Update Time :
১১:৫৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
৩৬৫
Time View
লাখো মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পিতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
শহরের রাজেন্দ্র কলেজ ময়দানে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের। এরপর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় কমলাপুরস্থ ময়েজমঞ্জিলে তাঁর পিতা চৌধুরী ইউসুফ আলী মোহন মিয়ার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
শেষবারের মতো তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুরদুরান্ত হতে মানুষ ছুটে আসেন।আজ শুক্রবার বাদ জুমা দুপুর সোয়া দুইটার দিকে রাজেন্দ্র কলেজ ময়দানে একটি হিমবাহী গাড়িতে করে ময়েজমঞ্জিল হতে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মরদেহ আনা হয়। এসময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানাযায় অংশ নিতে ফরিদপুর ছাড়াও দুরদুরান্ত হতে মানুষ ছুটে আসেন। বেলা ৩টার দিকে শহরের চকবাজার জামে মসজিদের খতিব ও সামমুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা কামরুজ্জামানের ইমামতিতে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয় নেতার দাফন কার্যে অংশ নিতে আগত জনতার পদচারণায় এসময় সেখানে তিল ধারণের ঠাই ছিল না সেখানে। রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে এসময় পার্শবর্তী ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়াম পর্যন্ত ছিল আগতদের ভিড়।
জানাযাপূর্ব সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পরিবারের পক্ষ হতে মরহুমের জেষ্ঠ্য মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফ, শরিয়তপুরের বাহাদুরপুর দরবার শরীফের প্রতিনিধি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হানজেলা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি শিল্পপতি এ কে আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা, অধ্যাপক এবিএম সাত্তার, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু। এছাড়া এসময় ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সামাদের পক্ষ হতে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান শেখ ফরিদ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
উল্লেখ্য ফরিদপুর (সদর-৩) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ পাঁচবার সংসদ সদস্য এবং তিনবার মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন জমিদার চৌধুরী মঈজউদ্দীন বিভাশ। তার পিতা ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া) ব্রিটিশ শাসনামলে একজন বিশিষ্ট মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন। তার চাচা চৌধুরী আবদুল্লাহ জহিরউদ্দীন (লাল মিয়া) আইয়ুব খানের সরকারে মন্ত্রিসভায় ছিলেন এবং অন্য চাচা এনায়েত হোসেন চৌধুরী পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হলে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ যোগ দেন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি সংসদে নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে তিনি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন । ১৯৯১ সালে তিনি আবার নির্বাচিত হন এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাধারণ নির্বাচনে তিনি জয়ী হলেও তার দল বিএনপি আওয়ামী লীগের কাছে হেরে ক্ষমতায় হারায়। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনেও জিতেছিলেন, তারপরে তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি তার আসন হারান। তিনি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।উল্লেখ্য নিউমোনিয়াজনিত অসুখে ঢাকার এভার কেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো) হাসপাতালে ভর্তি হন কামাল ইবনে ইউসুফ। এরপর তাঁর শরীরের নমূনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ করোনা পজিটিভ ধরা পরে। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৯ই ডিসেম্বর ঐ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।