প্রাথমিক গণপ্রস্তারের মাধ্যমে টাকা তোলার গতি বেড়ে যাওয়া এবং নতুন কোম্পানির দরবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের ফাঁদে নি:স্ব হচ্ছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা। আগের বছরের তুলনায় আইপিওতে টাকা তোলার হার বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন কোম্পানিকে ঘিরে একটি চক্র সবসময়ই অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ দিয়ে শেয়ারবাজারকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। প্রথমে শেয়ার না পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দামে শেয়ার সরবরাহ করে কেটে পড়ছেন চতুর চক্রটি। কিন্তু কোনভাবেই থামছে না এই অশুভ প্রক্রিয়া। প্রতিমাসেই নতুন নতুন আইপিও আসার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আইপিও শেয়ার নিয়ে জড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর এই খেলায়। সেটির চূড়ান্ত বলি হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবারে নতুন লেনদেন শুরু করা এনার্জিপ্যাকের সর্বোচ্চ ১০১.৮০ টাকায় প্রি-মার্কেট সেশনে ৫০ লাখের বেশি ক্রেতা ছিল। কিন্তু লেনদেন শুরুর পরই দিনটিতে সর্বোচ্চ দামে শেয়ার কেনা-বেচার পর ৮৩ দশমিক ৪০ টাকায় সর্বোচ্চ ১ কোটি ২০ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তৃতীয় দিনে এই শেয়ারগুলো ম্যাচিরড হওয়ার দিনে সর্বনিম্ন ৭১ টাকা লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ কোন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির ১ হাজার শেয়ার সর্বোচ্চ কিনলে ১ লাখ টাকার বিনিয়োগ করে তৃতীয় দিনে ৩০ হাজার টাকা খুঁইয়েছেন। এনার্জি প্যাকের মতো রবি, ডমিনেজ স্টিল, স্ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, এসোসিয়েটেড অক্সিজেন, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগকারীরাও প্রতারিত হয়েছেন। যদিও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন ডমিনেজ স্টিল ও এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু কোন লাভের কিছু হয়নি। রবি ও এনার্জি প্যাকে ক্ষতিতে পড়েছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা।
বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ার সুযোগ নিয়েছে কারসাজি চক্র। এক্ষেত্রে নতুন আইপিওকে টার্গেটে পরিনত করেছে। সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে সার্কিট ব্রেকারকে। এর আগে নতুন কোম্পানির লেনদেনের প্রথম দিনে কোন সার্কিট ব্রেকার ছিল না। এখন নতুন কোম্পানির প্রথম দুই দিনে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে বা কমতে পারবে। কারসাজির চক্ররা এই সার্কিটকেই ব্যবহার করছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নতুন কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও বিভিন্ন হাউসে বিও হিসান খুলে কয়েকদিনের ক্রয়াদেশ আগাম দিয়ে রাখছেন। লেনদেনের অনুমোদিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও তাদের ফাদে পাঁ দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা সাধারণ বিনিয়োগকারীর ওপর শেয়ার বিক্রি করে কেটে পড়ছেন। এনার্জি প্যাকের মতো ঘটনা প্রতি কোম্পানির ক্ষেত্রেই ঘটছে। কিন্তু কোন প্রতিকার আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজারের বর্তমান স্থিতিশীলতা বিও হতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলেও মত দিয়েছেন তারা।