ঢাকা ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মাসেতু ঘিরে উৎসবের শুরু ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১ম স্প্যান বসানো থেকে চলছে এখনো

সেতু এখন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। তাই তো স্বপ্নের সেতুটি সামনে থেকে দেখতে আজ শুক্রবার ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ভিড় করেছিলেন অনেকে। পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখে, ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছেন তাঁরা।

২০১৭, ১লা অক্টোবর ১ম স্প্যান বসানোর পরও একই রকম উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল।ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছিল আগত দর্শনার্থীরা তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারবর্গ নিয়ে। দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক ইয়ারুন নাহার রুনা সে সময়কার ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করেন এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ৪১তম স্প্যান বসানোর পর সম্পূর্ন সেতু যখন দ্শ্যৃমান তার সাক্ষী না হতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক (বায়ে) ২০১৭, ১লা অক্টোবর

৪১তম স্প্যান স্থাপনের পর যখন মূল সেতু সম্পূর্ন দৃশ্যমান দূররদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে এসেছে আনন্দে যোগ দিতে। বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের এই সেতু দেখতে আসা মানুষের ভিড় শুক্রবারও কমেনি। ছুটে এসেছে শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্তে।

স্থানীয়  এলাকার বাসিন্দাররা বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে শত শত লোক ছুটে এসেছে স্বপ্নের সেতু দেখতে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, ২০১৭, ১লা অক্টোবর

কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন স্বপ্নের সেতুটি একনজর দেখতে। এ সময় অনেকেই সেতু পেছনে রেখে সেলফি তোলেন।অনেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে সেতু দেখার জন্য এসেছেন।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর পরিবারের সদস্যবৃন্দ ২০১৭, ১লা অক্টোবর

কেউ আবার শুধুই পদ্মা সেতু ক্যামেরাবন্দী করছিলেন। পদ্মা নদীর পাড় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করতেও দেখা গেছে অনেককে। ট্রলার ও স্পিডবোটে করে পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও যেতে দেখা গেছে অনেক দর্শনার্থীকে।

ডাক্তার সুলতান মাহমুদ, ২০১৭, ১লা অক্টোবর

পদ্মা সেতু দেখতে ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার সুলতান মাহমুদ জানান, এর আগে কেবল সংবাদপত্রের পাতায় আর টেলিভিশনে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো দেখেছেন। বাস্তবে সেতুটি একনজর দেখতে চলে এসেছেন মাওয়ায়।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। তিন বছর পর বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক বলেন, “২০১৭,  ৩০শে সেপ্টম্বর ১ম স্প্যান বসানোর পর  পুরো পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে চলে  গিয়েছিলাম।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক (ডানে) এবং বার্তা সম্পাদক (বায়ে), ২০১৭, ১লা অক্টোবর

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক ইয়ারুন নাহার রুনা (বামে)

আজ নিরাপত্তার  কারণে সেনাসদস্যরা প্রকল্প এলাকার ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। দর্শনার্থীরা সেতুর সংযোগ সড়ক, রেল প্রকল্প ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সময় কাটিয়ে ফিরে গেছেন।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে, পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে  ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু যে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

পদ্মাসেতু ঘিরে উৎসবের শুরু ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১ম স্প্যান বসানো থেকে চলছে এখনো

Update Time : ০৬:৩৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

সেতু এখন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। তাই তো স্বপ্নের সেতুটি সামনে থেকে দেখতে আজ শুক্রবার ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ভিড় করেছিলেন অনেকে। পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখে, ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছেন তাঁরা।

২০১৭, ১লা অক্টোবর ১ম স্প্যান বসানোর পরও একই রকম উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল।ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছিল আগত দর্শনার্থীরা তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারবর্গ নিয়ে। দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক ইয়ারুন নাহার রুনা সে সময়কার ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করেন এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ৪১তম স্প্যান বসানোর পর সম্পূর্ন সেতু যখন দ্শ্যৃমান তার সাক্ষী না হতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক (বায়ে) ২০১৭, ১লা অক্টোবর

৪১তম স্প্যান স্থাপনের পর যখন মূল সেতু সম্পূর্ন দৃশ্যমান দূররদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে এসেছে আনন্দে যোগ দিতে। বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের এই সেতু দেখতে আসা মানুষের ভিড় শুক্রবারও কমেনি। ছুটে এসেছে শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্তে।

স্থানীয়  এলাকার বাসিন্দাররা বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে শত শত লোক ছুটে এসেছে স্বপ্নের সেতু দেখতে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, ২০১৭, ১লা অক্টোবর

কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন স্বপ্নের সেতুটি একনজর দেখতে। এ সময় অনেকেই সেতু পেছনে রেখে সেলফি তোলেন।অনেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে সেতু দেখার জন্য এসেছেন।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর পরিবারের সদস্যবৃন্দ ২০১৭, ১লা অক্টোবর

কেউ আবার শুধুই পদ্মা সেতু ক্যামেরাবন্দী করছিলেন। পদ্মা নদীর পাড় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করতেও দেখা গেছে অনেককে। ট্রলার ও স্পিডবোটে করে পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও যেতে দেখা গেছে অনেক দর্শনার্থীকে।

ডাক্তার সুলতান মাহমুদ, ২০১৭, ১লা অক্টোবর

পদ্মা সেতু দেখতে ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার সুলতান মাহমুদ জানান, এর আগে কেবল সংবাদপত্রের পাতায় আর টেলিভিশনে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো দেখেছেন। বাস্তবে সেতুটি একনজর দেখতে চলে এসেছেন মাওয়ায়।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। তিন বছর পর বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক বলেন, “২০১৭,  ৩০শে সেপ্টম্বর ১ম স্প্যান বসানোর পর  পুরো পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে চলে  গিয়েছিলাম।

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক (ডানে) এবং বার্তা সম্পাদক (বায়ে), ২০১৭, ১লা অক্টোবর

দ্য পদ্মা২৪.কম এর সম্পাদক ইয়ারুন নাহার রুনা (বামে)

আজ নিরাপত্তার  কারণে সেনাসদস্যরা প্রকল্প এলাকার ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। দর্শনার্থীরা সেতুর সংযোগ সড়ক, রেল প্রকল্প ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সময় কাটিয়ে ফিরে গেছেন।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে, পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে  ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু যে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।