মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী সরকারের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হবে।
আগামী ২৩ জানুয়ারি শনিবার বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো একসাথে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের প্রত্যেককে ২ শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর দেয়া হবে। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুড়াপাড়া গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা ঘর পরিদর্শন করেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন। এসময় তিনি জানান, জাতির পিতার ডাকে দেশের আপামর জনসাধারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। এখন তাঁর সুযোগ্য কন্যার নির্দেশে সরকার দেশকে ভূমিহীন, গৃহহীনমুক্ত করতে কাজ করছে। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকেই ঘর দেয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরে ঘর পাচ্ছেন ১৪৮০জন গৃহহীন পরিবার
ফরিদপুর জেলায় শনিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এক হাজার ৪৮০ জন গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন ঘর। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিং এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।
জেলা প্রশাসক জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় প্রকৃত গৃহহীনরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এ ঘর পাচ্ছেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘর প্রদানের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
জেলা প্রশাসক জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় সারাদেশের মতো ফরিদপুরেও ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য প্রথম দফায় নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ৪৮০টি বসতঘর। এছাড়া মোট ৩ দফায় মোট নির্মিত হচ্ছে ২ হাজার ৩৫ টি ঘর। ঘরসমূহ নির্মানে সর্বমোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৫ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে নয়টি উপজেলার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের তদারকিতে গড়ে উঠছে আশ্রয়হীন মানুষের স্বপ্নের ঠিকানা ‘স্বপ্ননীড়’। গৃহনির্মাণের এই কাজে সমানতালে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী এই ‘স্বপ্ননীড়ের’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘আশ্রয়ণের অধিকার- শেখ হাসিনার উপহার’ স্লোগান সংবলিত এ প্রকল্পে সারাদেশের মতো ফরিদপুর জেলার প্রতিটি ভূমিহীন-ঘরহীন পরিবারের জন্যও থাকছে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঘর। প্রতিটি পরিবারের জন্য বানানো হচ্ছে দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর।
এ লক্ষ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ৩১২টি ঘর, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ৩৭০টি ঘর, বোয়ালমারী উপজেলায় ১৯২ টি ঘর, মধুখালী উপজেলায় ১৬৮টি ঘর, নগরকান্দা উপজেলায় ২১৫ টি ঘর, সালথা উপজেলায় ২০০টি ঘর, ভাঙ্গা উপজেলায় ২৫০টি ঘর, সদরপুর উপজেলায় ১৭৮টি ঘর এবং চরভদ্রাসন উপজেলায় ১৫০টি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিবার পিছু একটি ঘরের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে ২ শতাংশ জমি।
ফুলবাড়িতে ১৬৫ ভুমিহীন কৃষক পাচ্ছে ঘর
প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বঙ্গবন্ধু কন্যার উপহারের ঘর পাচ্ছেন। এরমধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করবেন। এছাড়া ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সেসব ঘর সুবিধাভোগীদের কাছে হস্তান্তর করবেন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরো ১ লাখ পরিবারকে গৃহ বরাদ্দ করা হবে।
আর চলতি বছর অর্থাত্ মুজিববর্ষেই আরো ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭১৮ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্বপ্নের নীড়সহ দুই শতক জমির মালিকানা দিয়ে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেওয়া হবে সরকারিভাবে।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভূমিহীনদের জন্য তৈরি ঘর
দেশের বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে নিজস্ব ঠিকানা অর্থাত্ জমির মালিকানাসহ সরকারি খরচে নির্মিত বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সামনে আরেকটি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন, যা নজিরবিহীন। প্রায় ৫০০ বর্গফুটের প্রতিটি বাড়িতে থাকবে দুটি বেড রুম, একটা কিচেন রুম, একটা ইউটিলিটি রুম, একটা টয়লেট ও একটা বারান্দা। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা। প্রতিটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি সবগুলো বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে। শনিবার প্রথম ধাপের ঘর বরাদ্দের উদ্বোধন অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি প্রেস ব্রিফিং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে (২য় তলা) অনুষ্ঠিত হবে।
মুজিববর্ষের সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই এসব ঘর নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় সরকার। ইতিমধ্যে সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। ‘আশ্রয়নের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষে দেশেই নির্মিত হচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য এই ‘স্বপ্নের নীড়’।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভূমিহীনদের জন্য তৈরি ঘর।
সরকারের হিসাব মতে, সারা দেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি এমনও পরিবার রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূমিহীনদের মাঝেও ঘর বিতরণ
রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে মুড়াপাড়া গ্রামে পাইলট প্রকল্পে ২০টি পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে। তাদের সবার জীবনের গল্পই মোটামুটি একই রকম। ভূমি ও গৃহহীন এসব পরিবার পেয়েছে নিজেদের ঠিকানা। প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত দুই রুমের ঘরে জ্বলছে বিদ্যুতের আলোও। আলোকিত তাদের চোখ মুখও।
বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা ঘর পরিদর্শন করতে গিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি সারা বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো দেশে একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করবেন। এছাড়াও ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্প গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানান তিনি।
পিরোজপুরে ঘর পাবে ১৭৭৫ গৃহহীন পরিবার
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২৩ জানুয়ারি সারা দেশের ন্যায় জেলার ৭টি উপজেলায় একসঙ্গে প্রথম ধাপে নির্মিত ৩৭৫টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর প্রদান করা হবে। পরবর্তী সময়ে নির্মাণাধীন বাকি ৮০০ ঘর পর্যায়ক্রমে ৮০০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
২ শতাংশ জমির ওপরে প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রত্যেক গৃহে দুটি থাকার রুম, একটি বারান্দা, একটি রান্না ঘর ও একটি টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ১ হাজার ১৭৫টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
খুলনায় হতদরিদ্র ৯২২ পরিবার পাচ্ছে উপহারের ঘর
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে ঘরসহ জমি প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনার ৯টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি পরিবারকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট নবনির্মিত ঘরসহ জমি প্রদান করা হচ্ছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি ও ঘর প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
তখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুলনার ডুমুরিয়ার প্রত্যন্ত কাঁঠালতলা গ্রামে সরাসরি উপকারভোগীদের সাথে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ডুমুরিয়ায় স্যাটেলাইট টিম সংযোগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
সরকারের হিসাব মতে, সারা দেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি এমনও পরিবার রয়েছে।