নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ আক্রমণের আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তায় থাকা সদস্যদের পক্ষ থেকেও এমন হামলা আসতে পারে। ফলে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবনে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের সহিংসতার ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তার এই বিশাল উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সেক্রেটারি ম্যাককারথি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য হুমকির ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। তবে তিনিসহ অন্য কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত হুমকির নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাননি।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার প্রস্তুতিতে তিন ঘণ্টার সুরক্ষা মহড়া দেওয়ার পর এক সাক্ষাত্কারে ম্যাককার্থি বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত এই প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং এ অভিযানে যুক্ত প্রত্যককে পর্যবেক্ষণ করছি।’
গত সপ্তাহ থেকেই ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্য ওয়াশিংটন ডিসিতে আসছেন। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় থাকা সদস্যদের চেয়ে যা আড়াই গুণের মতো বেশি।
এদিকে সেনা সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদীদের সংযোগ আছে কি না, তা নিয়মিতই পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে এবার বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর পক্ষ থেকেও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এক সপ্তাহ আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই পর্যবেক্ষণ কাজ চলছে। এটি আগামী বুধবারের মধ্যে শেষ হবে। এরই মধ্যে কর্মকর্তারা গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বলা হচ্ছে, ইরাক-আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকা সেনার চেয়েও বেশি সংখ্যক বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য এখন পাহারা দিচ্ছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ অঙ্গরাজ্যগুলোর পার্লামেন্ট ভবন।
ট্রাম্পের টালমাটাল রাজত্বের সমাপ্তি আর ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
মাইক পেন্স বলেছেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্ষমতা হস্তান্তরে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং জনগণের ভোটাধিকারের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের শপথ অনুষ্ঠান যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের প্রধান কাজ।’
ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডবের পর ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। উগ্রপন্থিদের কড়া বার্তা দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান।
এফবিআইর পরিচালক ক্রিস রে বলেন, ‘যারা আবারো সহিংসতার ইচ্ছাপোষণ করছেন, আগের অপরাধীদের পরিণতির কথা মাথায় রাখবেন। এফবিআইর হাত থেকে কোনো উগ্রপন্থিই রেহাই পায়নি। শপথ অনুষ্ঠান বানচালের অপচেষ্টা রুখে দিতে আগ্রাসী ভূমিকায় থাকবে এফবিআই।’
বাইডেনের শপথগ্রহণের আগে লকডাউন থাকবে গোটা ওয়াশিংটন ডিসি। মহামারির কারণে আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে না বাইডেনের অভিষেক। বাতিল করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্যারেড অনুষ্ঠান ও মহড়া।
সীমিত অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো কবিতা পাঠ করবেন কবি আমান্ডা গোরম্যান। জাতীয় সঙ্গীত শোনা যাবে জনপ্রিয় গায়িকা লেডি গাগার কণ্ঠে। সুরের মুর্ছনায় মাতাবেন আরেক বিখ্যাত শিল্পী জেনিফার লোপেজ।
অন্যদিকে, তল্পিতল্পা গোছানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে সিনেটে অভিশংসনের মুখে থাকা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের সময় ফ্লোরিডায় অবস্থান করবেন ট্রাম্প।