ঢাকা ১০:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
সুখী দেশের তালিকায় আরও পাঁচ ধাপ পিছিয়ে এ বছর ১৩৪তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতার দল’ সরকার ১৯৬ কর্মকর্তাকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত যে কোনো উপায়ে আগামী ২৯ মার্চ শাওয়াল বা ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা সম্ভব নয়: সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র আগামী ১০ এপ্রিল থেকে ৩৩ দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স গাজা উপত্যকায় গত মঙ্গলবার থেকে উপত্যকাটিতে ৭১০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী ইসরায়েলের একটি বিমানবন্দরে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ডব্লিউএইচওতে চাকরি, পুতুলের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক

পদ্মা সেতুর এখনও যেসব কাজ বাকি আছে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ১১:৩৯:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
  • ২৯৪ Time View

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে যুক্ত হলো প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার। বৃহস্পতিবার দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামোর মূল অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেতুতে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো এখনও শেষ হয়নি। স্ল্যাব বসাতে হবে দুই হাজার ৯১৭টি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৩৩৩টি স্থাপন করা হয়েছে।

রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও চলছে। রেললাইনের দুই হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৯৪২টি এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ সেতুতে প্রায় তিন কিলোমিটার চার লেনের সড়ক ও চার কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ। তবে সব স্ল্যাব বসানো হলেই রেল চালু করা যাবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট করে বলছেন না কেউ।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার দিনই মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলবে। বাকি অংশ পরে হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে মোট ৪৮৪টি সুপার টি গার্ডার স্থাপন করতে হবে। এর মধ্যে ৩২১টি স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিজের রেলিং, স্ট্রিট ও আর্কিটেকচারাল লাইটিং, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করতে হবে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বসানো হয়েছিল প্রথম স্প্যানটি। এরপর ধাপে ধাপে স্প্যান বসিয়ে এ পর্যন্ত ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সেতুর মোট পিলার ৪২টি এবং এতে স্প্যান বসবে ৪১টি। পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও চলমান আছে। সেতুতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ২৯১৭টি রোড স্ল্যাব। এরমধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ২৩৯টির বেশি স্ল্যাব। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেল স্ল্যাব। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ৮৬০টির বেশি স্ল্যাব।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে, পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে  ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু যে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।

Tag :

সুখী দেশের তালিকায় আরও পাঁচ ধাপ পিছিয়ে এ বছর ১৩৪তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ

পদ্মা সেতুর এখনও যেসব কাজ বাকি আছে

Update Time : ১১:৩৯:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে যুক্ত হলো প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার। বৃহস্পতিবার দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামোর মূল অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেতুতে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো এখনও শেষ হয়নি। স্ল্যাব বসাতে হবে দুই হাজার ৯১৭টি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৩৩৩টি স্থাপন করা হয়েছে।

রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও চলছে। রেললাইনের দুই হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৯৪২টি এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ সেতুতে প্রায় তিন কিলোমিটার চার লেনের সড়ক ও চার কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ। তবে সব স্ল্যাব বসানো হলেই রেল চালু করা যাবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট করে বলছেন না কেউ।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার দিনই মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলবে। বাকি অংশ পরে হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে মোট ৪৮৪টি সুপার টি গার্ডার স্থাপন করতে হবে। এর মধ্যে ৩২১টি স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিজের রেলিং, স্ট্রিট ও আর্কিটেকচারাল লাইটিং, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করতে হবে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বসানো হয়েছিল প্রথম স্প্যানটি। এরপর ধাপে ধাপে স্প্যান বসিয়ে এ পর্যন্ত ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সেতুর মোট পিলার ৪২টি এবং এতে স্প্যান বসবে ৪১টি। পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও চলমান আছে। সেতুতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ২৯১৭টি রোড স্ল্যাব। এরমধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ২৩৯টির বেশি স্ল্যাব। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেল স্ল্যাব। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ৮৬০টির বেশি স্ল্যাব।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে, পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে  ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পদ্মা সেতু যে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সামর্থ্য ও যোগ্যতার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।