তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো একটি আলাদা মাদরাসা। স্বতন্ত্র এই মাদরাসাটির নাম রাখা হয়েছে ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা’।
ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম মাদ্রাসাটি চালু হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজের ঢাল এলাকায় তিনতলা ভাড়া বাড়িতে ‘দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এক হাজার ২০০ বর্গফুটের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কোনো বয়সী হিজড়া ভর্তি হতে পারবেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ ও বাড্ডা এলাকার ৪০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ অংশ নেন। দুই পর্বের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সকালে বাংলাদেশ হিজড়াকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু প্রধান অতিথি ছিলেন। বিকেলের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরাঙ্গীরচরের বাইতুল উলুম ঢালকানগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি জাফর আহমাদ।
মাদ্রাসাটি স্থাপনে অর্থায়ন করছে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী ফাউন্ডেশন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাদ্রাসায় প্রথমে হিজড়াদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া হবে। পরে কওমি শিক্ষা সিলেবাস অনুযায়ী নুরানি, নাজেরা, হিফজুল কোরআন ও কিতাব বিভাগ চালু হবে। গতকাল থেকেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরে হিজড়াদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি আলাদা বিভাগ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মাদ্রাসায় ১০ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন।
২০২০ সালে সরকার স্বীকৃত কওমি সিলেবাস অনুযায়ী মাদরাসাটি পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে ১০ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে অনাবাসিক এই মাদরাসাটির যাত্রা শুরু হয়েছে।
শুরুতে মাদরাসাটিতে তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাদরাসাটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সচিব মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ হুসাইনী।
তিনি বলেছেন, মাদরাসায় নুরানি বিভাগ থেকে নিয়ে হেফজুল কোরআন, দাওরায়ে হাদিস থাকবে। গত বছর সরকার কওমি মাদরাসার যে সিলেবাসের (সনদ) স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই সিলেবাস অনুসারে মাদরাসাটি পরিচালিত হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে মাদরাসার শিক্ষকদের ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হচ্ছে। যারা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আছে তাদের বেতন ৩০ হাজার টাকা। শিক্ষকসহ মাদরাসার পরিচালনার খরচ দিচ্ছে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন।
সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
নতুন এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নিশি জানান, খুব ছোটবেলায় স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি হিজড়া তা জানার পর আর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এক সময় বাড়িও ছাড়তে হয়। তারপর থেকে তৃতীয় লিঙ্গে মানুষের সঙ্গে তার জীবন কাটছে। সেলাই বা পার্লারের কাজের প্রশিক্ষণ পেলে কর্মসংস্থানে প্রবেশ করতে চান। হিজড়া সোনালী জানান, তৃতীয় লিঙ্গে মানুষ হওয়ায় কোনো দিনই পড়াশোনার সুযোগ পাননি। আশা করছেন মাদ্রাসায় পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ পেয়ে স্বাবলম্বী হবেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার পরিচালক আবদুর রহমান আজাদ বলেন, হিজড়াদের জন্য এই উদ্যোগ প্রথমত, আল্লাহকে খুশি করতে। দ্বিতীয়ত, মানবিক কারণে বিবেকের তাড়নায় হিজড়াদের কল্যাণে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ছয় মাস ধরে ঢাকার যেসব এলাকায় হিজড়ারা বাস করেন, এমন আট জায়গায় গিয়ে তাদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া শুরু হয়েছে।
আবিদা সুলতানা মিতু বলেন, হিজড়ারা সহযোগিতা পেলে দেশের সম্পদে পরিণত হবেন। তাদের কাজের সুযোগ দিতে হবে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কিছু করতে যাবে না। অপরাধ কমে আসবে।
অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম শুভ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম মাদবর বক্তব্য দেন। কাউন্সিলর জানান, মাদ্রাসার জন্য স্থায়ী একটি জায়গার ব্যবস্থা করা হবে।