মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির চরম অবনতি অব্যাহত রয়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর হার। কোনোভাবেই যেন থামানো যাচ্ছেনা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালগুলোতে চলছে শয্যাসংকট। অনেক রোগীকে মেঝেতে-বারান্দায়, রাস্তায় বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চরম সংকট দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় শিরায় দেওয়া অপরিহার্য (আইভি) স্যালাইনের। এ ছাড়াও কয়েক গুন বেড়েছে রক্তের চাহিদা।
খবর নিয়ে জানাগেছে, জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি শিরায় দেওয়া স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতেও। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে রোগীর স্বজনদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ কবির সরদার বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। হাসপাতালে যে পরিমান স্যালাইন বরাদ্দ ছিল তা গত দুই তিন দিন আগে শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে রোগীদের জন্য দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও ফার্মেসীগুলোতেও চাহিদা মতো স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ওপসো স্যালাইন কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার অজয় চন্দ্র রায় বলেন, আসলে এটা সংকট না। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ার সাথে সাথে স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারনে চাপের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সাপ্লাই বেড়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন সাপ্লাই দেওয়ার।
ফরিদপুর জেলা ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের(ফারিয়া) সভাপতি মৃধা তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, গত প্রায় দুই মাস ধরে স্যালাইনের ব্যাপক সংকট ছিলো। টাকা হলেও স্যালাইন পাওয়া যেতো না। খুবই খারাপ পরিস্থিতি ছিল। তবে দুই একদিন ধরে কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও সংকট রয়েছে। মানুষের চাহিদা মতো স্যালাইন মিলছে না।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, হঠাৎ করে ডেঙ্গুর রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে স্যালাইন আছে। তবে রোগীর যে চাপ তাতে স্যালাইনও শেষের দিকে। এমন পরিস্থিতি থাকলে শীঘ্রই বেশি বরাদ্দ না পাওয়া গেলে সংকট তৈরি হবে। হাসপাতালের বাইরে ফার্মেসীতে স্যালাইন সংকট আছে কিনা জানানেই।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পুরোপুরি স্যালাইনের সংকট নেই। একটু সমস্যা হয়েছিল। একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে অতিরিক্ত স্যালাইন দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু হলেই যে সব রোগীর স্যালাইন প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। রোগী ও স্বজনরা মনে করেন ডেঙ্গু হলেই স্যালাইন লাগবে। যে কারনে তারা স্যালাইনের জন্য ছুটাছুটি করেন। আবার রোগীর চাপ ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারনেও স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে।