দেশের খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা এবার যিশু খ্রিস্টের জন্মতিথি পালন করছেন করোনাভাইরাস মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশেষ প্রার্থনায়।
বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নিতে শুক্রবার সকাল থেকেই শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে ফরিদপুরের গির্জাগুলোতে সমবেত হতে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ।
মহামারী পরিস্থিতিতে এবছর বড়দিনের আয়োজনে সেই আড়ম্বর ছিল না। মুখে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় আচার পালন করেছেন সবাই।
বরাবরের মতই যিশুর জন্মমুহূর্তের স্মরণে বানানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। ক্রিসমাস ট্রি থেকে ঝুলছে আলোর মালা। তবে নেই আগের মত ঝাঁকজমক।
সকাল সাড়ে ৮টায় গির্জার ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলে শুরু হয় সাম সংগীত। এরপর জোহান সমাচার পাঠ, সার্বজনীন প্রার্থনা ও অর্ঘ্য বিতরণের চিরাচরিত আনুষ্ঠানিকতা চলে।
মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করেন যিশু ভক্তরা। এ বছর করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বিশ্বের পরিত্রাণ চেয়ে বিশেষ প্রার্থনা করেন তারা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক যিশু খ্রিস্টের জন্মকাহিনি বড়দিনের উৎসবের মূলভিত্তি। ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেম শহরে কোনো এক গোশালায় কুমারী মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নেন যিশু।
প্রথা অনুযায়ী বড়দিনের আগের রাতে বিভিন্ন গির্জা ও উপাসনালয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ধর্মীয় আচারের আনুষ্ঠানিকতা। রাত ১২টা এক মিনিটে কেক কেটে উদযাপন করা হয় যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন।
বড়দিনকে কেন্দ্র করে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে নানা আয়োজন করেন। সকালে প্রার্থনা শেষে সারা দিন আনন্দ-উৎসব ও আমেজের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেন তারা। তবে এবার অনেক কিছুই হবে ‘সীমিত পরিসরে’।
প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে ফরিদপুরের গির্জাগুলো ছোট বড় নানা বয়সীর মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। এবছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ততটা ভিড় না থাকলেও অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে গির্জায় এসেছেন।
ফরিদপুর ইস্টাণ ব্যাংক এর কর্মকর্তা জনাব খন্দকার সাইফুর রহমান সজিব তাঁর মেয়ে খন্দকার সারিয়াকে নিয়ে ফরিদপুর ব্যাপিস্টচার্চে ঘুরতে এসেছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে জনান প্রতি বছরই আমার এখানে বড় দিনের উৎসবে আসা হয় আলোকসজ্জা দেখতে। কিন্তু করোনার কারনে এ বছর উৎসবের ব্যপকতা কম।
গত ৩৪ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চার্চে এসে বড়দিনের প্রার্থনা সারেন সুপ্রিয়া গোমেজ। এবছর স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পরিবারের অন্য কেউ না এলেও তিনি একাই এসেছেন, প্রার্থনা করেছেন মানুষের ‘মঙ্গলের জন্য’।
“অনেক মানুষের সাথে এখানে বড়দিনের প্রার্থনা করতাম। এটা আমাদের একটা বড় মিলন মেলাও বটে। এখানে অনেক মানুষের সমাগম হত, অনেকে সাথে পরিচয় হত। তারা আজ অনেকে নেই। হয়ত করোনায় অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। যাই হোক, যে যেখানে থাকুক, সবার মঙ্গল হোক।”
এই উৎসবের দিনেও অনেকের হৃদয়জুড়ে স্বজন হারানোর বেদনা।
গির্জাগুলোতে বড়দিন উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তার কোন হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ প্রশাসন।গির্জার গেটে ইউনিফর্ম পুলিশ আছে। । প্রতিটি গির্জার আশেপাশে পুলিশের সাদা পোশাকে লোকজন নিয়োজিত থাকবে এছাড়া অনান্য সদস্যরাও নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সড়কে পেট্রোলিং টিম থাকবে।
বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা যায় না। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ ধরা হয়।