ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম সাইবার নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল করা হবে: আইন উপদেষ্টা ফরিদপুরে শারদীয় দূর্গা উৎসব নিয়ে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাতবারের সাবেক সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ফের ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন লিওনেল মেসির জাদুতে এবারের সাপোর্টার্স শিল্ড জিতে নিল ইন্টার মায়ামি আজকের নামাজের সময়সূচি ৩রা অক্টোবর আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা হিজবুল্লাহর হামলায় ৪ ইসরাইলি সেনা নিহত ফরিদপুরে সীরতুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ

ফরিদপুরে ১ লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন পাচ্ছে ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই দেশে আসছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। এখন চলছে ভ্যাকসিন প্রয়োগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে সংক্রমণের হার ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় সারাদেশের কোন কোন জেলায় কত সংখ্যক ভ্যাকসিন যাবে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। আগে ২৫ লাখের কথা বলা হলেও এখন ৫০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই প্রথম ধাপে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে। তবে ঢাকা জেলার জন্য রাখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় বরাদ্দ রয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ। সবচেয়ে কম বরাদ্দ বান্দরবান জেলায়। জেলাটিতে ৪০ হাজার ৪৩৯ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে, রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে, খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে, সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার জনকে এবং বরিশাল বিভাগে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তিন রাউন্ডে এ জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন।

জেলা পর্যায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ জন, ফরিদপুরে এক লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন, গাজীপুরে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ জন, গোপালগঞ্জে এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন, জামালপুরে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৮ জন, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ তিন হাজার ২৩২ জন, মাদারীপুরে এক লাখ ২১ হাজার ৪১৬ জন, মানিকগঞ্জে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৬ জন, মুন্সীগঞ্জে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৪৪ জন, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ সাত হাজার ১৩ জন, নরসিংদীতে দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ জন, নেত্রকোনায় দুই লাখ ৩২ হাজার ১৮৪ জন, রাজবাড়ীতে এক লাখ নয় হাজার ৩১৯ জন, শরীয়তপুরে এক লাখ ২০ হাজার ৩৬২ জন, টাঙ্গাইলে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৪১৬ জন।

বান্দরবানে ৪০ হাজার ৪৩৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ জন, চাঁদপুরে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৯২ জন, চট্টগ্রামে সাত লাখ ৯৩ হাজার ১২৯ জন, কুমিল্লায় পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ছয়জন, কক্সবাজারে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ জন, খাগড়াছড়িতে ৬৩ হাজার ৯৩০ জন, লক্ষ্মীপুরে এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯ জন, নোয়াখালীতে তিন লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৬২ হাজার ৬২ জন।

ভোলায় টিকা পাবেন এক লাখ ৮৫ হাজার ২৭ জন, ঝালকাঠিতে ৭১ হাজার ৯০ জন, পটুয়াখালীতে এক লাখ ৫৯ হাজার জন, পিরোজপুরে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২৯ জন, বরগুনায় ৯২ হাজার ৯৭০ জন, বরিশালে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ জন।

বাগেরহাটে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭০ জন, যশোরে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৬ জন, ঝিনাইদহে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ জন, খুলনায় দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৪০ জন, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ দুই হাজার ৭৩৪ জন, মাগুরায় ৯৫ হাজার ৬৪০ জন, মেহেরপুরে ৬৮ হাজার ২৪৯ জন, নড়াইলে ৭৫ হাজার ১৫১ জন, সাতক্ষীরায় দুই লাখ ছয় হাজার ৮০৮ জন।

বগুড়ায় তিন লাখ ৫৪ হাজার ১৫০ জন, জয়পুরহাটে ৯৫ হাজার ১৫৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ৫৬৫ জন, নওগাঁয় দুই লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন, নাটোরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৭২৫ জন, পাবনায় দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৫১ জন, রাজশাহীতে দুই লাখ ৭০ হাজার ২৫১ জন, সিরাজগঞ্জে তিন লাখ ২২ হাজার ৫৫৭ জন।
রংপুরে তিন লাখ ২২ জন, দিনাজপুরে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন, কুড়িগ্রামে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৮৪ জন, লালমনিরহাটে এক লাখ ৩০ হাজার ৮০৪ জন, গাইবান্ধায় দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৪ জন, নীলফামারীতে এক লাখ ৯১ হাজার আটজন, পঞ্চগড়ে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ জন।

