যুক্তরাজ্য থেকে ছড়ানো করোনার যে নতুন ধরন হৈচৈ তুলেছে তার নাম বি.১.১.৭ অথবা ভিইউআই-২০২০১২/০১। এটির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অন্য প্রজাতিগুলোর চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি।
করোনা মহামারির শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির জেনেটিক গঠনে পরিবর্তন আসে কিনা- তার ওপর চোখ রাখছিলেন। সব ভাইরাসেরই মিউটেশন বা ধরন পরিবর্তন হয়। ভাইরাস পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। প্রতি মাসে সাধারণত এক বা দুটি পরিবর্তন হয়ে থাকে।
মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের বিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ড. লুসি ভ্যান ডর্প বলেন, ‘বেশির ভাগ সময়ই ভাইরাসের পরিবর্তনগুলো গুরুত্বহীন, খুব বিরল দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া এটা ক্ষতিকর কিছু নয়। সার্স-কোভের মতো জেনোমে আমরা যে মিউটেশনগুলো দেখেছি তার বেশির ভাগই ভাইরাসটির আচরণে কোন পরিবর্তন আনে না।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এটা অন্তত ১৭ বার পরিবর্তিত হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন।
চিহ্নিত হলো করোনার নতুন ধরনের ভাইরাস
করোনার নতুন এই প্রকারটি চিহ্নিত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। এমনও হতে পারে যুক্তরাজ্যের বাইরে আগে থেকেই এটা ছড়াচ্ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে ভাইরাসটি চিহ্নিত হওয়ার কারণ তাদের বৈজ্ঞানিক অবকাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী। এর নাম কগ-ইউকে বা ‘কোভিড-১৯ জেনোমিক্স কনসোর্টিয়াম’- এতে দেড় লক্ষেরও বেশি সার্স-কোভ-টু ভাইরাসের নমুনার জেনেটিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে যখন যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছিল- তখন বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে এটি ব্রিটেনে আসছে মূলত ইউরোপ থেকে। এর আদি উৎপত্তিস্থল চীন নয়। করোনা বিস্তার কীভাবে ঘটছে তা বুঝতে এই নজরগিরি খুবই জরুরি। সে কারণে যে দেশগুলো করোনাভাইরাসের জেনোমিক সিকোয়েন্সিং করছে সেসব দেশেই নতুন কোন মিউটেশন হলে ধরা পড়ে যাচ্ছে। যেমন-দক্ষিণ আফ্রিকা, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস।
কেবল যুক্তরাজ্য নয় এরই মধ্যে করোনার নতুন রূপ পৌছে গেছে ইতালি, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসে। পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়াতেও। আরো কিছু দেশে পৌছে যাওয়ার জোর সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকাতে পাওয়া গেছে একটি নতুন রূপ। যার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে হুবহু মিল নেই। তবে প্রায় কাছাকাছি।
এখন প্রশ্ন হলো নতুন ধরনের এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত টিকা কি কার্যকারিতা পাবে। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই বলছেন, নতুন মিউটেশনের ফলে টিকার কার্যকারিতা কমে যাবে এমন কোন সম্ভাবনা অন্তত স্বল্পমেয়াদে এখনো নেই। তবে ড. ভ্যান ডর্প বলছেন, আগামী দিনগুলোতে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রশ্নটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা