আজ ১০ই ডিসেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১১ বছর পর ফরিদপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট গ্রহণ মোটামুটি শান্তিপ্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহন চলে। সকল কেন্দ্রে ইভিএম( ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহন করা হয়। আজকের নির্বাচনে রাত সাড়ে নয়টায় ৬৭ টি কেন্দ্রের ফল বিবেচনায় বেসরকারীভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের অমিতাভ বোসকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।তিনি পেয়েছেন ৫৬,৮৯২ ভোট।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী নায়াব ইউসুফ ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৭,৩৩০ ভোট। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত প্রার্থী হাফেজ আব্দুছ ছালাম হাত পাখা মার্কা নিয়ে পেয়েছেন ৬,১৬৬ ভোট এবং বর্তমান মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু নারিকেল গাছ প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র পার্থী (নির্বাচন থেকে প্রর্থীতা প্রত্যাহার করেন) নিয়ে পেয়েছেন ৮৯৬ ভোট। সর্বমোট ৬৭ কেন্দ্রে মোট ৯১,২৮৪ জন ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেন। বর্ধিত পৌরসভার ২৭টি ওয়াড মিলে মোট ভোটার ছিলেন ১,৪৮,২৯৭ জন।মোট প্রয়োগ করা হয়েছে ৬১.৬৭%।
প্রধান বিরোধী প্রার্থী নায়াব ইউসুফ ভোট কারচুপির আর অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। আজ সন্ধ্যায় কমলাপুরস্থ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। নায়াব ইউসুফ বলেন ভোটের দিন সকাল থেকেই তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছিল। অনেক স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারপিট করা হয়।
নবনির্বাচিত মেয়র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের অমিতাভ বোস জানিয়েছেন ভোট খুব সুন্দর এবং সুষ্ঠ হয়েছেন। তিনি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। তিনি জানান ফরিদপুর পৌরসভার উন্নয়নের জন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে কাজ করতে চান এবং তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চান।
জানা গেছে এবছর পৌরসভায় চারজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অমিতাভ বোস, বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী চৌধুরী নায়বা ইউসুফ আহমেদ, এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী হাফেজ আব্দুস সালাম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া বর্তমান মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু নারিকল গাছ প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র পার্থী (নির্বাচন থেকে প্রর্থীতা প্রত্যাহার করেন) ।
ছাড়া পুরুষ ও মহিলা মিলে ১৫৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৮, মোট ওয়ার্ড ২৭ । নির্বাচন সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়া এবছর ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে হবে বলে ভোটারদের মধ্যে অন্যরকম উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
অন্যদিকে, মধুখালী পৌর নির্বাচনে খন্দকার মোরশেদ জামান লিমন পেয়েছেন ১০ হাজার ২৮১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সতেজ আহমেদ পেয়েছেন ৪ হাজার ২৬০ ভোট।

নির্বিাচন উপলক্ষে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও ফরিদপুর পুলিম প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও মান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর পৌরসভায় ২৭ জন এবং মধুখালীতে ৬জন কর্তব্যরত থাকবেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ নির্বাচনে ৬০৭ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি কেন্দ্রে একজন এস আই একজন এ এস আই ও তিন জন কনস্টেবল দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া বিজিবির ছয়টি পেট্রল দল নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচরেন নিরাপত্তার জন্য র্যাবের ১৪টি পেট্রল দল (প্রতি দলে আটজন) দায়িত্ব পালন করবেন।
ফরিদপুর পৌরসভার বর্ধিত এলাকার সমন্বয়ে ৬৬ দশমিক ৫৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বর্তমানে ২৭টি ওয়ির্ডের সমন্বয়ে গঠিত।২০১৯ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুসারে এখনে ভোটার সংখ্যা ১,৪৮,২৭৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১,৭৮৬ এবং নারী ভোটার ৭৬,৫৭১ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফরিদপুর পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর শহরকে পৌরসভায় রুপান্তর করা হয় ১৯৬৯ সালে। ফরিদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু নির্বাচিত হন ২০১১ সালে। এরপর গত ৯বছরে এখানে আর কোনো নির্বাচন হয় নাই। মাঝপথে ফরিপদপুর পৌরসভা কে সিটি কের্পোরেশনে উন্নর্তিকরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা মাঝ পথে থেমে যায়।
উল্লেখ্য ফরিদপুরের জনগণ তাদের নতুন মেয়র নির্বাচন করতে পেরে খুশি। সারা শহরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।