জাতীয়ভাবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিন সারাদেশে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৭১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৭৭২ জন এবং নারী এক হাজার ২৯৯ জন।
ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৯ হাজার ৩১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৬৯৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় হাজার ৪৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৭৫৭ জন, রংপুর বিভাগে দুই হাজার ৯১২ জন, খুলনা বিভাগে তিন হাজার ২৩৩ জন, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৪১২ জন আর সিলেট বিভাগে টিকা নিয়েছেন দুই হাজার ৩৯৬ জন।
টিকা গ্রহণকারী ২১ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, টিকা নেওয়ার স্থানে লাল হবার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে রোববার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালসহ সারা দেশের এক হাজারের বেশি হাসপাতালে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচির সূচনা হয়। রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এরপর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্তলাল সেনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে করোনার টিকা নেন।
করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। এ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। টিকা নিয়ে যেন কোনো রিউমার না হয়।
বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে টিকা নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। টিকা নেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি দেশবাসীকেও টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি টিকা নিয়েছি। আমার স্ত্রীও নিয়েছেন। আমার এ পর্যন্ত কোনো অসুবিধা হয়নি।’
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছে টিকা প্রদান কার্যক্রম।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএসইউ) করোনা টিকা গ্রহণ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘খুব ভাল আছি। ভয়ের কোনও কারণ নাই। দেশবাসীকে আহবান করছি-যার যখনই তারিখ আসবে আপনারা এসে টিকা নেবেন। এটা আপনার কর্তব্য, জাতির কর্তব্য, দেশের কর্তব্য।’
গত ২৭ জানুয়ারি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয়।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। পরের দিন মন্ত্রিসভার প্রথম কোনো সদস্য হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ফরিদপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু
ফরিদপুরে করোনা টিকা কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার সকালে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে এর উদ্বোধন করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।
উদ্বোধনী দিনে সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা বেগম ও ডাক্তার অনন্ত কুমার বিশ্বাসের করণা টিকা নেবার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির শুভ সুচনা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর টিকা নেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বিপিএম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুর হক ভোলা মাস্টার, ইসিভল সার্জন মো. সিদ্দিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, ফরিদপুরের পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর করোনা জেইযকেটেড হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক অনন্ত কুমার বিশ্বাস, জেলা বিএমএ সভাপতি আসম জাহাঙ্গীর হোসেন, দৈনিক প্রথম আলো প্রতিনিধি পান্না বালা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক জনাব মোঃ বজলুর রশীদ খান।
ফাতেমা বেগম বলেন ভিতরে ভিতরে একটু ভয় ছিল। তবে টিকা নেওয়ার পর কোন অসুবিধা হয়নি।
ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪টি, জেনারেল হাসপাতালে আটটি এবং পুলিশ লাইনস হাসপাতালে দুটি বুথ রয়েছে।