ক রায়ান উৎস দাবি করে বলেন, এখনো ভ্যাকসিন আসেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ১৮ বছরের নিচের কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। আমরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে যদি আক্রান্ত হলে পরীক্ষা দিতে পারবো না। ১৪ দিন আমাদের কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে। কোন পরীক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে তার একটি বছর শেষ হয়ে যাবে। আরেকটি কারণ হচ্ছে- জুন মাসে পরীক্ষা হলে রেজাল্ট দিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর লেগে যাবে। কলেজে ভর্তি হতে অক্টোবর মাস শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে। শিক্ষা জীবন থেকে প্রায় এক বছর শেষ হয়ে যাবে। আর এখনই অটোপাস ঘোষণা করে কলেজে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করা হলে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে না।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু  বলেন, গত ১৬ মার্চের পর থেকে ১০ম শ্রেণিতে কোনো ক্লাস হয়নি। পরীক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিলম্বে পরীক্ষা নিতে হলেও সরকারের অপেক্ষা করা উচিত। না পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, এই স্তরের পড়াশুনা উপরের শ্রেণিতে দরকার হবে। অটোপাসের বিরোধীতা করে তিনি বলেন, করোনা চির দিন থাকবে না। আগামী মাসে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মকর্তারা ভ্যাকসিন পাবেন, তখন আতঙ্ক কেটে যাবে। সরকার ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দশম ও দাদ্বশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্লাস শুরু করার কথা বলেছে। আমরা সরকারের এই সিদ্বান্তের সঙ্গে একমত।