মাহবুব পিয়াল,ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকস্থানে ক্ষেতের পরিপক্ক পেঁয়াজ ও পেঁকে ওঠা পেঁয়াজ বীজ দানার ক্ষেত মাটির সাথে মিশে গেছে। অনেক জমিতে পানি উঠে ফসল তলিয়ে গেছে।
গত বুধবার(২৯মার্চ) সন্ধ্যায় এই শিলাবৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরের নগরকান্দা, সালথা, ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও মধুখালী উপজেলায়। এসবস্থানে মাত্রাতিরিক্ত শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতগুলো শিলাবৃষ্টিতে ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেছে। জেলার সালথা ও নগরকান্দায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। প্রায় এক তৃতিয়াংশ পেঁয়াজ বীজ ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিলাবৃষ্টিতে সালথা ও নগরকান্দায় পেঁয়াজ ক্ষেতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকেরা জানান, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম চলছে এখন। কেউ পেঁয়াজ ঘরে তুলেছেন, কেউ পেঁয়াজ তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বুধবারের শিলাবৃষ্টিতে ফসলের মাঠের বেশিরভাগ নিচু জমির পেঁয়াজ তলিয়ে গেছে। আর উঁচু জমির পেঁয়াজ শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা পেঁয়াজ ক্ষেতের ভিতরে আগাম পাটের বীজ বপণ করেছেন, তাদের আরো বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকেরা হতাশা আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কেউ কেউ শ্রমিকদের নিয়ে কাঁদা-পানিতে নেমে পেঁয়াজ তুলছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বাইলাগট্টি গ্রামের কৃষক সবুর খান বলেন, চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এরমধ্যে শিলা বৃষ্টিতে তিন বিঘা জমির পেঁয়াজই তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া এসব পেঁয়াজ ঘরে মজুদ রাখা সম্ভব না। ঘরে রাখলে সব পঁচে যাবে।
মনসুর মাতুব্বর নামে আরেকজন কৃষক বলেন, গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লাকসান হয়েছিল। তারপরও এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ফলন তেমন ভাল হয়নি। দুই একদিনের মধ্যে ক্ষেতের পেঁয়াজ তুলতে চেয়েছিলাম। তার আগেই শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
পুরুরা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী শাহ আলম বলেন, আমরা এখন বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ চাষ করি। আমরা তো আর চাকুরীজীবি না যে মাস শেষে বেতন পাব। তিনি বলেন, অনেকেই ব্যাংক থেকে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে শুধু পেঁয়াজ উঠিয়ে টাকা পরিশোধ করত পারবে এই ভরসায়।
সালথা উপজলা কষি কর্মকর্তা কষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, এ উপজেলায় এবার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ দানা আবাদ হয়েছে। গতকালের শিলাবৃষ্টিতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে এসব পেঁয়াজ দানার। কিছু নিচু জমির পেঁয়াজ তলিয়ে গেলেও পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। আবহাওয়া এমন থাকলে কিংবা আর বৃষ্টি না হলে তলিয় যাওয়া পেঁয়াজের বেশি ক্ষতি হবে না। তবে এসব পেঁয়াজ বেশিদিন ঘরে রাখা যাবে না।
নগরকান্দা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজের দানা, ২৮০ হেক্টর জমির হালি পিঁয়াজ, ৫ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমের গুটির কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আম চাষীদের আমের গুটিতে ছত্রাক নাষক দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। তাতে আমের ক্ষতি অনেকটা কমে আসবে। তিনি জানান, পাট এবং ধানের ক্ষেতে তেমন ক্ষতি হয়নি বরং বৃষ্টির পানি ধান ও পাটের জন্য সহায়ক হবে।