ঢাকা ১০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
শেখ হাসিনাকে সদলবলে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে নিউইয়র্কে হচ্ছে না ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক সালমান-আনিসুল হকের আবার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত আজকের নামাজের সময়সূচি ১৯ সেপ্টেম্বর আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা চাকরিতে বয়স বাড়ানোর দাবির চিঠিটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সাবেক তিন সিইসি’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইলন মাস্ক শিগগিরই বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার বা লাখ কোটিপতি হতে পারেন ভায়াডাক্ট দেবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ফরিদপুরে পদ্মায় নাব্যতা সংকটে লোকসানে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল

  • মাহবুব পিয়াল
  • Update Time : ১০:২৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ৪১৪ Time View

চলতি শুষ্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে আবারও নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে পণ্যবাহী জাহাজ কার্গো ও বড় ট্রলার চলাচল ব্যহত হচ্ছে। দূর দুরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। ফলে নৌবন্দরের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। অন্যদিকে এসব নৌযান হতে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে। সংশ্রিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযানগুলো নাব্যতা সংকটের কবলে পড়ে সি এন্ড বি ঘাটের বন্দরে আসতে বাধা প্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এদূরাবস্থা চরমে পৌছেছে। বর্তমানে নাব্যতা সংকট রক্ষায় কয়েকটি স্থানে বি আই ডব্লিউ টি এ ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ করছে।তবে খননের কয়েকদিনের মধ্যেই আবার বালু এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

দক্ষিন বঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়িক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূলর্ণ এ নৌবন্দরটি শতবছরের প্রাচীন বন্দর। ২০১৭ সালে সরকার এটিকে তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসাবে গেজেট প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সহ বিভিন্ন স্থান হতে নৌপথে এ বন্দরে পণ্য আনা নেওয়া করা হয়। ফরিদপুরের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট এ বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বহিঃবিশ্বে রপ্তানি হয়। এছাড়া সিলেট থেকে কয়লা ও বালু, ভারতের গরু ও চাল। চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মিরকাদিম থেকে এ নৌপথেই চাল আমদানি হয়। নারায়গঞ্জ বন্দর থেকে প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এ বন্দর হতে খালাস করা হয়। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা না থাকায় এবং অসংখ্য ডুব চর সৃষ্টি হওয়ায় এসব পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌবন্দরে ভিড়তে না পেরে অনেক দূরে দির্ঘীর চর, ভূঁইয়া বাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, বাইল্যা হাটা, হাজিগঞ্জের চর, চরভদ্রাসনের এমপি ডাঙ্গী ও গোপালপুর সহ বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভেড়ানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট হতে এমন একটি সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো: দুলাল হাওলাদার বলেন, চরভদ্রাসনে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে বারো হাজার বস্তা সিমেন্ট আটে। কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই বলে আট হাজার আনতে হয়েছে।তিনি বলেন এতে পণ্যের ভাড়াও কমে গেছে আমাদের। নৌবন্দরে ভিড়তে পাড়লে প্রতি বস্তা হতে ১৪ টাকা পেতাম। কিন্তু এখন এই ভাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি ট্রলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারনে আমাদের স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এছাড়া যানমালের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।

এমভি ছায়া নীড় নামে আরেকটি জাহাজের মাষ্টার মো: ফারুক বলেন, নাব্যতা না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ভেঙ্গে যায়। সুখান আটকে যায়। জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, অন্ততপক্ষে দশ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে কোথাও বা দুই/তিন হাতপানি রয়েছ।

ড্রিজিংয়ের পরেও কোনো নাব্যতা আসছে না।এর কারণ জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন বালু এসে ভরে যাচ্ছে। পানিতে প্রচুর পলি রয়েছে।

ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসের নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান লাকি ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো: আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় আট হাজার কুলি শ্রমিক এ নৌবন্দরে কাজ করেন। অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কমৃচারীরাও রয়েছেন। জাহাজ ও কার্গো না আসায় তারা কাজ পাচ্ছে না। তিনি জানান, বছরের পাঁচ মাসের মত সময় এখানে পানি কম থাকে বলে বন্দরে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়।

ফরিদপুরের সি এন্ড বিঘাট হতে শুল্ক আদায়কারী বি আই ডব্লিউ টি এর কর্মচারী মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভিড়তে না পাড়ায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। তিনি জানান, আগে ঘাটটি ইজারা দেওয়া হতো। তবে এখন সরাসরি বি আই ডব্লিউ টিও এখানে শুল্ক আদায় করছে।

