মাহবুব পিয়াল,প্রতিনিধি,ফরিদপুর : ২ বিঘা জমিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন মোঃ মফিজুর রহমান। প্রথম বছরেই আশানুরুপ ফলনে খরচ বাদে লাভ করেছেন ৮ লক্ষ টাকা। ১৫ ফিট লম্বা একটি আখ খেত থেকে বিক্রি করেছেন ৩৫ টাকায়।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামে লিজ নিয়ে ২ বিঘা জমিতে এই ফিলিপাইন জাতের কালো সুমিষ্ঠ নরম জাতের এই আখ চাষ করেছেন তিনি।
মোঃ মফিজুর রহমান বলেন,অনলাইনে প্রথমে আমি এই ফিলিপাইন জাতের আখ সম্পর্কে জানতে পারি পরে এর প্রতি আগ্রহ হলে চুয়াডাঙ্গা থেকে এক কৃষকের কাছ থেকে এই বীজ ফরিদপুর জেলায় আমিই একমাত্র এই ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করেছি। এরই মধ্যে জেলায় ব্যপক সারা ফেলেছে নরম আখ। এই আখের ফল আসতে ১০ থেকে ১১ মাস সময় লাগে।
তিনি বলেন, প্রথমে বিচতলা তৈরি করে আখের আটিং লাগিয়েছি। এরপর সাধারন নিয়মে পরিচর্যা করেছি। এক একটি গাছ ১২ থেক ১৫ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। আখ কে সোজা করে দাড় করিয়ে রাখতে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে দিতে হয়েছে। নাহলে এত লম্বা আখ দাড়িয়ে থাকতে পারেনা।
এক বিঘা জমিতে ২৮০০ কাটিংবা বীজ রোপন করে ছিলাম। একটি আখের কাটিং থেকে ৪ টি, কোন টায় ৫ টি আখ হয়েছে। এক একটি আখ সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজনের হয়। একটি আখ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কেজি রস বের হয়। রস অতি মিষ্টি।
একটি আখ খেত থেকেই পাইকারি দরে ৩৫ টাকা পিস বিক্রি করেছি। এক বিঘা জমিতে সাড়ে ১১ হাজার আখ হয়েছে। আমার এই আখ চাষে ১ লক্ষ ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। খরচ বাদেই আমার ৮ লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে। আমি এই আখ থেকেই এবার বীজ সংগ্রহ করে রাখবো। আগামীতে আমি আরো চাষ করবো। তখন আরো লাভ হবে মনে করি। সেই সাথে অনেকেই আমার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। এই আখ সারা বছরই চাষ করা যায়।
তিনি আরো বলেন, আমার আখের চাষের পাশাপাশি ১৮ পদের দেশী বিদেশী আমের বাগান রয়েছে। সাথে রয়েছে মালটা, কমলা লেবু, পেয়ারা, ড্রাগন, শরিফা, বারোমাসি তরমুজ ও পেঁপেঁ রয়েছে। আমি ১০৩ বিঘা জমিতে এই কৃষিখামার গড়ে তুলেছি।
ফিলিপাইন জাতের আখের বীজ কিনতে আসা মোঃ রন্টি শেখ বলেন, আমিও কৃষিকাজের সাথে জড়িত। আমার ২ বিঘা জমিতে কালো ধানের চাষ করেছিলাম। তাতে আমি সফল হয়েছি। আমি এখন ফিলিপাইনজাতের আখ চাষে আগ্রহী হয়েছে। এজন্য মফিজুর ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ ও বীজ সংগ্রহ করতে এসেছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ফিলিপাইন জাতের কালো নরম ও মিষ্ট আখ ফরিদপুরে একদমই নতুন এইটি আখের জাত। আমরা দুই বছর আগে এর একটি প্রদর্শণী করে ছিলাম। এই আখচাষ খুবই লাভজনক। তবে বছর ব্যাপী ফল হওয়ায় এ চাষে কৃষকরা আগ্রহী কম। এই আখ রোপনের শুরু দিকে একটি ফসল ফলানো যায়। শুরুর দিকে ডাল জাতীয় ফসল ফলানো যায়, সরিষাও করা যায় আবার ফুল কফি ও বাধাকফিও চাষ করা যায়।
তিনি বলেন, আমরা এ অঞ্চলের আখচাষীদের এই জাতটি লাভজনক হওয়ায় তাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে কাজ করছি। ফরিদপুর সদরের হাটগোবিন্দ গ্রামে কৃষক মোফিজুর রহমান ২ বিঘা জমিতে এই ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করেছেন। তিনি ফলন খুব ভাল পেয়েছেন। আমাদের পক্ষ হতে তার খেতে সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।