ঢাকা ১০:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
সরকার যদি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে,তাহলে ৫ মিনিটও সময় পাবে না: ইসলামী আন্দোলনের আমির নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন “ইসলাম ও জাতির ঐতিহ্যবিরোধী”: জামায়াতে ইসলামীর আমির চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, রবিবার শুনানি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবার ২৭ বিলিয়ন ছাড়ালো শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি, যেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি না রাখাটা আত্মঘাতী: প্রধান উপদেষ্টা ‘২২৬টি মামলা হয়েছে, ২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ বক্তব্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোরবানির ঈদের আগেই নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক, থাকছে ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী কলকাতার একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের আন্তরিক চেষ্টার ভুল ব্যাখ্যা নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল

  • অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • ৩১৩ Time View

রোহিঙ্গাদের এই স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

প্রথম ধাপে কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে নেওয়া হয়।

এই রোহিঙ্গারা ‘স্বেচ্ছায়’ সেখানে গিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং অবশ্যই তাদের সে দেশে ফেরাতে হবে। অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের এই নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চটা করছে।

“এই পর্যায়ে এসে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া, সেটাই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান।

“একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক চেষ্টাকে খাটো করা এবং ভুল ব্যাখ্যা না করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সে অনুযায়ী সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “কক্সবাজারে জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোকে কিছুটা ফাঁকা করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী আবাসনের মধ্যে বছর বছর কয়েক হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে।

“হতাশায় নিমজ্জিত এই জনগোষ্ঠীর প্রলম্বিত অবস্থানের কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপ হতে থাকায় নিজস্ব পরিকল্পনা নিতে এবং নিজস্ব অর্থায়নে ভাসান চরকে তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে কারণে সরকার সেখানে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।”

এই চরে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সারা ব্ছর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, মনোরম লেক এবং টেকসই স্থাপনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ, কৃষি জমি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, দুটি হাসপাতাল, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, গুদাম, টেলিযোগাযোগ সেবা, থানা, বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র, খেলার মাঠ ইত্যাদি রয়েছে।

কক্সবাজারের ক্যাম্পে তাঁবুর ঘরের তুলনায় ভাসান চরে কংক্রিটের উপর শক্ত অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলে নিতে সক্ষম।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভাসান চরের অবকাঠামোগুলোর দৃঢ়তা প্রমাণিত হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এই চর টিকবে কি না সে বিষয়ে কোনো কোনো মহলের উদ্বেগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতেও একই রকম রয়েছে ভাসান চর। জোরাল জলচ্ছ্বাসেও চরের এক হাজার ৪৪০টি ঘরের সবগুলো এবং ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র অক্ষত রয়েছে।

মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে নৌ পথে এই চরের যোগাযোগ থাকার কথাও তুলে ধরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভাসান চরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি ২২টির মতো এনজিও এরইমধ্যে সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে কাজ শুরু করেছে।

চরের নিরাপত্তায় নারী পুলিশসহ ‘পর্যাপ্ত সংখ্যক’ পুলিশ সদস্য মোতায়েন এবং পুরো চরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কথাও জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদে ও সম্মানের সাথে স্বভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে দেশটির ভেতরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নিতে মানবাধিকার গ্রুপগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

Tag :

সরকার যদি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে,তাহলে ৫ মিনিটও সময় পাবে না: ইসলামী আন্দোলনের আমির

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের আন্তরিক চেষ্টার ভুল ব্যাখ্যা নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল

Update Time : ০৫:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গাদের এই স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

প্রথম ধাপে কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে নেওয়া হয়।

এই রোহিঙ্গারা ‘স্বেচ্ছায়’ সেখানে গিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং অবশ্যই তাদের সে দেশে ফেরাতে হবে। অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের এই নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চটা করছে।

“এই পর্যায়ে এসে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া, সেটাই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান।

“একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক চেষ্টাকে খাটো করা এবং ভুল ব্যাখ্যা না করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সে অনুযায়ী সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “কক্সবাজারে জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোকে কিছুটা ফাঁকা করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী আবাসনের মধ্যে বছর বছর কয়েক হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে।

“হতাশায় নিমজ্জিত এই জনগোষ্ঠীর প্রলম্বিত অবস্থানের কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপ হতে থাকায় নিজস্ব পরিকল্পনা নিতে এবং নিজস্ব অর্থায়নে ভাসান চরকে তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে কারণে সরকার সেখানে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।”

এই চরে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সারা ব্ছর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, মনোরম লেক এবং টেকসই স্থাপনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ, কৃষি জমি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, দুটি হাসপাতাল, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, গুদাম, টেলিযোগাযোগ সেবা, থানা, বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র, খেলার মাঠ ইত্যাদি রয়েছে।

কক্সবাজারের ক্যাম্পে তাঁবুর ঘরের তুলনায় ভাসান চরে কংক্রিটের উপর শক্ত অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলে নিতে সক্ষম।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভাসান চরের অবকাঠামোগুলোর দৃঢ়তা প্রমাণিত হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এই চর টিকবে কি না সে বিষয়ে কোনো কোনো মহলের উদ্বেগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতেও একই রকম রয়েছে ভাসান চর। জোরাল জলচ্ছ্বাসেও চরের এক হাজার ৪৪০টি ঘরের সবগুলো এবং ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র অক্ষত রয়েছে।

মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে নৌ পথে এই চরের যোগাযোগ থাকার কথাও তুলে ধরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভাসান চরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি ২২টির মতো এনজিও এরইমধ্যে সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে কাজ শুরু করেছে।

চরের নিরাপত্তায় নারী পুলিশসহ ‘পর্যাপ্ত সংখ্যক’ পুলিশ সদস্য মোতায়েন এবং পুরো চরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কথাও জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদে ও সম্মানের সাথে স্বভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে দেশটির ভেতরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নিতে মানবাধিকার গ্রুপগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।