সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ হেমন্তকাল, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
সারা দেশে পাঁচ শতাধিক থানার ওসি বদলি হচ্ছেন নভেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে : বাংলাদেশ ব্যাংক ভোক্তাপর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজি দাম আবারো বেড়েছে প্রোটিয়াদের হারিয়ে টাইগ্রেসদের ইতিহাস চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের গ্রেফতারের নির্দেশ ইসির এক দিনে ৭শ’ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিল ইসরায়েল আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র না তুললে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে — আব্দুর রহমান বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাইকোর্টে মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন পাকিস্তানে বন্দুকধারীদের হামলায় দুজন সেনা সদস্যসহ ৮ বাসযাত্রী নিহত

ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের প্রকাশ্যে গণশুনানী : মাথা গোজার ঠাই পায় প্রতিবন্ধী তারা শেখ

মাহবুব পিয়াল
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩৫২ Time View

একজন সন্তান রোজগার যোগ্য। কিন্তু সংসারের ঘানি টানতে রাজি নয়, তাই বউ নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছে। অন্যজন ছোট। এখনো উপার্জনের যোগ্য হয়ে উঠেনি। সেই ছোট ছেলে, ঘরের অসুস্থ বউ নিয়েই খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছিল প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখের। হামাগুড়ি দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য কুড়িয়ে কোন রকমে সংসার চললেও মাথা গোজার ঠাই নেই বললেই চলে প্রতিবন্ধ্বী তারার। নিজের এখন্ড জমি আছে। কিন্তু ঘর তোলার সাধ্য নেই। সাহায্যের জন্য সেদিন বাজারের এক দোকানীর কাছে গেলে সে তাকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারের ঠিকানা দেয়। আরও বলে দেয় বুধবার সকাল ১০ টায় ডিসি অফিসে গেলে তার একটা ব্যবস্থা হতে পারে।

 

দোকানীর থেকে ঠিকানা নিয়ে সকাল ৮ টার আগেই ডিসি অফিসে চলে আসে প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখ। আসার আগে খেয়ে আসতে পারেনি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পেটের মধ্যে যেন মোচড় দিয়ে উঠছিল। বসে ছিল জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের সামনে খোলা জায়গায়। অনেক চেয়ার ছিল বসার জন্য। কিন্তু পা না থাকায় সেখানে সে উঠতেই পারেনি। তাই বলে মনে তার কোন দুঃখ নেই। সারা দিনের বেশির ভাগ সময়ই হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়। এসবই ভাবছিল সে। এরই মধ্যে ‘এই নেন বিস্কুট’বাক্যটা শুনে উপরে তাকায়। দেখে একজন তাকে বিস্কুট দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখে শুধু তাকে নয়, অপেক্ষমান সবাইকে বিস্কুট দিচ্ছে। কে বিস্কুট দিল জানতে চায় প্রদানকারীর কাছে। প্রদানকারী বলেন, ডিসি স্যার এখানে যারা আসছে সবাইকে বিস্কুট দিতে বলেছেন। বিস্কুট হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করে। ‘আল্লাহ ডিসিকে হায়াত বাড়িয়ে দাও।’ বিস্কিুটের প্যাকেট হাতে পেয়ে ক্ষুধা নিবারণের চেয়ে অন্য একটা আনন্দ তার চোখে মুখে ঝিলিক মারে। ‘ডিসি সাব মনে হয় ভাল মানুষ। তাইলে তো আমি ঘর পামু………।’

বেলা ১০ টায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার আসলেন। একে একে সবার কথা শুনতে লাগলেন। একেক জনের একেক সমস্যা। ডিসি সাব শুনছেন। প্রত্যেককে সমাধান দিচ্ছেন। এবার তারা শেখের পালা। চোখ দিয়ে পানি বেরুলেও মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। কাদছিলেন তারা শেখ। এখানে আসার আগে দোকানীর পরামর্শে একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছিলেন। সেটা হাত বাড়িয়ে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারে হাতে দিলেন। জেলা প্রশাসক অতুল সরকার মনোযোগ দিয়ে দরখাস্ত পড়লেন। কি যেন লিখলেন। এবার বললেন, আপনার ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে আপনাকে একটি ঘর দেব। আপনার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখে দিচ্ছি।

এতুটুকুতেই খুশি প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখ। চলে আসবেন। হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছিলেন। আবার ডাকলেন জেলা প্রশাসক। বললেন, ঐ পাশে গিয়ে বসেন। একটু অপেক্ষা করুন। বসলেন। কিছুক্ষণ পর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাকে নগদ ১ (এক) হাজার টাকা দেয়া হল।

আকাশ থেকে পড়লেন প্রতিবন্ধী তারা শেখ। ‘ক্ষুধার্থ ছিলাম, খাবার পেলাম। ঠাইহীন ছিলাম, ঠাইও পেলাম। আবার টাকাও পেলাম, তাও আবার এক হাজার! আনন্দে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে করতে হামাগুড়ি দিয়ে নিজ কাজের দিকে এগুতে লাগলেন প্রতিবন্ধী তারা শেখ।

প্রকাশ্যে গণশুনানীর আয়োজনের মাধ্যমে শুধু প্রতিবন্ধী তারা শেখই নয় বদলে যাচ্ছে হাজারো মানুষের জীবন। গড়ে উঠছে সম্ভাবনা। পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের। সমাধান হচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সমস্যার।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রোকসানা রহমান জানান, গতানুগতিকতা পরিহার করে জেলা প্রশাসক প্রকাশ্যে গণশুনানি করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী নিজ কার্যালয়ের দোতলায় খোলা জায়গায় প্রতি বুধবার গনশুনানি হয়।

এভাবেই প্রতি নিয়ত জনসেবায় মগ্ন থেকে আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠছেন তিনি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার হয়ে উঠছেন মানবিক জেলা প্রশাসক। সততা ও নিষ্ঠাবান প্রশাসক হিসেবে মানুষের ভালবাসার জায়গায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত এক বছরে গণশুনানীতে প্রায় ৫ হাজার জন সেবা প্রত্যাশী জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মূলতঃ জমির একসনা বন্দোবস্ত প্রাপ্তি, আইনগত সহায়তা, আর্থিক সাহায্য, টিআর, জিআর, সরকারি ঢেউটিন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তি, বিধবা ভাতা প্রাপ্তি, বাল্য বিবাহ রোধ, জমিজমা বিরোধ সংক্রান্ত, ঘর মেরামত, পড়ালেখার খরচ চালানো, শীতের পোষাক প্রাপ্তি, ধর্মীয় কার্যাদিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেলার নাগরিকগণ জেলা প্রশাসককে জানান। জেলা প্রশাসক সেসব সমাধান করে থাকেন।

সাধারণত প্রতিদিনই জেলা প্রশাসক জনসাধারণের কথা শুনে থাকেন। তবে বিশেষভাবে প্রতি বুধবার দীর্ঘ সময় নিয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

 

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102