মাহবুব পিয়াল, ফরিদপুর প্রতিনিধি : কাঁচা মরিচ উৎপাদনে দেশের মধ্যে অগ্রনী জেলা ফরিদপুর। এ জেলার মধুখালী উপজেলার মাঠের উচু জমিতে প্রতি বছর আবাদ করা হয় কাঁচা মরিচের। বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণে যখন কাঁচা মরিচের সংকট দেখা দেয়, সেই সংকটকালীন সময়ে এখানকার চাষীদের উৎপাদিত মরিচ দেশের নিয়মিত চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে থাকে। এবছর মৌসুমের শুরুতে মরিচ চাষাবাদের অনুপােযুক্ত আবহাওয়ার কারণে চাষীরা উৎপাদন বিপর্যয়ের শংকা করছেন। জমিতে গাছ থাকলেও, গাছে আশানুরূপ মরিচ না থাকায় মৌসুমের শুরুতে বাজারে সরবরাহ কম রয়েছে, ফলে বেড়ে গেছে মূল্য।
মধুখালী উপজেলা সদরের কাঁচা মরিচের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র হাতে গােনা কয়েকজন কৃষক মরিচ নিয়ে এসেছেন। মরিচ বিক্রি করতে আসা উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে প্রচন্ড খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে মরিচ গাছ বাড়তে পারনি খরায় অনেক জমির মরিচ গাছ পুড়ে গেছে।
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোঃ শামিম শেখ বলেন, বিগত বছরে যে জমি থেকে ১০ থেকে ১২ মন মরিচ তােলা হয়েছে এবার সেই জমি থেকে আধা মন মরিচও তােলা যাচ্ছে না। ফলে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা মন দরে মরিচ বিক্রি করেও খুশী হতে পারছেন না কৃষকরা।
উপজেলার মেকচামী ইউনিয়নের বামুন্দি গ্রামের মরিচ চাষি উত্তম রায় বলেন, একদিকে সার ঔষুধের অতিরিক্ত দাম, পাশাপাশি কয়েকবার অতিরিক্ত সেচ দেয়ায় মরিচের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ভালো ফলন না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ আরাে কয়েকগুন বেড়ে গেছে। ফলে বেশি দাম পেলেও পোষানো যাচ্ছে না।
উপজেলার মরিচ উৎপাদনকারি মাঠ হিসেবে পরিচিত বৈকুন্ঠপুর, রামদিয়া,ঘােষকান্দী,বামুন্দী, গাজনাসহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, জমিতে মরিচের গাছ থাকলেও গাছে নেই মরিচ। এছাড়া খরায় মরিচ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকে ক্ষতির পরিচর্যা না করায় আবর্জনায় ভরে গেছে খেত। তবে যারা কিছুটা পরিচর্যা করে রেখেছেন সেই সব জমির মরিচ গাছে নতুন করে ফুল আসত শুরু করেছে।
ঘােষকান্দী গ্রামের মরিচ চাষি আজিজার মোল্লা বলেন, গত কয়েক দিনে বৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে সাঁজ (ফুল) এসেছে। এতে কিছুটা হলেও আশায় বুক বাঁধছেন মরিচ চাষীরা এই সাঁজ (ফুল) থেকে মরিচ তােলা গেলে ক্ষতি থেকে বাঁচবেন তারা।
আরেক মরিচ চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, ফলন ভালাে হলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা মূল্য প্রতি মন মরিচ বিক্রি করা গেলেও চাষীরা লাভবান হবেন। কিন্তু গাছে মরিচ না থাকলে মূল্য বাড়লেও তাদের লাভবান হওয়ার সুযােগ থাকবে না।
এ ব্যাপারে মধুখালীর মরিচ বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী মোঃ আলম শেখ বলেন, বাজারে মরিচের আমদানী বেশী হলে কম লাভে কেনা-বেচা করতে পারলেও তারা লাভবান হন কিন্তু অতিমূল্যে মরিচ ক্রয় করে লােকসানের শংকায় থাকেন তারা। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমান মরিচ কিনতে না পারায় শ্রমিক ও পরিবহন ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে।
মধুখালী পৌর সদরের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, মধুখালীর বাজারে প্রতিদিনই মূল্য ওঠানামা করছে। প্রতি মন মরিচ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে মূল্য ওঠা নামা করছে। গত বছর এই সময়ে বিপুল পরিমান মরিচ বাজারে চলে আসে, কিন্তু এবছর সরবরাহ কম থাকায় মরিচের দাম অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে।
ওই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী সুমন খন্দকার বলেন, মধুখালী আড়ত থেকে আষাঢ় শ্রাবন মাসের উৎপাদিত এই মরিচ ঢাকা,চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব ইলাহী জানান, এবার চাষের শুরু থেকে তীব্র খরার কারণে মরিচ খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, সময় মতাে গাছে ফলন আসনি, এতে বাজারে পর্যাপ্ত মরিচ সরবরাহ হচ্ছে না। তবে গত কয়েকদিনে বৃষ্টির পর বর্তমান কৃষকের জমিতে মরিচ গাছে সাঁজ(ফুল) এসেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমান মরিচ বাজার আসবে বলে আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বোচ্চ মরিচ উৎপাদনকারী উপজেলার মধ্যে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় এবছর ২ হাজার সাতশো ২০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন মরিচের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ২০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হবে। ফলশ্রুতিতে মূল্যও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।