সীমান্তের ওপার রাখাইন রাজ্য থেকে ছোঁড়া মর্টারশেলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মুহাম্মদ মাইনুল কবির সীমান্তের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগও জানান।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। সকাল ১১টায় তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মুহাম্মদ মাইনুল কবির বলেন, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রতিবাদ জানানোর জন্য আমরা তাকে ডেকে এনেছি।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। গতকাল সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেমে থেমে সীমান্তের ওপার থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সব মিলিয়ে রাখাইনের দুই পক্ষের সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ ও বাংলাদেশ অংশে রাখাইনের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশি হতাহত হওয়ায় নেপিদোকে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে ঢাকা। প্রতিবাদপত্রে কী কারণে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকেছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সদস্যদের ফেরত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। চিঠিতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বার্তা দেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রয়েছে। সোমবার সকালে মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কথা হয়েছে। মিয়ানমার তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় ফেরত নেবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, এর আগে ভারতেও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেকে ঢুকে পড়েছিল। সেখান থেকে সেই সদস্যদের আকাশপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় জোরালো যুদ্ধ করছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারা একত্রিত হয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সীমান্তের কাছে বেশ কয়েকটি শহরসহ রাখাইনের বড় এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।