বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শরৎকাল, ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাংলাদেশকে মার্কিন গবেষকদের সতর্কবার্তা নিপাহ মহামারী নিয়ে

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০
  • ২৮১ Time View

বাংলাদেশ, ভারত তথা এশিয়া অঞ্চলের নিপাহ ভাইরাস ‘আরেকটি মহামারীর কারণ হতে পারে’ বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ বা পিএএনএস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আগে যতটা ধারণা করা হয়েছিল এই ভাইরাস তার থেকে বেশি সংক্রামক। যেকোনো সময়, যেকোনো অঞ্চলের জনবসতির ভেতর ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭০০ বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসটির এমন স্ট্রেইন পেয়েছেন যা এই বিপদের কারণ হতে পারে।


গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেক্সশাস ডিজিজেসের পরিচালক এবং বিখ্যাত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি। গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করার পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অনুমোদন দেয়া হয়। জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে ২ নভেম্বর।
গবেষকেরা বলেছেন, ভাইরাসটি দিনে দিনে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সংক্রমণের ‘সহজ স্ট্রেইন’ তৈরি করে ফেলতে পারে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ-ভারতের ঘনবসতি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর দেখা দেয়। প্রাণঘাতী এই রোগটির এখনো কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। কেরালায় ২০১৮ সালে যে ১৮ জন আক্রান্ত হন, তার ১৭ জনেরই প্রাণ গেছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিকভাবে যেসব প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধিকে অগ্রাধিকার দেয়, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ সেসব রোগের একটি। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশই মারা যায়।

২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রায় প্রতিবছরই এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরে দেশে ৩০৩ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মারা গেছে। এ রোগে আক্রান্ত বেঁচে থাকা রোগীরা দীর্ঘ মেয়াদে নানা ধরনের স্নায়ুগত জটিলতায় ভুগে থাকে। বাংলাদেশে শীতকালে খেজুরের গাছ কেটে হাঁড়ি বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। ওই হাঁড়ি থেকে রাতে বাদুড়ও রস পান করে। এ সময় বাদুড়ের লালা থেকে নিপাহ ভাইরাস হাঁড়ির রসে চলে যায়। বাদুড়ের প্রস্রাবের মাধ্যমেও ভাইরাসটি খেজুরের রসে মেশে।

এ ছাড়া গাছে বাদুড়ে খাওয়া ফলেও নিপাহ ভাইরাস থাকতে পারে। ওই রস ও ফল খেলে মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তারপর আক্রান্ত রোগী থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ায় নিপাহ ভাইরাস। ভাইরাসটির কারণে জ¦র, মাথা ধরা, পেশির যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব থেকে শুরু করে ফুসফুসের সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে।
এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, যে অঞ্চলে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়, সেসব জায়গায় রোগটি হয়। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যেসব জায়গায় খেজুর গাছ নেই সেখানেও রোগটি দেখা গেছে। এমনকি রস পান করেননি এমন মানুষও রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাথন এপস্টেইন গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘ভাইরাসটি বারবার দরজায় কড়া নাড়ছে।’


‘এটি বারবার বাদুড় থেকে মানুষে চলে যাচ্ছে। করোনার মতো মানুষ থেকে মানুষ সহজে হয়তো ছড়াচ্ছে না; কিন্তু আমরা সেই শঙ্কা করছি। এতে এমন জেনেটিক স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট থাকতে পারে যা খুব সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বড় ধরনের মহামারী সৃষ্টি হতে পারে।’
এর আগের একটি গবেষণায় বলা হয়, নিপাহ ভাইরাস নির্দিষ্ট মৌসুমে (এপ্রিল থেকে নভেম্বর) প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়ায়, যাকে বলা হয় ‘নিপাহ বেল্ট’।
কিন্তু এপস্টেইন বলছেন, ‘গবেষণায় আমরা দেখেছি রোগটি যেকোনো অঞ্চলে ছড়াতে পারে।’
‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেকোনো একটি অঞ্চল থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে; কিন্তু আমরা বিষয়টিতে গভীর মনযোগ দিচ্ছি না।’
প্রাদুর্ভাব এখনো বিক্ষিপ্ত আকারে থাকলেও গোটা পৃথিবীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই গবেষক।

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102