বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২২ অপরাহ্ন
১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ হেমন্তকাল, ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ৩১৪০ পদে নিয়োগ আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে খুব উদ্বেগ নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন প্রার্থীরা আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, নিক্সন চৌধুরীকে তলব করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি মানবতাবিরোধী অপরাধ বাগেরহাটের ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড পর্যবেক্ষক পাঠানো না-পাঠানো জাতিসংঘের বিষয়, আমরা চিন্তিত নই: ওবায়দুল কাদের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস

ভাতের চাইতে বেশি পুষ্টিকর ঢেমশি বা বাকহুইট বাংলাদেশে কতটা সম্ভাবনাময়

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২
  • ৫৬৫ Time View

বাংলাদেশের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সরিষার মতো দেখতে ঢেমশি এ অঞ্চলেরই আদি ফসলগুলোর একটি যা এক সময় এ ভূখণ্ডে বেশ জনপ্রিয়ও ছিলো।

বাংলাদেশ অর্গানিক প্রডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুস ছালাম বিবিসিকে বলছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চগড়ে ঢেমশির চাষাবাদ করছেন।

“এটি চাষ খুবই সহজ ও খরচও খুব কম। জমি চাষ করে বীজ বুনলেই ফসল পাওয়া যায়। খুব বেশি অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে ঢেমশি নিয়ে তার লেখায় এটিকে বহুমাত্রিক ফসল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ঢেমশি কীভাবে খাওয়া যায়

ঢেমশি মূলত একটি শীতকালীন ফসল যার ইংরেজি নাম বাকহুইট। গমের নামের সাথে মিল থাকলেও এটি গম জাতীয় নয়।

মি. ছালাম বলছেন যে এর সাথে বরং সরিষার মিল আছে অর্থাৎ খৈলজাতীয়।

“এটি তিন কোনা দানা। ভাত হিসেবেও খাওয়া যায় আবার আটা করে রুটি হিসেবেও খাওয়া যায়,” বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান বিশ্বের সবচেয়ে দামী মধু ঢেমশির ফুল থেকেই উৎপাদন হয়। একই ধরণের তথ্য আছে কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটেও।

ড. জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন যে ষাটের দশক শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় ঢেমশি চাষ হলেও পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।

“এখন আবার উত্তরবঙ্গে ঢেমশির আবাদ হচ্ছে। এটি দিন দিন আরও জনপ্রিয় হওয়ায় চাষের পরিসরও বাড়ছে”।

তবে মি. ছালাম বলছেন সরকারিভাবে সহায়তা না পাওয়ার কারণে এ ফসলটির ক্ষেত্রে এখন খুব বেশি অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না।

আর সঠিক নীতি সহায়তা না থাকা যারা চাষ করছেন তারাও বাজারে প্রত্যাশিত দাম পান না।

“এটিকে মাঠে আবার নিয়ে আসতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। এটি এলে জনপুষ্টির ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি হবে,” বলছিলেন তিনি।

ঢেমশির নানা উপকারিতা

কৃষিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন যে ঢেমশি ঠিক ভাতের মতোই তবে পুষ্টিগুণ ভাতের চেয়ে অনেক বেশি।

শর্করা কম থাকায় আর ফাইবার বেশি থাকায় এটি রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়া প্রাকৃতিকভাবেই এতে বেশি পরিমাণ আমিষ, ক্যালসিয়াম, জিংকসহ নানা উপাদান আছে বলে শিশু স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী।

মূলত ভাত, মাছ, রুটি, দুধ, ডিম, সবজি ও ফলের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান থাকার পাশাপাশি ঢেমশিতে আছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যামাইনো এসিড ও ইলেকট্রলাইটস

এছাড়া আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এগুলো হলো:

•বেশি আমিষের কারণে গর্ভবতী মা ও শিশুর মায়ের জন্য উপকারী

•হাঁড়ক্ষয় রোধ করে

•বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

•শিশুর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে

•এর আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে পারে

কখন কীভাবে এটি চাষ হতে পারে

ঢেমশি স্বল্প জীবনকালের একটি বিশেষ ফসল। বছরের যে সময়ে জমি পতিত থাকে বা ধান আবাদ করা সম্ভব হয় না সেসব জমিতে সাথী ফসল হিসেবেও ঢেমশি আবাদ করা যায়।

আবার যেখানে ফসল হয় না সেখানেও এটি সহজে চাষাবাদ করা সম্ভব বলে বলছে কৃষি বিভাগ।

এর জন্য একদিকে যেমন রাসায়নিক সার দরকার হয় না তেমনি পোকামাকড় খুব একটা আক্রমণ করে না বলে বালাইনাশকেরও খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।

চর এলাকা মাটি এবং বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো আবাদ হয় এর এবং নিজেই আগাছা নষ্ট করে বলে আলাদা করে আগাছা দমন করতে হয় না ঢেমশির জন্য।

ঢেমশির বীজ বপনের সময় হলো কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস এবং জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন কিছুটা ভালো হতে পারে।

প্রতি একর জমিতে চাষের জন্য বার কেজি বীজের দরকার হয় এবং সাধারণত একর প্রতি এক টন পর্যন্ত উৎপাদন হতে পারে।

আবার একই সময়ে এর ফুল থেকে মধু উৎপাদন সম্ভব এবং সেক্ষেত্রে প্রায় ১২০ কেজি পর্যন্ত মধু প্রতি একরে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ফুল আসার আগ পর্যন্ত ঢেমশি পুষ্টিকর শাক হিসেবেও খাওয়া যায়।

বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা

ড. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশে এর ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বললেও আব্দুস ছালাম বলছেন সরকারের তরফ থেকে দৃষ্টি না দিলে আপাতত এর ভবিষ্যৎ নেই।

“সার কীটনাশক লাগে না বলে এর প্রতি নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ কম থাকে। আর এদেশে খাদ্যের ক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। ফলে ঢেমশির মতো ফসলের দিকেও কর্তৃপক্ষের আগ্রহ কম,” বলছিলেন তিনি।

মি. আলম অবশ্য দাবি করেছেন যে, ঢেমশি চাল, আটা এবং মধু বিদেশে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

তিনি লিখেছেন, “ঢেমশিই পারে এ দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অতি সহজে নিরাপদ খাদ্য প্রতিষ্ঠা করতে ।সূত্র: বিবিসি বাংলা

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102