ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলি হয়েছে এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ এখনও মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত দেশের জনগণের জন্য ভালো সমাধান: প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান বন্ধ করতে পারবেন না বলে জানান মোদি: ড. ইউনূস আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা আজকের নামাজের সময়সূচি ২৮ এপ্রিল পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে দেশের পথে রওয়ানা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরছেন রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ আগাম সতর্কতা ছাড়াই ঝিলাম নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাংশ

“জাতির পিতা ভাষা আন্দোলন থেকেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ৩১০ Time View

পৃথিবী থেকে অনেক ভাষার হারিয়ে যাওয়া ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কোনো একটি জাতির জন্য ভাষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মায়ের ভাষায় শিক্ষা নিতে পারা এবং মায়ের ভাষায় কথা বলতে গেলে সহজে আমরা শিখতে পারি।

রবিবার ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যখন আমরা আমাদের ভাষা দিবস হিসেবে ব্যবহার করছি, শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে যাচ্ছি এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা সেই সাথে সাথে সারাবিশ্বের সকল ভাষাপ্রেমীদের প্রতিও আমি শ্রদ্ধা জানাই।

মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই অন্য ভাষা শিখতে হবে, সেই সাথে সাথে মাতৃভাষাও আমাদেরকে শিখতে হবে।

বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাও যেন সংরক্ষণ করা যায় এবং তারা যেন সেই ভাষায় শিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য সরকারের প্রচেষ্টার কথাও জানান শেখ হাসিনা।

এবার এই প্রথম নিজ নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণ,পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় তিন ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ পান।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১’ বিশিষ্ট নাগরিক ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামের পথ বেয়ে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না । ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদানের কথা আমি বার বার বক্তব্যে বলেছি। যখন সবাই অস্বীকার করতো, তখন আমি এটা বেশি করেই বলতাম। আজ মনে হচ্ছে— আমার আর বলার প্রয়োজন নেই। এখন সবই জানতেই পারবেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে এ সম্পর্কে অনেক বেশি জানতে পারবেন।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলন থেকেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা বিজয় অর্জন করি। স্বাধীন রাষ্ট্র পাই। স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাই। আমরা যে চেতনা নিয়ে কাজ করছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই চেতনা মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।’যার নেতৃত্বে এই ভাষা আন্দোলনের শুরু, আর ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে আমরা যে নিজের ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, আজ তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। আজ কেবল বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এ দিবসটি পালন করছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে মাতৃভাষাও শিখতে হবে।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ভাষার অধিকার রক্ষা করা, ভাষাকে সম্মান দেওয়া এবং হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলি। আমরা এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কাজ শুরু করি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এর কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে শুরু করি। এর কাজ আমরা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো— সারা বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া এবং চলমান ভাষাগুলোর নমুনা এখানে সংরক্ষণ করা। গবেষণা করা, ভাষার ইতিহাস সংরক্ষণ করা। এ জন্য ভাষা জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। কোনও ভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।’
ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ক্যটাগরি-২ ইনস্টিটিউটের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এ সময় ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, মাতৃভাষা মানুষের আত্মপরিচয় ও অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। ভাষা ও সংস্কৃতির দ্বারা মানব ইতিহাসের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহমান থাকে। পৃথিবীর ভাষাবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশ এবং বহুভাষিক সংস্কৃতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করাই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনের প্রকৃত তাৎপর্য। আমরা চাই,অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই  চেতনা সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হোক। দূরীভূত হোক সকল বিভেদ।সবার মধ্যে  জেগে উঠুক স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ। বিশ্বের সকল মাতৃভাষা স্বমহিমায়  বিরাজিত থাকুক ও বিকশিত হোক।

পরে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রদান করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষা  পদক পেয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক ভাষাবিজ্ঞানী ও নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম ও বেসরকারি সংগঠন খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ পদক পান উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ। এছাড়া অনুষ্ঠানে নৃগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ অ্যাকটিভিজমো লেংকুয়াসকে বাংলাদেশ সরকারের সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি পদক তুলে দেন।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার স্বশরীরে শহীদ মিনার যেতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

এই অনুষ্ঠানেও স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে যখন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সাহেবের হাতে পদক তুলে দেওয়া …. এটা যে আমার জন্য কত সম্মানের এবং গৌরবের …. কিন্তু আমার দুঃখ এখানে যে আমি নিজের হাতে দিতে পারলাম না।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্যার,আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি করোনাভাইরাসের কারণে আসলে … প্রধানমন্ত্রী হলে সব স্বাধীনতা থাকে না। অনেকটা বন্দিজীবন যাপন করতে হয়। সেই রকমই আছি।

