সংগঠনের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগের আদর্শে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সততা, আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে যে কোনো রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সেটাই প্রমাণ করে গেছেন। কাজেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মাথায় রেখে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে হবে।’
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এই সংগঠনের অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। এটাই জাতির পিতা বলেছিলেন। আজ যে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, ভাষার অধিকার পেয়েছি- এর প্রতিটি সংগ্রাম শুরুই হয়েছিল ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ছাত্রলীগ সংগঠনটা আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতা ও ভাষার অধিকার অর্জন, গণতন্ত্র এবং ভোট-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে কোনো লড়াই-সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছেন। অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রাণ দিয়েছেন। তবে শহীদের তালিকা করলে সেখানে ছাত্রলীগের নামই সব থেকে বেশি পাওয়া যাবে।’
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে এজন্য তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকেছে। করোনাভাইরাসে কেউ মারা গেলে যখন তার স্বজনরাও মৃতদেহ ফেলে চলে গেছেন- তখন এই ছাত্রলীগই মৃতদেহ সৎকারে এগিয়ে এসেছিল। মানুষের হাতে অর্থ ছিল না, কারো কাছে হাত পাততেও পারছিল না- তখনও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের সহযোগিতা করেছে। আর কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে কোনো কাজই অবহেলার নয়, ছোট নয়।’ মুজিববর্ষে সরকার ঘোষিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে হয়ত আমরা একটু থমকে গেছি। কিন্তু করোনার মধ্যেও আমরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশে যেন দুর্ভিক্ষের ছায়া না পড়তে পারে, সেজন্য কৃষি উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদী না থাকে- সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের ৭৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস এবং সাফল্য-অর্জনের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ছাত্রলীগের রক্তদান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।