ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা সিনেটরদের জিম্মি করতে চেয়েছিল। এ জন্য তারা কমান্ডো স্টাইলে সেখানে হামলা চালায়। এ সময় সিনেটররা প্রাণ বাঁচাতে সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহার করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জনরায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনটা বলা হচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায়।
আগস্টে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যদি নির্বাচিত হন তাহলে আমাদের গণতন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে ট্রাম্প প্রশাসন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা বুধবার যখন মার্কিন সংসদ ভবন ক্যাপিটলের বাইরে তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন, ভেতরে তখন ক্যাপিটলের সব প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়।
দরজার দিকে তাক করে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেন নিরাপত্তারক্ষীরা। যে কোনো সময় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়তে পারেন উগ্র সমর্থকরা। (খবর রয়টার্সের )
এই যখন অবস্থা, তখন শেষমেশ গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো সিনেটরদের। আমেরিকান সময় অনুযায়ী, বুধবার এমনই নজিরবিহীন রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় পরিস্থিতি দেখল আমেরিকার আইনসভা।
ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটররা এখনও কার্যত পরাজয় মেনে নিতে নারাজ। আলোচনা, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর– এর মধ্যেই চলছে কটাক্ষ, টিকা-টিপ্পনি।
তার মধ্যেই বাইরে হই হট্টগোল। কয়েক হাজার জনতার চিৎকার। তাদের গতিমুখ ক্যাপিটল ভবন। ক্যাপিটলের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাদের আটকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই গণ্ডগোলের খবর তখন পৌঁছে গেছে ভিতরেও।
সিনেটররাও বাইরের দিকে উঁকিঝুঁকি মারছেন ঠিক কী হয়েছে বোঝার জন্য। আমেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটেনি। ফলে তারাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী হয়েছে। তখনও ততটা ‘সিরিয়াসলি’ নেননি সিনেটররা।
কিন্তু বিষয়টি যে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘হামলা’, সেটি স্পষ্ট হয় যখন একের পর এক দরজা সজোরে বন্ধ করে দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পর পর ভেঙে পড়ছে দরজা-জানালার কাচ। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটরদের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ- ডাকুন আপনার নেতাকে! তার জন্যই তো এসব হচ্ছে।
কিন্তু বিষয়টি যে ভয়ানক, সেটি সিনেটররা টের পেলেন আরও কিছুটা পর। ক্যাপিটলের মূল দরজা শুধু বন্ধ করাই নয়, ভেতর থেকে আসবাবপত্র রেখে সাপোর্ট দিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ফ্লোর ডিরেক্টর কেইথ স্টার্ন বলেন, প্রত্যেকে নিজের নিজের আসনে বসে পড়ুন। শান্ত থাকুন।
এর মধ্যেই বাইরে কাঁদানে গ্যাসের মতো কিছু একটা ছোড়া হয় হামলাকারীদের আটকানোর জন্য। এবার ঘোষণা– ‘সিটের নিচে রাখা গ্যাস মাস্ক পরে নিন সবাই’।
যে কোনো সময় যে কোনো দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে পারে বাইরের আতঙ্ক। গোড়ার দিকে যেটি ছিল কৌতূহলের বিষয়, সেটিই হয়ে দাঁড়াল বিভীষিকা।
শেষ পর্যন্ত আর ঝুঁকি নেননি ক্যাপিটলের নিরাপত্তা অফিসাররা। সিনেটরদের বললেন, সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ কক্ষে পৌঁছে যেতে। সেভাবেই ফাঁকা করা হলো ক্যাপিটল।
হাউস সার্জেন্টকে কোনো এক নিরাপত্তা অফিসারকে নির্দেশ দিতে শোনা যায়, ক্যাপটলকে আমরা যেন নিরাপদ রাখতে পারি, সেটি নিশ্চিত করুন।
ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮১২ সালে যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন এমন আগ্রাসনের সাক্ষী হলো। ১৮১৪ সালে ওয়াশিংটনে অভিযান চালানের সময় ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার আলেক্সান্ডার ককবার্ন ও মেজর জেনারেল রবার্ট রোসের নেতৃত্বে নির্মাণাধীন ক্যাপিটল ভবনে আগুন জালিয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। তবে প্রবল বর্ষণের কারণে সে যাত্রায় ওই ভবনটি বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়।
ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউএস ক্যাপিটল ভবন শুধুমাত্র একটি অবকাঠামো নয়। এটি তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি আমেরিকার গণতন্ত্র এবং আমাদের জীবন-যাপনের মূর্ত প্রতীক।’
সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার দায়ে। বুধবার আইন প্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন ঠিক সে সময়েই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক দেশটির আইনসভা কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়েন।
সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক নাটকের সাক্ষী থাকলেন ক্যাপিটল ও সিনেটররা।