ইউনেস্কোর বাংলাদেশ মিশনের প্রধান বিয়াত্রিস কালদুনও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো.মাহবুব হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলী উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

Tag :

ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলি হয়েছে

“জাতির পিতা ভাষা আন্দোলন থেকেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Update Time : ০৪:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পৃথিবী থেকে অনেক ভাষার হারিয়ে যাওয়া ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কোনো একটি জাতির জন্য ভাষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মায়ের ভাষায় শিক্ষা নিতে পারা এবং মায়ের ভাষায় কথা বলতে গেলে সহজে আমরা শিখতে পারি।

রবিবার ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যখন আমরা আমাদের ভাষা দিবস হিসেবে ব্যবহার করছি, শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে যাচ্ছি এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা সেই সাথে সাথে সারাবিশ্বের সকল ভাষাপ্রেমীদের প্রতিও আমি শ্রদ্ধা জানাই।

মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই অন্য ভাষা শিখতে হবে, সেই সাথে সাথে মাতৃভাষাও আমাদেরকে শিখতে হবে।

বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাও যেন সংরক্ষণ করা যায় এবং তারা যেন সেই ভাষায় শিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য সরকারের প্রচেষ্টার কথাও জানান শেখ হাসিনা।

এবার এই প্রথম নিজ নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণ,পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় তিন ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ পান।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১’ বিশিষ্ট নাগরিক ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামের পথ বেয়ে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না । ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদানের কথা আমি বার বার বক্তব্যে বলেছি। যখন সবাই অস্বীকার করতো, তখন আমি এটা বেশি করেই বলতাম। আজ মনে হচ্ছে— আমার আর বলার প্রয়োজন নেই। এখন সবই জানতেই পারবেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে এ সম্পর্কে অনেক বেশি জানতে পারবেন।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলন থেকেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা বিজয় অর্জন করি। স্বাধীন রাষ্ট্র পাই। স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাই। আমরা যে চেতনা নিয়ে কাজ করছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই চেতনা মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।’যার নেতৃত্বে এই ভাষা আন্দোলনের শুরু, আর ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে আমরা যে নিজের ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, আজ তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। আজ কেবল বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এ দিবসটি পালন করছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে মাতৃভাষাও শিখতে হবে।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ভাষার অধিকার রক্ষা করা, ভাষাকে সম্মান দেওয়া এবং হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলি। আমরা এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কাজ শুরু করি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এর কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে শুরু করি। এর কাজ আমরা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো— সারা বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া এবং চলমান ভাষাগুলোর নমুনা এখানে সংরক্ষণ করা। গবেষণা করা, ভাষার ইতিহাস সংরক্ষণ করা। এ জন্য ভাষা জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। কোনও ভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।’
ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ক্যটাগরি-২ ইনস্টিটিউটের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এ সময় ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, মাতৃভাষা মানুষের আত্মপরিচয় ও অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। ভাষা ও সংস্কৃতির দ্বারা মানব ইতিহাসের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহমান থাকে। পৃথিবীর ভাষাবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশ এবং বহুভাষিক সংস্কৃতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করাই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনের প্রকৃত তাৎপর্য। আমরা চাই,অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই  চেতনা সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হোক। দূরীভূত হোক সকল বিভেদ।সবার মধ্যে  জেগে উঠুক স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ। বিশ্বের সকল মাতৃভাষা স্বমহিমায়  বিরাজিত থাকুক ও বিকশিত হোক।

পরে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রদান করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষা  পদক পেয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক ভাষাবিজ্ঞানী ও নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম ও বেসরকারি সংগঠন খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ পদক পান উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ। এছাড়া অনুষ্ঠানে নৃগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ অ্যাকটিভিজমো লেংকুয়াসকে বাংলাদেশ সরকারের সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি পদক তুলে দেন।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার স্বশরীরে শহীদ মিনার যেতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

এই অনুষ্ঠানেও স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে যখন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সাহেবের হাতে পদক তুলে দেওয়া …. এটা যে আমার জন্য কত সম্মানের এবং গৌরবের …. কিন্তু আমার দুঃখ এখানে যে আমি নিজের হাতে দিতে পারলাম না।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্যার,আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি করোনাভাইরাসের কারণে আসলে … প্রধানমন্ত্রী হলে সব স্বাধীনতা থাকে না। অনেকটা বন্দিজীবন যাপন করতে হয়। সেই রকমই আছি।

ইউনেস্কোর বাংলাদেশ মিশনের প্রধান বিয়াত্রিস কালদুনও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো.মাহবুব হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলী উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।