দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শনিবার। শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার ও পুলিশ সদস্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ভোটের প্রচার শেষ হয়েছে। প্রচারের শেষ মুহূর্তের কিছু ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে, জানান দিয়েছে শঙ্কার কথাও।
শনিবার অনুষ্ঠিতব্য ভোট নিয়ে সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা সতর্ক। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে যা যা করার সবই করবে ইসি।’
শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩২টি পৌরসভায় ব্যালটে এবং ২৮টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে ভোটগ্রহণের জন্য অধিকাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি।
ইসি সচিব বললেন, ‘সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে আরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।’
দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচন নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে যেমন উত্তেজনা রয়েছে, তেমনি শঙ্কাও বিদ্যমান। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ আরেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনা ভোটের মাঠের পরিবেশ নিয়ে আরো শঙ্কা বাড়িয়েছে। ফলে সেখানে নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে আটটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে অংশ নিচ্ছে। তবে ভোটের আগেই তিন পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভায় মেয়র পদপ্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি। এ ছাড়া পাবনার সুজানগরে ১৬ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা থাকলেও রিটের কারণে প্রথমে ভোট স্থগিত করা হয়। পরে সেখানে নতুন করে ভোটের দিন দেওয়া হয় ৩০ জানুয়ারি। অপরদিকে প্রথম ধাপে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় তখন ভোট স্থগিত করা হয়। সেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপে। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি।
ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচনি এলাকাগুলোতে বিজিবি, পুলিশ, আনসার ছাড়াও থাকছেন মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্য।
এই ধাপে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর আগে প্রথম ধাপে পাঁচটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। এ ধাপে আটটি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট মেয়র পদপ্রার্থী ২২১ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৩২০ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ৭৪৫ জন।
এবারের পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এই ধাপে ছয়টি পৌরসভায় প্রার্থী দিতে পারেনি।
নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ট্রাক ও পিকআপ চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি এবং হাইওয়ে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠাতব্য তিনটি পৌরসভায় মেয়র পদে ভোটগ্রহণ হবে না। অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় তাঁরা বিনাভোটে জয় পেয়েছেন। পৌরসভাগুলো হলো পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুর পৌরসভা এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভা।
ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৮০টি, মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৪০ হাজার ২৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ আট হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন।
দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৩টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ধাপের ৬৪ পৌরসভায় ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৮টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে মেয়র পদে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়।
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভা
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া (ইভিএম), কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালী (ইভিএম), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নারায়ণগঞ্জের তারাব (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মাগুরার মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর (ইভিএম), সাঁথিয়া, ঈশ্বরদী ও সুজানগর, রাজশাহীর কাকনহাট (ইভিএম), আড়ানী (ইভিএম) ও ভবানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর ও গোপালপুর, বগুড়ার সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও শেরপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), পিরোজপুরের পিরোজপুর (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকূপা (ইভিএম), খাগড়াছড়ি (ইভিএম), বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ ও রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, বগুড়ার সান্তাহার (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহার (ইভিএম) ও বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট (ইভিএম)।