ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে: নাহিদ ইসলাম দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আগামীকাল খোলা থাকছে সব সরকারি অফিস ড. ইউনূসের পদত্যাগ চায় না বিএনপি, আবেগের বশে করলে বিকল্প বেছে নেবে জাতি: সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতীয় একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’ পোস্টটি মুছে দিলেন ফয়েজ আহমদ গুরুতর অসুস্থ নুসরাত ফারিয়া, সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন সেনাবাহিনী রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আইসিসি ইভেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে একই গ্রুপে থাকতে চায় না ভারত গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সেনাবাহিনীর আহ্বান

ফরিদপুরের আলোচিত সেই অনার্স ,মাস্টার্স পাশ করা রিক্সা চালক জুলহাস ব্যাপারীর চাকরী হয়েছে।

মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর প্রতিনিধি : একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষের রিকশা চালানো যেন সমাজের এক কঠিন বাস্তবতা। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা জুলহাস ব্যাপারীর জীবনের গল্প ছিল অসহায়তা, বেদনা আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

এই হতাশাজনক বাস্তবতাকে সামনে এনে সম্প্রতি  কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় “অনার্স মাস্টার্স করা জুলহাসের জীবন চলছে রিক্সার প্যাডেলের জটিল সমীকরণে” শিরোনামে  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই প্রতিবেদনটি  ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়ালের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টাতে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য ফোন এবং চাকরির প্রস্তাব আসতে থাকে জুলহাসের জন্য। রিপোর্ট প্রকাশের পর জুলহাসের জন্য ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক  মাহবুব পিয়ালের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেন বিশিষ্ট এনজিও ব্যক্তিত্ব ফরিদপুর ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি – এফডিএ’র প্রতিষ্টাতা পরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম।

জুলহাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা এবং পরিবার থেকে দূরে না যাওয়ার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে ফরিদপুরেই একটি সম্মানজনক চাকরির প্রস্তাব দেন তিনি। জুলহাস ছাড়াও এমন শত শত বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করেছেন ফরিদপুরের এই মানবিক মানুষ  মো: আজহারুল ইসলাম। সকল দিক বিবেচনা করে জুলহাস এফডিএ-তে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে  রবিবার (২৭ এপ্রিল) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরিতে যোগ দেন। দুপুর ১২টায় তার হাতে চাকুরীর নিয়োগ পত্র তুলে দেন ফরিদপুর ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি – এফডিএ’র প্রতিষ্টাতা পরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম। এসময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মাহবুব পিয়াল,এফডিএ’র নিবাহী পরিচালক আবু ছাহের আলম, আশিকুল ইসলাম পাভেল, সাংবাদিক সোহানুর রহমান সোহান,জাকিব আহমেদ জ্যাকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জুলহাসকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদন পড়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান মোল্লা বিশিষ্ট সমাজসেবক, অটো টেক্স গ্রুপের নিবার্হী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, বিশিষ্ট শিল্পপতি চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ, সমাজসেবী ও মানবাধিকার কর্মী তাহমিনা ইকবাল লাকী সহ ফরিদপুরের অসংখ্য সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে তার পাশে দাঁড়ান।

চাকরিতে যোগদানের পর আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জুলহাস ব্যাপারী। তিনি বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোতে পাশে দাঁড়িয়েছে একটি সংবাদ এবং কিছু মানবিক হৃদয়। বিশেষ করে আমি কৃতজ্ঞ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মাহবুব পিয়াল ভাইয়ের প্রতি। রিপোর্টার সোহানুর রহমান ভাই এবং জ্যাকিব  ভায়ের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই প্রতিবেদন না হলে আজও হয়তো আমি রিকশার প্যাডেলই ঘোরাতাম।

“ছেলের জীবনে এভাবে আলোর দ্বার খুলে যাবে, তা কখনো ভাবেননি জুলহাসের বৃদ্ধ বাবা-মা। অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের সাক্ষী তারা। সংবাদ প্রকাশের পর যখন একে একে সহায়তার হাত বাড়তে থাকে, তখন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তারা। ছেলের চাকরির খবর শুনে চোখ ভিজে ওঠে আনন্দে। তাঁরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি।