এছাড়া হবিগঞ্জে দুই লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ জন, মৌলভীবাজারে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৪২ জন, সুনামগঞ্জে দুই লাখ ৫৭ হাজার দুজন, সিলেটে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ জন।
দেশের ৬৪ জেলার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ সহায়িকার চূড়ান্ত খসড়া করা হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও বাজেট চূড়ান্ত, নির্দেশিকা তৈরি শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এগুলো সব জেলাপর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আগামী ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি দুদিন ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে জেলাপর্যায়ের কর্মকর্তাদের (ডেপুটি সিভিল সার্জন, ইউএইচএফপিও) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হবে ২০-২৪ জানুয়ারি এবং টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলবে ২৩-২৬ জানুয়ারি। বিভিন্ন পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবকদের ওরিয়েনটেশন হবে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি। টিকা আসার পর দুদিন তা বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে থাকবে। টঙ্গিতে বেক্সিমকোর দুটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। প্রথমে যে ৫০ লাখ টিকা আসবে তার পুরোটাই দিয়ে দেওয়া হবে। আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় চালান আসলে সেই ৫০ লাখ ডোজও পুরো দিয়ে দেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা/সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এসব জায়গায় প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে সাত হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দুজন সরাসরি ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্যান্য কাজ করবেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের পর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে পরবর্তীতে করণীয় শীর্ষক একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে ঔষধ প্রশাসন। গাইডলাইনটি বুধবার অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, যেকোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে বিষয়টি দেখাশোনার জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন যে এটা কি ভ্যাকসিনের কারণে হলো, না অন্যকোনো কারণে।

টিকা নিলে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে স্থানে টিকা দেওয়া হবে সেই স্থানে ব্যথা হতে পারে। হালকা জ্বর আসতে পারে। মাথাব্যথা করতে পারে। এছাড়া স্বল্প পরিমাণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, শুধু টিকা নয়, যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আমার মনে হয় খুবই কম মানুষের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা থাকবে। আমাদের মোবাইল টিম থাকবে, টিকাদান কেন্দ্রে বেসিক ও ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য ব্যবস্থা থাকবে।

সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য উপজেলা কেন্দ্রে যত দূর সম্ভব ব্যবস্থা রাখা হবে। এর ব্যাকআপ হিসেবে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে কমিটি থাকবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড ভ্যাকসিন বিতরণ কর্মসূচির সদস্য ও এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ-এর লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রত্যেক মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। এ মাসেই যার প্রথম চালান আসছে।

Tag :
জনপ্রিয়

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম

ফরিদপুরে ১ লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন পাচ্ছে ভ্যাকসিন

Update Time : ০৪:০১:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই দেশে আসছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। এখন চলছে ভ্যাকসিন প্রয়োগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এরই মধ্যে সংক্রমণের হার ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় সারাদেশের কোন কোন জেলায় কত সংখ্যক ভ্যাকসিন যাবে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। আগে ২৫ লাখের কথা বলা হলেও এখন ৫০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই প্রথম ধাপে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে। তবে ঢাকা জেলার জন্য রাখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় বরাদ্দ রয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ। সবচেয়ে কম বরাদ্দ বান্দরবান জেলায়। জেলাটিতে ৪০ হাজার ৪৩৯ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে, রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে, খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে, সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার জনকে এবং বরিশাল বিভাগে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তিন রাউন্ডে এ জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন।

জেলা পর্যায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ জন, ফরিদপুরে এক লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন, গাজীপুরে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ জন, গোপালগঞ্জে এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন, জামালপুরে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৮ জন, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ তিন হাজার ২৩২ জন, মাদারীপুরে এক লাখ ২১ হাজার ৪১৬ জন, মানিকগঞ্জে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৬ জন, মুন্সীগঞ্জে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৪৪ জন, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ সাত হাজার ১৩ জন, নরসিংদীতে দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ জন, নেত্রকোনায় দুই লাখ ৩২ হাজার ১৮৪ জন, রাজবাড়ীতে এক লাখ নয় হাজার ৩১৯ জন, শরীয়তপুরে এক লাখ ২০ হাজার ৩৬২ জন, টাঙ্গাইলে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৪১৬ জন।

বান্দরবানে ৪০ হাজার ৪৩৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ জন, চাঁদপুরে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৯২ জন, চট্টগ্রামে সাত লাখ ৯৩ হাজার ১২৯ জন, কুমিল্লায় পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ছয়জন, কক্সবাজারে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ জন, খাগড়াছড়িতে ৬৩ হাজার ৯৩০ জন, লক্ষ্মীপুরে এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯ জন, নোয়াখালীতে তিন লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৬২ হাজার ৬২ জন।

