বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার মারা গেছেন। সোমবার (৮ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পরে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
বেশ ক’দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিককে। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। আগে থেকেই সমরেশের সিওপিডি সমস্যা ছিল। হাসপাতালে ‘ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ (স্লিপ অ্যাপমিয়া) বাড়তে থাকে।
১৯৪২ সালের ১০ মার্চ সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জিলা স্কুল থেকে। তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডএর সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারএর প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প “অন্যমাত্রা” লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে।
সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” ছাপা হয়েছিলো দেশেই ১৯৭৫ সালে। তিনি শুধু তার লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দলিত করে। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেররা তাঁর কলমে উঠে আসেন রক্ত-মাংস নিয়ে। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।