মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমারকে এই হুমকি দিয়েছেন। মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবে বলে হুমকিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের আটকের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান করেছে সেনাবাহিনী।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সু চির সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর সেনাবাহিনী দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
গতকাল সকালেই মিয়ানমারের নেতাদের আটকের পর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলে, সু চিসহ অন্যদের ছেড়ে না দিলে মিয়ানমারের দায়ী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এ বিষয়ে গতকাল বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে মিয়ানমারের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিবৃতি দিলেন। বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, জনগণের ইচ্ছার ওপর কখনো শক্তি প্রয়োগ করা উচিত নয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিহ্নের চেষ্টাও করা উচিত নয়।
গণতান্ত্রিক উত্তরণের পরিপ্রেক্ষিতে গত এক দশকে মিয়ানমারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মিয়ানমার ফের সামরিক শাসনে ফেরায় দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিল যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে জো বাইডেন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হবে।
একই সঙ্গে বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বে যেখানেই গণতন্ত্র আক্রমণের শিকার হবে, সেখানেই তার (গণতন্ত্র) পক্ষে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন সু চিসহ অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি বিপুল জয় পায়। এরপর থেকেই মূলত সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। সেনাবাহিনী ও সেনাসমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে কারচুপির অভিযোগ করে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। গতকালই মিয়ানমারের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। এর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে সামরিক শাসন চলা মিয়ানমার ২০১৫ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সুবাস পেতে শুরু করে। গত নভেম্বরের নির্বাচনে সেটা কিছুটা ভিত্তি পায়। কিন্তু গতকাল আবার সামরিক জান্তার কবলে চলে গেল দেশটি।