ভোলায় টিকা পাবেন এক লাখ ৮৫ হাজার ২৭ জন, ঝালকাঠিতে ৭১ হাজার ৯০ জন, পটুয়াখালীতে এক লাখ ৫৯ হাজার জন, পিরোজপুরে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২৯ জন, বরগুনায় ৯২ হাজার ৯৭০ জন, বরিশালে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ জন।

বাগেরহাটে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭০ জন, যশোরে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৬ জন, ঝিনাইদহে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ জন, খুলনায় দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৪০ জন, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ দুই হাজার ৭৩৪ জন, মাগুরায় ৯৫ হাজার ৬৪০ জন, মেহেরপুরে ৬৮ হাজার ২৪৯ জন, নড়াইলে ৭৫ হাজার ১৫১ জন, সাতক্ষীরায় দুই লাখ ছয় হাজার ৮০৮ জন।

বগুড়ায় তিন লাখ ৫৪ হাজার ১৫০ জন, জয়পুরহাটে ৯৫ হাজার ১৫৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ৫৬৫ জন, নওগাঁয় দুই লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন, নাটোরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৭২৫ জন, পাবনায় দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৫১ জন, রাজশাহীতে দুই লাখ ৭০ হাজার ২৫১ জন, সিরাজগঞ্জে তিন লাখ ২২ হাজার ৫৫৭ জন।
রংপুরে তিন লাখ ২২ জন, দিনাজপুরে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন, কুড়িগ্রামে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৮৪ জন, লালমনিরহাটে এক লাখ ৩০ হাজার ৮০৪ জন, গাইবান্ধায় দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৪ জন, নীলফামারীতে এক লাখ ৯১ হাজার আটজন, পঞ্চগড়ে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ জন।

এছাড়া হবিগঞ্জে দুই লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ জন, মৌলভীবাজারে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৪২ জন, সুনামগঞ্জে দুই লাখ ৫৭ হাজার দুজন, সিলেটে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ জন।
দেশের ৬৪ জেলার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ সহায়িকার চূড়ান্ত খসড়া করা হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও বাজেট চূড়ান্ত, নির্দেশিকা তৈরি শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এগুলো সব জেলাপর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আগামী ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি দুদিন ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে জেলাপর্যায়ের কর্মকর্তাদের (ডেপুটি সিভিল সার্জন, ইউএইচএফপিও) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হবে ২০-২৪ জানুয়ারি এবং টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলবে ২৩-২৬ জানুয়ারি। বিভিন্ন পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবকদের ওরিয়েনটেশন হবে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি। টিকা আসার পর দুদিন তা বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে থাকবে। টঙ্গিতে বেক্সিমকোর দুটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। প্রথমে যে ৫০ লাখ টিকা আসবে তার পুরোটাই দিয়ে দেওয়া হবে। আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় চালান আসলে সেই ৫০ লাখ ডোজও পুরো দিয়ে দেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা/সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এসব জায়গায় প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে সাত হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দুজন সরাসরি ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্যান্য কাজ করবেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের পর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে পরবর্তীতে করণীয় শীর্ষক একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে ঔষধ প্রশাসন। গাইডলাইনটি বুধবার অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, যেকোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে বিষয়টি দেখাশোনার জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন যে এটা কি ভ্যাকসিনের কারণে হলো, না অন্যকোনো কারণে।

টিকা নিলে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে স্থানে টিকা দেওয়া হবে সেই স্থানে ব্যথা হতে পারে। হালকা জ্বর আসতে পারে। মাথাব্যথা করতে পারে। এছাড়া স্বল্প পরিমাণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, শুধু টিকা নয়, যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আমার মনে হয় খুবই কম মানুষের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা থাকবে। আমাদের মোবাইল টিম থাকবে, টিকাদান কেন্দ্রে বেসিক ও ওষুধ লাগলে ইমিডিয়েটলি ম্যানেজ করার জন্য ব্যবস্থা থাকবে।

সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য উপজেলা কেন্দ্রে যত দূর সম্ভব ব্যবস্থা রাখা হবে। এর ব্যাকআপ হিসেবে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে কমিটি থাকবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড ভ্যাকসিন বিতরণ কর্মসূচির সদস্য ও এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ-এর লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রত্যেক মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। এ মাসেই যার প্রথম চালান আসছে।