গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুশীদ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ণ) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এবং হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ চেয়েছেন। গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক মঞ্জুরির অনুরোধ জানান। পরিবহন খরচসহ ক্লোড চেইনে পৌঁছানো পর্যন্ত অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ১৫ কোটি ইউএস ডলার ব্যয় হবে। এক্ষেত্রে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৭৭ পয়সা হিসাবে এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রয়োজন।
সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী, উল্লি¬খিত টাকার ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা শর্তহীন ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম প্রদান করতে হবে। অবশিষ্ট পঞ্চাশ শতাংশ টাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ভ্যাকসিন অনুমোদনের পর প্রদান করতে হবে।
এছাড়া কোল্ড চেইন ইক্যুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেফটি বক্স কেনা, ভ্যাকসিন কেন্দ্র পর্যন্ত পরিবহন, জনবল, মাইক্রোপ্ল্যানিং ও তালিকা প্রণয়ন, সুপারভিশন ও মনিটরিং প্রশিক্ষণ, প্রচার-প্রচারণাসহ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া পর্যন্ত প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনে আরও সোয়া ডলার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তিন কোটি ভ্যাকসিনের জন্য আরো তিন কোটি ৭৫ ইউএস ডলার প্রয়োজন। প্রতি ডলার ৮৪ দশমিক ৭৭ টাকা হিসাবে ৩১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা ও মানুষের শরীরে প্রয়োগ পর্যন্ত মোট দরকার এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এক অনুষ্ঠানে জানান, চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইন্সটিটিউট যেদিন আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ শুরু করবে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ পাবে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম দামেই এই ভ্যাকসিন পাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে মাত্র পাঁচ ডলার। সেরামের কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় মাসে মোট তি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের সব মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি। এ দুই বিশ্ব সংস্থার আয়োজনে গত ৪ জুন গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট হয়, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। ওই সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়, যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে কোভ্যাক্স। গত ৩০ জুলাই গ্যাভির বোর্ড সভায় এই কোভ্যাক্সের অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি) প্রকল্পের আওতায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও সেই তালিকায় রাখা হয়।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক গ্যাভির টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিতের তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘যারা আগে জাতীয় ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা জমা দেবে তারাই আগে ভ্যাকসিন পাবে। গ্যাভি যখন থেকে পরিকল্পনা জমা নেওয়া শুরু করবে, আশা করছি আমরা প্রথম দিনই আমাদের পরিকল্পনা জমা দিতে পারব।’
এ দুটি ভ্যাকসিনের সোর্স ছাড়াও সিনোভ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, রাশিয়ার স্পুৎনিক এগিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ রয়েছে বলেন ডা. শামসুল হক। তিনি বলেন, জেএসকে গ্রুপের সেনোফি এবং ফাইজারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং যদি সেরকম ‘আর্জেন্সি’ হয় তাহলে কীভাবে তাদের ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে সে নিয়েও কথা হচ্ছে। তবে কোনো কোনো ভ্যাকসিন আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খুবই ‘কোয়েশ্চেনেবল’ এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই এত ‘লো টেম্পারেচার’ এর ব্যবস্থা না থাকায় তারাও এ নিয়ে চিন্তিত। এসব ভ্যাকসিন বিষয়ে কাজ করতে কোভিড ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছে সরকার। এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অব ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে, রয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রিপায়ের্ডনেস অ্যান্ড ডেপ্লয়মেন্ট কোর কমিটি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আমরা এসব টিকা পেতে পারি। এটা একটা সম্ভাবনা। আমরা ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছি সেখান থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা পাব। আর আমাদের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের টিকা গ্যাভি আমাদের সরবরাহ করবে। তারা বলেছে, ‘এই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পেয়ে যাবেন। তবে নির্ধারিত দিন-তারিখ বলতে পারব না।’
প্রাণঘাতী ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের জীবনরক্ষায় টিকা প্রদানে ভূমিকা রেখে আসা এই আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভি বিশ্বের নিম্ন ও মধ্য আয়ের ৯২টি দেশকে করোনা ভাইরাসের টিকা সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা সরবরাহ করবে তারা। একজন মানুষ দুই ডোজ করে টিকা পাবেন। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য গ্যাভির কাছ থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্যাভির কাছ থেকে প্রতি ডোজ টিকা আনতে এক দশমিক ৬২ থেকে দুই ডলারের মতো ব্যয় হবে। ভর্তুকি দিয়ে এই টিকা সরবরাহ করবে তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিলে এসব দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশের জন্য সেই টিকা সরবরাহের প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করেছে গ্যাভি। আর সেজন্য সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ, যদিও পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে কার্যকর ও নিরাপদ টিকার অনুমোদনপ্রাপ্তি, উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর। কোভ্যাক্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের বেশি সেসব দেশকে সম্পূর্ণ মূল্যে টিকা কিনে নিতে হবে। চার হাজার ডলারের নিচে আয়ের দেশকে শুরুতে ভর্তুকি দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকা দেবে গ্যাভি। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ গত ৯ জুলাই কোভ্যাক্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্যাভির কাছে আবেদন পাঠিয়েছে। সে আবেদন গ্যাভি গ্রহণ করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে বিভিন্ন রোগের যে টিকা নিচ্ছে তার ১০ শতাংশ মূল্য সরকারকে পরিশোধ করতে হয়, বাকি ৯০ শতাংশ দেয় গ্যাভি।
শিরোনাম
প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ
- অনলাইন ডেস্ক
- Update Time : ০৭:৫৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
- ৩০৫ Time View
বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখের মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসব দেশের তৈরি কয়েকটি টিকা বাজারে আসবে। যার প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতেই ১০ কোটি ডোজ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি দেবে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ। আর ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ফার্মা জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকার তিন কোটি ডোজ পাবে বাংলাদেশ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সরকারের ব্যয় হবে এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ভ্যাকসিন কেনা থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে দেওয়া পর্যন্ত এই টাকা প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে এর অর্ধেক পরিমাণ প্রায় ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
Tag :
জনপ্রিয়