করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে সবাইকে খ্রিস্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাইরাস আতঙ্কের ২০২০ পেরিয়ে ২০২১ সালে মহামারী মোকাবেলার লড়াইয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, “নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। মহামারীর ভয়াবহতাকে মোকাবেলা করে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ- নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি।”
এক অস্বাভাবিক বছর পেরিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “প্রতি বছর নববর্ষকে বরণ করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হলেও করোনা মহামারীর ফলে এবার উৎসবের আমেজ অনেকটাই ম্লান।” তিনি দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২১ সালেই বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তা মনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে প্রয়াসের আহ্বান এসেছে রাষ্ট্রপতির বাণীতে।
আবদুল হামিদ বলেন, “২০২১ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর একটা যুগসন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০২১ সাল। এই যুগসন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমাদের নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে।”
খ্রিস্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “নতুন বছরে আমরা একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। করোনা মহামারী বিশ্ববাসীকে এক কঠিন বার্তা দিয়েছে। যতই উন্নত হোক না কেন, একা কোনো দেশ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না।”
মহামারী মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই যে কোনো বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব। আমাদের সকলকে এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মীয় উগ্রবাদসহ যে কোনো সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’।
তিনি বলেন, “২০২০ খ্রিস্টাব্দ বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কেননা, ১০০ বছর পূর্বে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা এক ছোট্ট খোকা কালক্রমে হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
“যার সারাজীবনের আত্মত্যাগ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।”
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে ২০২০-২১ সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে সরকার।
মহামারীর নানা সঙ্কট মোকাবেলায় ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ২১টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।
শেখ হাসিনা জানান, ২০২০ সালেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। মহামারীকালেও বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর। ৯৭.৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর সব স্প্যান বসানোর কথা বলেন। রাজধানীতে মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ-কাজ এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’-এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ অর্জন প্রায় শেষ।
“২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।”