ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ এক নজরে বিশ্ব সংবাদ: ১৭ মার্চ ২০২৫ আজকের নামাজের সময়সূচি ১৮ মার্চ আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না: ড. ইউনূস বাংলাদেশের হয়ে খেলতে সিলেটে পৌঁছেছেন হামজা চৌধুরী পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১২৭ জন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা দেশের ১২ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৬৫ কো‌টি ৬১ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

দুশ্চিন্তায় ফরিদপুরের পাট চাষিরা

মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে গত কয়েক বছর পাট চাষে লাভের মুখ দেখলেও এবার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষীরা। ভয়াবহ দাবদাহ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় গাছের বৃদ্ধি কমে গেছে। সেচের মাধ্যমে পানি দিলেও আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় চিন্তিত অনেক কৃষক। তবে পাটের দাম আশানুরূপ হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পাটচাষী কুদ্দুস মোল্লা, চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন এবার। চাষের প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েন। জমিতে সেচ দিয়ে পাটবীজ বপন করেন। তখন থেকে খরচ এতটা বেড়েছে যে, এখন এই টাকা ওঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপর আবার হানা দিয়েছে পাট গাছের পাতা পোড়া রোগ। তবে পাটের দাম বেশি পেলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে আশা করছেন।

একই উপজেলার আরেক কৃষক শেখ এনায়েতের জমির পাট পরিপক্ক হয়েছে তিনি বলেন, এক একর জমিতে পাট আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ মণ। কিন্তু এবার উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫ মন। এরপর কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচও বেশি হয়েছে। ফলন ভালো না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

জেলায় সব চেয়ে বেশি পাট চাষ হয় সালথা উপজেলায়। সেখানকার কৃষক মজিদ শেখ বলেন,  দাবদাহ পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছি। গত কয়েকবারের থেকে এবার বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবার নতুন সমস্যা পাট জাগ দেওয়া। খরচ বিবেচনা করে সরকার যেন উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় দুই জাতের অর্থাৎ তোস এবং মাস্তে পাটের আবাদ হয়েছে। জেলায় এবছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। জেলায় এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯শ মে. টন।

জেলায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম পাটের আবাদ হয়েছে এবার। তারপর প্রথম দিকে বৃষ্টি কম হওয়া,পাটের পাতা পোড়া রোগ ও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা ভোগাচ্ছে চাষীদের। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে  এখন যে পরিমান বৃষ্টি হচ্ছে  এই সমস্যা কেটে যাবে।

সালথা উপজেলা কৃষি অফিসার সুদর্শন সিকদার বলেন, এবছর সালথা উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। প্রচণ্ড খরার কারণে জমিতে বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। পাট উৎপাদনে এবার যে খরচ তাতে পাটের ন্যায্যমুল্য পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকেরা মূলত বৃষ্টির উপরে নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর প্রায় ত্রিশদিন যাবত টানা বৃষ্টিহীন তাপদাহ হয়েছে। এ কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। যারা সেচ দিয়ে চাষ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাট কাটা এখনো পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় ফলন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা। দাম ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে চাষিরা।

Tag :

গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

দুশ্চিন্তায় ফরিদপুরের পাট চাষিরা

Update Time : ০২:১৩:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে গত কয়েক বছর পাট চাষে লাভের মুখ দেখলেও এবার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষীরা। ভয়াবহ দাবদাহ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় গাছের বৃদ্ধি কমে গেছে। সেচের মাধ্যমে পানি দিলেও আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় চিন্তিত অনেক কৃষক। তবে পাটের দাম আশানুরূপ হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পাটচাষী কুদ্দুস মোল্লা, চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন এবার। চাষের প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েন। জমিতে সেচ দিয়ে পাটবীজ বপন করেন। তখন থেকে খরচ এতটা বেড়েছে যে, এখন এই টাকা ওঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপর আবার হানা দিয়েছে পাট গাছের পাতা পোড়া রোগ। তবে পাটের দাম বেশি পেলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে আশা করছেন।

একই উপজেলার আরেক কৃষক শেখ এনায়েতের জমির পাট পরিপক্ক হয়েছে তিনি বলেন, এক একর জমিতে পাট আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ মণ। কিন্তু এবার উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫ মন। এরপর কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচও বেশি হয়েছে। ফলন ভালো না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

জেলায় সব চেয়ে বেশি পাট চাষ হয় সালথা উপজেলায়। সেখানকার কৃষক মজিদ শেখ বলেন,  দাবদাহ পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছি। গত কয়েকবারের থেকে এবার বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবার নতুন সমস্যা পাট জাগ দেওয়া। খরচ বিবেচনা করে সরকার যেন উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় দুই জাতের অর্থাৎ তোস এবং মাস্তে পাটের আবাদ হয়েছে। জেলায় এবছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। জেলায় এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯শ মে. টন।

জেলায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম পাটের আবাদ হয়েছে এবার। তারপর প্রথম দিকে বৃষ্টি কম হওয়া,পাটের পাতা পোড়া রোগ ও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা ভোগাচ্ছে চাষীদের। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে  এখন যে পরিমান বৃষ্টি হচ্ছে  এই সমস্যা কেটে যাবে।

সালথা উপজেলা কৃষি অফিসার সুদর্শন সিকদার বলেন, এবছর সালথা উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। প্রচণ্ড খরার কারণে জমিতে বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। পাট উৎপাদনে এবার যে খরচ তাতে পাটের ন্যায্যমুল্য পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকেরা মূলত বৃষ্টির উপরে নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর প্রায় ত্রিশদিন যাবত টানা বৃষ্টিহীন তাপদাহ হয়েছে। এ কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। যারা সেচ দিয়ে চাষ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাট কাটা এখনো পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় ফলন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা। দাম ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে চাষিরা।