বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন
১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শরৎকাল, ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাংলাদেশে করোনা মহামারি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১
  • ১৪৩ Time View
পশ্চিমা কয়েকটি দেশে শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও বাংলাদেশে এই মৌসুমে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্ত হার নেমে এসেছে পাঁচ শতাংশের নিচে। গত কয়েকদিন ধরেই শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেভাগেই কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় এই মহামারি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।  তবে শনাক্তের এই হার অন্তত চার সপ্তাহ অব্যাহত থাকলেই করোনা নিয়ন্ত্রণে বলা যাবে। তবে নিয়মিত মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতেই হবে-এমনকি টিকা দেওয়ার পরেও, যতক্ষণ না পুরো বিশ্ব করোনামুক্ত হয় । অন্যথায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে ।

গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর শনাক্তের হার কমতে থাকে। ডিসেম্বর জুড়ে যা নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তাতে ৪৮ হাজার ৫৫১ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। সে সময় প্রতিদিন গড়ে শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৫৬৬ জনের বেশি । পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের গড় হার ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। এ বছরের জানুয়ারির প্রথম আট দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাত হাজার ১৮০ জন। দৈনিক গড়ে ৮৯৮ জন। শনাক্তের গড় হার ছয় দশমিক ৯২ শতাংশ। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে। ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে এই হার নেমে আসে পাঁচ শতাংশের নিচে। ওইদিন নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৯০ শতাংশ। এরপর ১৫ জানুয়ারি সেই হার কিছুটা বেড়ে হয়েছিল পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তবে এর পরের দুই দিন ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি শনাক্তের হার  যথাক্রমে চার দশমিক ৭৩ ও  চার দশমিক ২৩ নেমে আসে।
এদিকে শনাক্তের এ নিম্নমুখী প্রবণতাকে করোনা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাদের মতে, এখনো বাংলাদেশ করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেটি বলা যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামলে সেটাকে নিম্নগামী এবং সেই হার চার সপ্তাহ  অব্যাহত থাকলে তখন কোনো দেশ একটা সহনীয় পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বলা যাবে।
এ প্রসঙ্গে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যদি শনাক্তের পরিমাণ শতকরা পাঁচের নিচে হয়, তাহলে সেটা সহনীয় বলা যাবে। বর্তমানে আমরা সেখাইে আছি। আমরা যদি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারি, তাহলে পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে। তা না হলে আবার আগের মতোই বাড়বে।’
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশে শনাক্তের হার কমার মধ্য দিয়ে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে এ কথা ঠিক। তবে সেটা আবার পরিবর্তন হয়ে অবনতিও হতে পারে। সেজন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ সাধারণত শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে যদি চার সপ্তাহ থাকে, তাহলে আমরা বলতে পারি একটা সহনীয় পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। সেটা এখনো হয়নি।’
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গঠিত ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কমিটির সদস্য সচিব ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘শীতে সংক্রমণ বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা সবাই করেছিল। সেই আশঙ্কা থেকেই সংক্রমণ ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগাম সতর্কতা হিসেবে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ উদ্যোগ কাজে লেগেছে। হাসপাতালগুলোয় ভালো ব্যবস্থাপনা ছিল। সংক্রমণ বাড়ার যে ঝুঁকিগুলো ছিল সেগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। পিকনিক, বিয়ে, জনসভা, কনসার্টের মত জনসমাগমের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।’
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এখন যে ধারা চলছে তা যদি ধরে রাখতে হয় তাহলে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। এটা প্রমাণিত, যদি নিয়মিত মাস্ক পরি, নিয়ম মেনে চলি, তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। সতর্কতামূলক যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে, শিথিল করা যাবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর  যে তথ্য দিয়েছে, তাতে গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরো শনাক্ত ৫৬৯ জনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৬৩২ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন। তাদের নিয়ে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশে মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে সাত হাজার ৯০৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬৮১ জন,  মোট সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৭২ হাজার ৪৩৭ জন।
গতকাল রবিবারের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়,  গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার চার দশমিক ২৩ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত শনাক্তের সার্বিক হার ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫০ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫৩টি এবং পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৪৬টি। এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৩টি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে সাত লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৪টি। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে পুরুষ ১৬ জন, আর নারী সাত জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন পাঁচ হাজার ৯৯২ জন, আর নারী মারা গেছেন এক হাজার ৯১৪ জন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৭৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর নারী ২৪ দশমিক ২১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে বয়স বিবেচনায় ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছেন ছয় জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আছেন একজন। বিভাগভিত্তিক মৃত্যু বিশ্লেষণে ২৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের দুই জন এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও রংপুর বিভাগের একজন করে। এরা সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে নয় কোটি ৪৫ লাখ পেরিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ লাখ ২২ হাজার। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৯তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৮তম অবস্থানে।

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102