ঢাকা ১০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
সরকার যদি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে,তাহলে ৫ মিনিটও সময় পাবে না: ইসলামী আন্দোলনের আমির নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন “ইসলাম ও জাতির ঐতিহ্যবিরোধী”: জামায়াতে ইসলামীর আমির চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, রবিবার শুনানি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবার ২৭ বিলিয়ন ছাড়ালো শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি, যেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি না রাখাটা আত্মঘাতী: প্রধান উপদেষ্টা ‘২২৬টি মামলা হয়েছে, ২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ বক্তব্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোরবানির ঈদের আগেই নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক, থাকছে ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী কলকাতার একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত

টিকার শর্তে উল্লেখযোগ্য শিথিলতা :৪০ বছরের বেশি বয়সীরা নিতে পারবেন টিকা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৯:১৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ৩০০ Time View

দেশের সর্বসাধারণ যাতে টিকা গ্রহণ করতে পারে এজন্য উল্লেখযোগ্য শিথিলতা এনেছে সরকার। এখন থেকে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা নিতে পারবেন টিকা। এজন্য শুরু হয়েছে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়াও। সোমবার টিকার জন্য নিবন্ধনের ওই বয়সসীমা শিথিলের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে বলা হয়েছিল, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফা টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারিতে থাকা মানুষ এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ টিকা নিতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের অনুমতি দেয়া হবে।

এদিকে সোমবার ছিল সারা দেশে ২য় দিনের মতো গণটিকাদান কার্যক্রম। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে কারো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এরফলে সারাদেশে টিকা নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। টিকা গ্রহণকে কেন্দ্র করে দেশের প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে বিরাজ করছে উৎসবের আমেঝ।

দ্বিতীয় দিনে টিকা নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা, মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী মানবজমিনের সম্পাদক মাহবুবু চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার শামিম মুশফিক, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুসহ সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহস্য, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা।

টিকার অন্যতম সমালোচক বিএনপি নেতারাও নিতে শুরু করেছেন টিকা। গতকাল টিকা নিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিনসহ অনেক বিএনপি নেতা। টিকা দেয়ার পর তারা অভয় দিয়ে দেশবাসীকে টিকা নেয়ার আহ্বানও জানান। টিকা গ্রহীতাদের পাশাপাশি উৎসুক সাধারণ মানুষও টিকা কার্যক্রম দেখতে ভিড় করছেন টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে। স্বজনদের সঙ্গে অনেক প্রবীণরা টিকা নেয়ার পর বলেছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে এখন নিরাপদ বোধ করছেন তারা।

সরকারি হিসেবে গতকাল সোমবার টিকা নিয়েছেন আরো ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। এর আগের দিন রবিবার টিকা নেন ৩৩ হাজার ১৬০ জন। প্রথমদিনের তুলনায় ২য় দিন ১৩ হাজার ৩৪৯ জন বেশি মানুষ টিকা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে গণটিকাদান শুরু পর দেশে মোট টিকা নিলেন ৭৭ হাজার ৬৬৯ জন। আর প্রাথমিকভাবে গত ২৭ এবং ২৮ জানুয়ারিতে নেয়া ৫৬৭ জনকে নিয়ে ৭৮ হাজার ২৩৬ জন মানুষ দেশে করোনা ভাইরাসের টিকা নিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সোমবার টিকা নেয়া ৪৬ হাজার ৫০৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৫ হাজার ৮৪৩ জন এবং নারী রয়েছেন ১০ হাজার ৬৬৬ জন। টিকা নেয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১২ হাজার ৮২২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই হাজার ৩৯৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ হাজার ৪৮০ জন, রাজশাহী বিভাগে পাঁচ হাজার ৬৪২ জন, রংপুর বিভাগে পাঁচ হাজার ৫০৩ জন, খুলনা বিভাগে চার হাজার ১৭০ জন, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৫৪৪ জন এবং সিলেট বিভাগে তিন হাজার ৯৫৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো জানায়, সোমবার বিকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করোনা টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৫ জন।