এই গল্প আবারও প্রমাণ করে, একটি সত্য ও মানবিক প্রতিবেদন কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শিক্ষার মূল্য, সংগ্রামের মর্যাদা এবং সাংবাদিকতার মানবিক শক্তির একটি বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকবে জুলহাস ব্যাপারীর জীবনের গল্প।

Tag :

আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে: নাহিদ ইসলাম

ফরিদপুরের আলোচিত সেই অনার্স ,মাস্টার্স পাশ করা রিক্সা চালক জুলহাস ব্যাপারীর চাকরী হয়েছে।

Update Time : ০৫:১৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর প্রতিনিধি : একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষের রিকশা চালানো যেন সমাজের এক কঠিন বাস্তবতা। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা জুলহাস ব্যাপারীর জীবনের গল্প ছিল অসহায়তা, বেদনা আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

এই হতাশাজনক বাস্তবতাকে সামনে এনে সম্প্রতি  কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় “অনার্স মাস্টার্স করা জুলহাসের জীবন চলছে রিক্সার প্যাডেলের জটিল সমীকরণে” শিরোনামে  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই প্রতিবেদনটি  ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়ালের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টাতে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য ফোন এবং চাকরির প্রস্তাব আসতে থাকে জুলহাসের জন্য। রিপোর্ট প্রকাশের পর জুলহাসের জন্য ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক  মাহবুব পিয়ালের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করেন বিশিষ্ট এনজিও ব্যক্তিত্ব ফরিদপুর ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি – এফডিএ’র প্রতিষ্টাতা পরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম।

জুলহাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা এবং পরিবার থেকে দূরে না যাওয়ার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে ফরিদপুরেই একটি সম্মানজনক চাকরির প্রস্তাব দেন তিনি। জুলহাস ছাড়াও এমন শত শত বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করেছেন ফরিদপুরের এই মানবিক মানুষ  মো: আজহারুল ইসলাম। সকল দিক বিবেচনা করে জুলহাস এফডিএ-তে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে  রবিবার (২৭ এপ্রিল) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরিতে যোগ দেন। দুপুর ১২টায় তার হাতে চাকুরীর নিয়োগ পত্র তুলে দেন ফরিদপুর ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি – এফডিএ’র প্রতিষ্টাতা পরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম। এসময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মাহবুব পিয়াল,এফডিএ’র নিবাহী পরিচালক আবু ছাহের আলম, আশিকুল ইসলাম পাভেল, সাংবাদিক সোহানুর রহমান সোহান,জাকিব আহমেদ জ্যাকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জুলহাসকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদন পড়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান মোল্লা বিশিষ্ট সমাজসেবক, অটো টেক্স গ্রুপের নিবার্হী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, বিশিষ্ট শিল্পপতি চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ, সমাজসেবী ও মানবাধিকার কর্মী তাহমিনা ইকবাল লাকী সহ ফরিদপুরের অসংখ্য সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে তার পাশে দাঁড়ান।

চাকরিতে যোগদানের পর আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জুলহাস ব্যাপারী। তিনি বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোতে পাশে দাঁড়িয়েছে একটি সংবাদ এবং কিছু মানবিক হৃদয়। বিশেষ করে আমি কৃতজ্ঞ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মাহবুব পিয়াল ভাইয়ের প্রতি। রিপোর্টার সোহানুর রহমান ভাই এবং জ্যাকিব  ভায়ের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই প্রতিবেদন না হলে আজও হয়তো আমি রিকশার প্যাডেলই ঘোরাতাম।

“ছেলের জীবনে এভাবে আলোর দ্বার খুলে যাবে, তা কখনো ভাবেননি জুলহাসের বৃদ্ধ বাবা-মা। অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের সাক্ষী তারা। সংবাদ প্রকাশের পর যখন একে একে সহায়তার হাত বাড়তে থাকে, তখন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তারা। ছেলের চাকরির খবর শুনে চোখ ভিজে ওঠে আনন্দে। তাঁরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি।

এই গল্প আবারও প্রমাণ করে, একটি সত্য ও মানবিক প্রতিবেদন কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শিক্ষার মূল্য, সংগ্রামের মর্যাদা এবং সাংবাদিকতার মানবিক শক্তির একটি বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকবে জুলহাস ব্যাপারীর জীবনের গল্প।