যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর বাইরে ভাইরাসের নতুন এই ধরন পাওয়া গেছে কানাডা ও জাপানেও।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও ফ্রান্সে যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে আসা মানুষজনের সংস্পর্শের আসার তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে কানাডার অন্টারিওতে এক দম্পতির শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হলেও, তারা কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের অন্য দেশে ভ্রমণ বা উচ্চ-ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
জাপানে যুক্তরাজ্য থেকে আসা পাঁচজন যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া আরও দুইজনের শরীরে এটি পাওয়া গেছে, যারা স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনাবাসিক নাগরিকদের আগামী একমাসের জন্য দেশে আসা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে জাপান। সোমবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
ইউরোপের দেশগুলো একযোগে আজ রোববার থেকে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগের মহামারি বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৭ লাখের বেশি মানুষ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ৪৫ কোটি। এরই মধ্যে এ অঞ্চলটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক একাধিক সংস্থার কাছ থেকে ২০০ কোটির বেশি ডোজ টিকা পাওয়ার জন্য চুক্তি করেছে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্বের মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত বলেই পরিচিত। কিন্তু এত বিশাল পরিসরে টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য কয়েকটি দেশ অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সাহায্য নিতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইনজেকশন প্রয়োগকারীর ক্ষেত্রেও বাধ্যবাধকতা শিথিল করছে কোনো কোনো দেশ।
একাধিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতস্তত বোধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা টিকাগ্রহণে মানুষকে আগ্রহী করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী বছর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য টিকা নেওয়াকে সেরা সুযোগ বলছেন ইইউর ২৭ দেশের নেতারা।
ইইউভুক্ত দেশগুলোতে টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় করছে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস ভিত্তিক ইউরোপীয় কমিশন। কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন ইউরোপজুড়ে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু উপলক্ষে টুইটারে একটি ভিডিওবার্তা ছেড়েছেন। সেখানে একে তিনি ‘একতার হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত’ বলে আখ্যা দেন।
উরসুলা ভন ডের লেয়েন টুইটে বলেন, ‘কঠিন একটি বছরের পাতা ওল্টানো শুরু করতে যাচ্ছি আমরা। মহামারির সময়ে টিকাই দীর্ঘস্থায়ী পন্থা।’
ইউরোপে করোনার টিকাদান শুরু
এদিকে ইউরোপে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান শুরুর আগে জার্মানির উত্তরপূর্বাঞ্চলের স্বাস্থ্যকর্মীরা বিবিসিকে বলেছেন, ফাইজার-বায়োএনটেকের অনুমোদিত টিকা বিতরণে আর একটি দিনও অপেক্ষা করতে চান না তাঁরা। জার্মানির একটি নার্সিংহোমের বয়োজ্যেষ্ঠদের দিয়ে টিকার প্রয়োগ শুরু করেছেন তাঁরা।
হাঙ্গেরির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির ডেল-পেস্ট সেন্ট্রাল হসপিটালের একজন চিকিৎসককে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার তাঁদের দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরপর প্রথমেই দেশটির রাজধানী বুদাপেস্টের একাধিক হাসপাতালের সম্মুখসারির কর্মীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে যখন করোনাভাইরাস মহামারি আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ইউরোপের সরকারগুলো তা প্রতিরোধে ব্যর্থ বলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই সমালোচনা কাটিয়ে এখন ইইউভুক্ত দেশগুলো পুরো অঞ্চলে সমভাবে টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করছে।