এদিকে টিকা নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে অপপ্রচার চলছে। জনগণকে বাঁচাতে ভ্যাকসিন, মেরে ফেলার জন্য নয়। শুরুতে এক পক্ষ বলেছে, ভ্যাকসিন আসবে না। আসার পর বলেছে, নেয়া যাবে না। বিরোধী দল বলেছে, এমপি-মন্ত্রী নিলে আস্থা আসবে। তাই আমরা নিয়েছি।

সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, আসলে উৎসবমুখর পরিবেশ। আমার খুব ভালো লেগেছে। টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা ফেস করিনি। আধাঘণ্টা অবজারভেশনে ছিলাম। আমার কোনো রকম অসুবিধা হয়নি। আমি ভোটারদের অনুরোধ করব, আপনারা প্রত্যেকে এসে যার যার এলাকায় এই টিকা গ্রহণ করুন। তিনি আরো বলেন, এটা কোভিড থেকে রক্ষার অত্যন্ত ফলপ্রসূ উপায়। টিকা নেয়ার পর কোনো অসুবিধা হয় না বলেও জানান তিনি।

সবাইকে টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য টিকার বিকল্প নেই। আমরা যারা সংবাদমাধ্যমে কাজ করি, তাদের টিকা নেয়া জরুরি। টিকা নিতে হবে সবাইকে। আমি টিকা নিলাম, আর আপনি নিলেন না, তাতে কিন্তু আমরা নিরাপদ ভাবতে পারি না।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, টিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গতকাল থেকে টিকা শুরু হয়েছে, এটাকে আরেকটু রিল্যাক্স করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ৪০ বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গতকাল ৫৫ বছরের কম হলে কিন্তু টিকা দেয়া হচ্ছিল না। সেজন্য বলে দেয়া হয়েছে ৪০ বছর পর্যন্ত হলে টিকা দেয়া যাবে। এটা আজকে থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে। তরুণ যারা আছেন আস্তে আস্তে তাদের ওপেন করে দিতে হবে। যারা ফ্রন্টলাইন ফাইটার আছেন প্রয়োজন হলে তাদের ফ্যামিলিকেও আস্তে আস্তে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়ে দিতে হবে। টিকা নেয়ার পরেও সবাই যেন অবশ্যই মাস্ক পরেন, প্রধানমন্ত্রী সেই অনুরোধ করেছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, মাস্ক না পরলে কিন্তু কোনো কাজ হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা সুপারিশ করেছে। মাস্ক ছাড়া কোনো কাজ হবে না। তাই কোনো অবস্থাতেই আমাদের মাস্কের সাথে যাতে কম্প্রোমাইজ করা না হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ওইদিনই সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। তবে প্রাথমিকভাবে সেখানে ১৯টি শ্রেণিতে নিবন্ধন করার সুযোগ রাখা হয়। এর মধ্যে একটি শ্রেণি ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য। বাকিগুলো সম্মুখসারিতে থাকা বিভিন্ন পেশাভিত্তিক শ্রেণি অথবা বিশেষ শ্রেণির জন্য।

ওই ১৮টি শ্রেণিতে আছেন সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী; অনুমোদিত সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী; প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী; বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা; সম্মুখসারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য; সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা।

এছাড়া রয়েছেন সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী; নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী; ধর্মীর প্রতিনিধি (সকল ধর্ম); মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি; বিদ্যৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী; রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও নৌবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী; জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা।

এখন সাধারণ নাগরিক শ্রেণিতে ন্যূনতম বয়সের সীমা ৫৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করা হচ্ছে, যা সোমবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। টিকা নিতে যারা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে পারেননি তারা তাদের এনআইডি নিয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলে সেখানেও নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে সে যদি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যান, ওখানে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চেক করা হবে, তিনি কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি। গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে এবং শহরের লোকজন বিজনেস সেন্টারে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ‘আমি ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি আরেকটু সহজ করা যায় কীভাবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এক ধাপবিশিষ্ট করা যায় কীভাবে।

আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, এই টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭০ জন ইমিউন হয়ে যায় তাহলে তাহলে রোগটি হ্যান্ডেল বা এটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক কম্ফোর্টেবল একটা জোনে আমরা চলে যাব।

Tag :

সরকার যদি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে,তাহলে ৫ মিনিটও সময় পাবে না: ইসলামী আন্দোলনের আমির

টিকার শর্তে উল্লেখযোগ্য শিথিলতা :৪০ বছরের বেশি বয়সীরা নিতে পারবেন টিকা

Update Time : ০৯:১৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

দেশের সর্বসাধারণ যাতে টিকা গ্রহণ করতে পারে এজন্য উল্লেখযোগ্য শিথিলতা এনেছে সরকার। এখন থেকে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা নিতে পারবেন টিকা। এজন্য শুরু হয়েছে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়াও। সোমবার টিকার জন্য নিবন্ধনের ওই বয়সসীমা শিথিলের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে বলা হয়েছিল, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফা টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারিতে থাকা মানুষ এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ টিকা নিতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের অনুমতি দেয়া হবে।

এদিকে সোমবার ছিল সারা দেশে ২য় দিনের মতো গণটিকাদান কার্যক্রম। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে কারো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এরফলে সারাদেশে টিকা নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। টিকা গ্রহণকে কেন্দ্র করে দেশের প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে বিরাজ করছে উৎসবের আমেঝ।

দ্বিতীয় দিনে টিকা নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা, মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী মানবজমিনের সম্পাদক মাহবুবু চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার শামিম মুশফিক, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুসহ সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহস্য, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা।

টিকার অন্যতম সমালোচক বিএনপি নেতারাও নিতে শুরু করেছেন টিকা। গতকাল টিকা নিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিনসহ অনেক বিএনপি নেতা। টিকা দেয়ার পর তারা অভয় দিয়ে দেশবাসীকে টিকা নেয়ার আহ্বানও জানান। টিকা গ্রহীতাদের পাশাপাশি উৎসুক সাধারণ মানুষও টিকা কার্যক্রম দেখতে ভিড় করছেন টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে। স্বজনদের সঙ্গে অনেক প্রবীণরা টিকা নেয়ার পর বলেছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে এখন নিরাপদ বোধ করছেন তারা।

সরকারি হিসেবে গতকাল সোমবার টিকা নিয়েছেন আরো ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। এর আগের দিন রবিবার টিকা নেন ৩৩ হাজার ১৬০ জন। প্রথমদিনের তুলনায় ২য় দিন ১৩ হাজার ৩৪৯ জন বেশি মানুষ টিকা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে গণটিকাদান শুরু পর দেশে মোট টিকা নিলেন ৭৭ হাজার ৬৬৯ জন। আর প্রাথমিকভাবে গত ২৭ এবং ২৮ জানুয়ারিতে নেয়া ৫৬৭ জনকে নিয়ে ৭৮ হাজার ২৩৬ জন মানুষ দেশে করোনা ভাইরাসের টিকা নিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সোমবার টিকা নেয়া ৪৬ হাজার ৫০৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৫ হাজার ৮৪৩ জন এবং নারী রয়েছেন ১০ হাজার ৬৬৬ জন। টিকা নেয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১২ হাজার ৮২২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই হাজার ৩৯৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ হাজার ৪৮০ জন, রাজশাহী বিভাগে পাঁচ হাজার ৬৪২ জন, রংপুর বিভাগে পাঁচ হাজার ৫০৩ জন, খুলনা বিভাগে চার হাজার ১৭০ জন, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৫৪৪ জন এবং সিলেট বিভাগে তিন হাজার ৯৫৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো জানায়, সোমবার বিকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করোনা টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৫ জন।

এদিকে টিকা নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে অপপ্রচার চলছে। জনগণকে বাঁচাতে ভ্যাকসিন, মেরে ফেলার জন্য নয়। শুরুতে এক পক্ষ বলেছে, ভ্যাকসিন আসবে না। আসার পর বলেছে, নেয়া যাবে না। বিরোধী দল বলেছে, এমপি-মন্ত্রী নিলে আস্থা আসবে। তাই আমরা নিয়েছি।

সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, আসলে উৎসবমুখর পরিবেশ। আমার খুব ভালো লেগেছে। টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা ফেস করিনি। আধাঘণ্টা অবজারভেশনে ছিলাম। আমার কোনো রকম অসুবিধা হয়নি। আমি ভোটারদের অনুরোধ করব, আপনারা প্রত্যেকে এসে যার যার এলাকায় এই টিকা গ্রহণ করুন। তিনি আরো বলেন, এটা কোভিড থেকে রক্ষার অত্যন্ত ফলপ্রসূ উপায়। টিকা নেয়ার পর কোনো অসুবিধা হয় না বলেও জানান তিনি।

সবাইকে টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য টিকার বিকল্প নেই। আমরা যারা সংবাদমাধ্যমে কাজ করি, তাদের টিকা নেয়া জরুরি। টিকা নিতে হবে সবাইকে। আমি টিকা নিলাম, আর আপনি নিলেন না, তাতে কিন্তু আমরা নিরাপদ ভাবতে পারি না।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, টিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গতকাল থেকে টিকা শুরু হয়েছে, এটাকে আরেকটু রিল্যাক্স করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ৪০ বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গতকাল ৫৫ বছরের কম হলে কিন্তু টিকা দেয়া হচ্ছিল না। সেজন্য বলে দেয়া হয়েছে ৪০ বছর পর্যন্ত হলে টিকা দেয়া যাবে। এটা আজকে থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে। তরুণ যারা আছেন আস্তে আস্তে তাদের ওপেন করে দিতে হবে। যারা ফ্রন্টলাইন ফাইটার আছেন প্রয়োজন হলে তাদের ফ্যামিলিকেও আস্তে আস্তে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়ে দিতে হবে। টিকা নেয়ার পরেও সবাই যেন অবশ্যই মাস্ক পরেন, প্রধানমন্ত্রী সেই অনুরোধ করেছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, মাস্ক না পরলে কিন্তু কোনো কাজ হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা সুপারিশ করেছে। মাস্ক ছাড়া কোনো কাজ হবে না। তাই কোনো অবস্থাতেই আমাদের মাস্কের সাথে যাতে কম্প্রোমাইজ করা না হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ওইদিনই সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। তবে প্রাথমিকভাবে সেখানে ১৯টি শ্রেণিতে নিবন্ধন করার সুযোগ রাখা হয়। এর মধ্যে একটি শ্রেণি ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য। বাকিগুলো সম্মুখসারিতে থাকা বিভিন্ন পেশাভিত্তিক শ্রেণি অথবা বিশেষ শ্রেণির জন্য।

ওই ১৮টি শ্রেণিতে আছেন সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী; অনুমোদিত সকল বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী; প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী; বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা; সম্মুখসারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য; সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা।

এছাড়া রয়েছেন সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী; নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী; ধর্মীর প্রতিনিধি (সকল ধর্ম); মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি; বিদ্যৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী; রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও নৌবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী; জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা।

এখন সাধারণ নাগরিক শ্রেণিতে ন্যূনতম বয়সের সীমা ৫৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করা হচ্ছে, যা সোমবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। টিকা নিতে যারা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে পারেননি তারা তাদের এনআইডি নিয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলে সেখানেও নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে সে যদি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যান, ওখানে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চেক করা হবে, তিনি কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি। গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে এবং শহরের লোকজন বিজনেস সেন্টারে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ‘আমি ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি আরেকটু সহজ করা যায় কীভাবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এক ধাপবিশিষ্ট করা যায় কীভাবে।

আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, এই টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭০ জন ইমিউন হয়ে যায় তাহলে তাহলে রোগটি হ্যান্ডেল বা এটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক কম্ফোর্টেবল একটা জোনে আমরা চলে যাব।