রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গ ছেড়েছে বিশ্বের নয়টি দেশ। আফ্রিকার এ দেশগুলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পরিষদের তৃতীয় কমিটির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে এই নয়টি দেশ। এই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ—এ নয় দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রস্তাবটির পক্ষে ১৩০টি ভোট পড়েছে। আর বিপক্ষে পড়েছে ৯টি ভোট। অথচ ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুবিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অবস্থান না নিয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছিল ওই ৯টি দেশ।
আজ শনিবার নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্র, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ এবং আনান কমিশনের এক সদস্যের টুইট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত কফি আনান কমিশনের সদস্য লেটিটিয়া ফন ডেন আসুম এক টুইটে ফল বিশ্লেষণ করে লিখেছেন, এই ৯ দেশ ২০১৯ সালে একই ধরনের অন্য প্রস্তাব গ্রহণের সময় ভোটদানে বিরত থেকেছিল। এবার তারা অবস্থান বদলালো।
চীন, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, লাউ পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে এবং মিয়ানমার আগের মতোই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
এবারও ভোট দানে বিরত বিরত থেকেছে ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভুটান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ ২৫ দেশ।
এদিকে মানবাধিকার প্রশ্নের এ প্রস্তাবকে পাশ কাটানোর কৌশল হিসেবে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে দেওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাবেক আনান কমিশনের সদস্য ও ডাচ কূটনীতিক লেটেশিয়া ভ্যান্ডেন অ্যাসাম টুইট বার্তায় বলেছেন, এই নয়টি দেশ ২০১৯ সালে দেওয়া এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এবার এই নয়টি দেশ তাদের অবস্থান বদলে সরাসরি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এবং প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু গোষ্ঠিগুলোর মানবাধিকার প্রশ্নে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। মিয়ানমারের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
বছরের শেষ কার্যদিবেসে গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি সিদ্ধান্ত আকারে গ্রহণ করার প্রসঙ্গ এলে মিয়ানমার আবার বিরোধিতা করে এবং ভোটাভুটির আহ্বান জানায়। মিয়ানমারের দাবিতেই ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি ভোট পড়ে।
আগেরবার কার্যত ভোটদানে বিরত থাকা আফ্রিকার নয়টি দেশ এবার সরাসরি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, যা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গেছে। এদিকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াউ মো তুনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃস্টির ফল ভালো হবে না। এ প্রস্তাব মিয়ানমার মেনে নেবে না এবং রাখাইন রাজ্যের সংকট সমাধানে কাজে আসবে না।