মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শরৎকাল, ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিটে লেখা নিয়ে তুমুল বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১
  • ১৪৩ Time View

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিটে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ লেখা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সমালোচনাকারীা বলছেন, পাকিস্তান আমলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা পেলেও বর্তমান সময়ে এসে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উল্লেখ না করে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়টিই উল্লেখ করা উচিত ছিল। তারা বলছেন, এটা কোনো ভুলও নয়, বরং জেনেবুঝে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।

এর জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সমকালকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই নাম পরে পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু এই স্মারক ডাকটিকিটে যেহেতু ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে, সে কারণে প্রতিষ্ঠার সময়ের প্রথম নামটিই ব্যবহার করা হয়েছে। এখন যদি স্মারক ডাকটিকিট এবং ইতিহাস চর্চা সম্পর্কে কেউ না বোঝে তাহলে করার কিছু নেই। যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে, তা সঠিকভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।

ডাক বিভাগ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে থাকে। এই ডাকটিকিট ইতিহাস ও সময়ের দলিল হিসেবেও বিবেচিত হয়। ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, সেই বিবেচনায় স্মারক ডাকটিকিটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরতেই ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ লেখা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই এবং অনুমোদন সাপেক্ষেই এই বাক্যটি লেখা হয়েছে।

স্মারক ডাকটিকিটটি ফেসবুকে দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম ইস্তেজা চৌধুরী মনি লিখেছেন, ‘এটা ভুল? কোনোভাবেই ভুল না। যে ডিজাইন করেছে, যে অনুমোদন দিয়েছে, সবাই জেনেবুঝে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে।’

গণজাগরণ মঞ্চকর্মী এফ এম শাহীন লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগকে মুসলিম ছাত্রলীগে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ডাক বিভাগের সকলকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার!’ অনেকেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের বক্তব্য উদ্বৃত করে তার কাছ থেকে ইতিহাস শেখার জন্যও মন্ত্রীর প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন। উদ্ৃব্দত অংশে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের বক্তব্য হচ্ছে, ‘এখনকার সময়ে এটি করতেই পারে না। এখন কি আমরা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করব? পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ হিসেবে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে তো সংগঠনটির নাম পরিবর্তন হয়েছে। তাই এটি করা উচিত হয়নি।’ কেউ কেউ ছাত্রলীগ লিখে বন্ধনীর ভেতরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ লেখা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন।

এ ধরনের অসংখ্য মন্তব্য বুধবার দিনভর ফেসবুকে দেখা যায়। এ ব্যাপারে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ডাকটিকিট ইতিহাসকে ধারণ করে। ভাবুন, যদি লিখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তবে কতটা সত্য আপনার নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরবেন? মুসলিম লেখায় সাম্প্রদায়িকতা নেই- তখনকার সময়ে প্রয়োজন ছিল, এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। পরে তিনিই বাদ দেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ করিনি? ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হীনম্মন্যতা ও অপরাধ। সত্য যা, তাকে মোকাবিলা করুন।’

এ ব্যাপারে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে আরও বলেন, স্মারক ডাকটিকিটে এক লাইনে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হয়। এটা তো পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় নয় যে বড় করে ইতিহাস লেখা হবে। আর ডাকটিকিটে বর্ণিত ইতিহাসের তথ্য নিয়ে গবেষণা হয়, অনেকে ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন।

অতএব স্মারক ডাকটিকিটে ইতিহাস যেটা সেটাই তুলে ধরা হয়, এখানেই তাই করা হয়েছে। কিন্তু যারা সমালোচনা করছেন তাদের ইতিহাসের জ্ঞানের অভাব। নবীন ছাত্রলীগ কর্মীরা না জেনে কিংবা না বুঝে আবেগী হতে পারে, কিন্তু একজন ইতিহাসের অধ্যাপক সেই একই ভাষায় কথা বললে সত্যিই হতাশ হতে হয়।

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102