জানতে চাইলে ইউজিসির (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) সদস্য বিশ্বজিৎ সাহা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর ভর্তি মৌসুমের আগে এ ধরনের সতর্কতা নোটিশ দেওয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জেনে-বুঝে ভর্তি হতে পারে; এবারও সেটি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা রয়েছে সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খুবই শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি আকারে তা জারি করা হবে।
কালো তালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আউটার ক্যাম্পাস বা শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার সুযোগ নেই; কিন্তু নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউদান ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
এছাড়াও গণবিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিতভাবে বিবিএ, পরিবেশ বিজ্ঞান, এমবিবিএস, বিডিএস এবং স্কাইকোথেরাপি প্রোগ্রামগুলো হাইকোর্ট ডিভিশন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টি এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
অননুমোদিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিবিএ প্রোগ্রামের অনুমোদন নিয়ে আরো ১০টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এগুলো হলো- জেনারেল বিবিএ, ফিন্যান্স ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, বিবিএ ইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, বিবিএ ইন মার্কেটিং, বিবিএ ইন ম্যানেজমেন্ট, বিবিএ ইন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, বিবিএ ইন অ্যাকাউন্টিং, বিবিএ ইন ইকনোমিস, বিবিএ ইন ইন্টারপেনারশিপ, বিবিএ ইন স্লাপাই চেইস ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করছে।
মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে ব্রিটেনিয়া ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুইজন মালিকানা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ ধামমন্ডি, অন্য গ্রুপ উত্তরা এলাকায শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয় নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে সনদ বিক্রি, অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানো, ইউজিসির অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাস-বিল্ডিং চালানো, মালিকানা দ্বন্দ্ব, সরকার বন্ধ করেছে; কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো অভিযোগ। তাই শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হতে হবে। পরে কোনো সমস্যায় পড়লে এর দায়ভার ইউজিসি নেবে না।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সতর্কতা জারি করা হচ্ছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য দেওয়া হবে। কারণ সনদে স্বাক্ষরের দায়িত্ব উপাচার্যের। তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এ পদে নিয়োগ থাকলে সেসব বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হবে তালিকায়। গণবিজ্ঞপ্তিতে দেশের মধ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। কারণ বাংলাদেশে এখনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমতি নেই।
গণবিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউজিসির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুক বলেন, আমাদের তালিকা প্রস্তুত। যেকোনো সময় এটি জারি করা হবে। ইউজিসির ওয়েবসাইটে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্টার মার্কস করা আছে সেগুলোর নাম গণবিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হবে।