দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের একটি সেতুর স্বপ্ন পূরণে দুই বছর আগে যে বিপুল কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছিল পদ্মার পাড়ে, তা পূর্ণ অবয়ব পেল বৃহস্পতিবার।
৪১তম এই স্প্যানটি সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির (পিলার) ওপর বসানো হচ্ছে। স্প্যানটি খুঁটি থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে ভাসমান ক্রেনে রাখা ছিল। সকাল ১০টার দিকে স্প্যানটি নিয়ে খুঁটির দিকে রওনা দেয় ভাসমান ক্রেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্প্যান নিয়ে ভাসমান ক্রেন খুঁটির কাছে পৌঁছে যায়। তারপর সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। আর অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ শেষ হয়।
এর ফলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সেতু দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ তৈরি হলো।
এরপর দ্বিতল এই সেতুর ঢালাইয়ের কাজ, অ্যাপ্রোচ রোড ও ভায়াডাক্ট প্রস্তুত করা, রেলের জন্য স্ল্যাব বসানো হয়ে গেলেই স্বপ্নের পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে।
আর এক বছরের মধ্যেই সেতুটি চালু করা যাবে বলে ইতোমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এই মাহেন্দ্রক্ষণ ঘিরে পদ্মাপাড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। কেবল পদ্মার দুই তীরের বাসিন্দারা নন, ঢাকা থেকেও অনেকে এসেছেন সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ নিজে চোখে দেখতে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুর কাদের জানান, গত শুক্রবার পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ছয় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়। ৪১তম স্প্যানটি বসাতে বুধবারই সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়।
যে ৪১টি স্প্যান দিয়ে পুরো পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ২০টি বসানো হয়েছে, আর মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ১৯টি স্প্যান। একটি স্প্যান বসেছে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝখানে। এবার শেষ স্প্যানটি বসলেই দুই প্রান্ত জোড়া লেগে গেলো।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
সাধারণত, সেতু স্টিলের অথবা কংক্রিটের হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুটি হচ্ছে স্টিল ও কংক্রিটের মিশ্রণে। সেতুর মূল কাঠামোটা স্টিলের, যা স্প্যান হিসেবে পরিচিত। খুঁটি ও যানবাহন চলাচলের পথ কংক্রিটের। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি খুঁটির সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে।
পদ্মার মূল সেতু, অর্থাৎ নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। অবশ্য দুই পারে আরও প্রায় চার কিলোমিটার সেতু আগেই নির্মাণ হয়ে গেছে। এটাকে বলা হয় ভায়াডাক্ট। এর মধ্যে স্টিলের কোনো স্প্যান নেই।
পদ্মা সেতু: গুরুত্বপূর্ন তথ্য (এক নজরে)
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম : পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য : ৬.১৫ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতুর প্রস্থ : ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক।
পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হবে : নিচ তলায়।
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট: ৩.১৮ কিলোমিটর।
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক : দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটর।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় মূল সেতুতে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে জনবল প্রায় ৪ হাজার।
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।
পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর ৬০ ফুট।
পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট।
প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং ৬টি।
পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা ২৬৪টি।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর (সম্ভাব্য)
পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।
পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হবে।
পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২টি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।