এ ব্যাপারে বি আই ডব্লিউ টি এর সংশ্লিষ্ট পোর্ট অফিসার মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে এখনও পথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই এই সংকট কেটে যাবে।

Tag :
জনপ্রিয়

শেখ হাসিনাকে সদলবলে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে

ফরিদপুরে পদ্মায় নাব্যতা সংকটে লোকসানে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল

Update Time : ১০:২৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

চলতি শুষ্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে আবারও নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে পণ্যবাহী জাহাজ কার্গো ও বড় ট্রলার চলাচল ব্যহত হচ্ছে। দূর দুরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। ফলে নৌবন্দরের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। অন্যদিকে এসব নৌযান হতে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে। সংশ্রিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযানগুলো নাব্যতা সংকটের কবলে পড়ে সি এন্ড বি ঘাটের বন্দরে আসতে বাধা প্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এদূরাবস্থা চরমে পৌছেছে। বর্তমানে নাব্যতা সংকট রক্ষায় কয়েকটি স্থানে বি আই ডব্লিউ টি এ ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ করছে।তবে খননের কয়েকদিনের মধ্যেই আবার বালু এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

দক্ষিন বঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়িক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূলর্ণ এ নৌবন্দরটি শতবছরের প্রাচীন বন্দর। ২০১৭ সালে সরকার এটিকে তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসাবে গেজেট প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সহ বিভিন্ন স্থান হতে নৌপথে এ বন্দরে পণ্য আনা নেওয়া করা হয়। ফরিদপুরের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট এ বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বহিঃবিশ্বে রপ্তানি হয়। এছাড়া সিলেট থেকে কয়লা ও বালু, ভারতের গরু ও চাল। চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মিরকাদিম থেকে এ নৌপথেই চাল আমদানি হয়। নারায়গঞ্জ বন্দর থেকে প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এ বন্দর হতে খালাস করা হয়। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা না থাকায় এবং অসংখ্য ডুব চর সৃষ্টি হওয়ায় এসব পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌবন্দরে ভিড়তে না পেরে অনেক দূরে দির্ঘীর চর, ভূঁইয়া বাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, বাইল্যা হাটা, হাজিগঞ্জের চর, চরভদ্রাসনের এমপি ডাঙ্গী ও গোপালপুর সহ বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভেড়ানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট হতে এমন একটি সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো: দুলাল হাওলাদার বলেন, চরভদ্রাসনে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে বারো হাজার বস্তা সিমেন্ট আটে। কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই বলে আট হাজার আনতে হয়েছে।তিনি বলেন এতে পণ্যের ভাড়াও কমে গেছে আমাদের। নৌবন্দরে ভিড়তে পাড়লে প্রতি বস্তা হতে ১৪ টাকা পেতাম। কিন্তু এখন এই ভাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি ট্রলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারনে আমাদের স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এছাড়া যানমালের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।

এমভি ছায়া নীড় নামে আরেকটি জাহাজের মাষ্টার মো: ফারুক বলেন, নাব্যতা না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ভেঙ্গে যায়। সুখান আটকে যায়। জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, অন্ততপক্ষে দশ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে কোথাও বা দুই/তিন হাতপানি রয়েছ।

ড্রিজিংয়ের পরেও কোনো নাব্যতা আসছে না।এর কারণ জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন বালু এসে ভরে যাচ্ছে। পানিতে প্রচুর পলি রয়েছে।

ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসের নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান লাকি ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো: আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় আট হাজার কুলি শ্রমিক এ নৌবন্দরে কাজ করেন। অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কমৃচারীরাও রয়েছেন। জাহাজ ও কার্গো না আসায় তারা কাজ পাচ্ছে না। তিনি জানান, বছরের পাঁচ মাসের মত সময় এখানে পানি কম থাকে বলে বন্দরে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়।

ফরিদপুরের সি এন্ড বিঘাট হতে শুল্ক আদায়কারী বি আই ডব্লিউ টি এর কর্মচারী মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভিড়তে না পাড়ায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। তিনি জানান, আগে ঘাটটি ইজারা দেওয়া হতো। তবে এখন সরাসরি বি আই ডব্লিউ টিও এখানে শুল্ক আদায় করছে।

এ ব্যাপারে বি আই ডব্লিউ টি এর সংশ্লিষ্ট পোর্ট অফিসার মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে এখনও পথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই এই সংকট কেটে যাবে।