শিক্ষাবর্ষের প্রথম দুই মাস তথা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কবে খুলবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। এ অবস্থায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর প্রাথমিকেও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে লেসন প্ল্যান (পাঠ পরিকল্পনা)। এরই মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিকের সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা যৌথভাবে তৈরি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিক (নেপ)। তারা শিক্ষকদের পাঠদানের জন্য টিসার গাইডকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যখন স্কুল খোলা হবে ওই সময় থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু হবে। এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুধু তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য করা হচ্ছে। বাকি শ্রেণিতে শিক্ষকরা যতটুকু পড়াতে পারবেন, তার ওপর মূল্যায়ন করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে প্রাথমিকের সব শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গতকাল রবিবার এ ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ঢিমে তালে চলতে সংসদ টিভি, রেডিসহ ভার্চুয়াল ক্লাস। তবে তাতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মনযোগ নেই বলে এরই মধ্যে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে পরিমার্জিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে শিক্ষাবোর্ড। তাতে বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির ৮৪ কর্মদিবস শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাস নেওয়া হবে। ওই সময় যতটুকু পড়ানো হবে, পরীক্ষায় ততটুকুর উপরই প্রশ্ন হবে।
এসএসসি-এইচএসসির আদলে একইভাবে প্রাথমিকে পর্যায়ে সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে নেপ ও এনসিটিবিকে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। নেপ সে আলোকে একটি গাইড লাইন তৈরি করে এনসিটিবিতে পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে এনসিটিবি সে গাইড লাইন অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পাঠপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
নেপের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শাহ আলম বলেন, বছরের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন থেকেই কীভাবে ক্লাস রুমে পাঠদান করানো হবে তার একটি রূপরেখা এনসিটিবিতে পাঠিয়েছি। রূপরেখাটি দেখে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে এনসিটিবিকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত বছরও এ রকম একটি রূপরেখা আমরা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবারো সে রকম সিলেবাস হবে।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে নেপের তৈরি করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাস ধরে সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। ওই সময় ১ নভেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে নেপ। সংক্ষিপ্ত এ পাঠ পরিকল্পনা চলার কথা ছিল ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনার কারণে ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় নেপ আবার নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে। যদি ১৫ নভেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয় তাহলে এ সিলেবাস বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে ওই সময় বলা হয়েছিল। অন্যথায় প্রাথমিকের প্রত্যেক শ্রেণির সব শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব মূল্যায়নে পঞ্চম শ্রেণির সনদ দেবে। পরবর্তীতে সরকার যে পথে হাঁটে।
এনসিটিবিরি সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, নেপের সঙ্গে যৌথভাবে আমার একটি রিমেডিয়াল লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। পাঠ্যবই, শিক্ষক গাইড ও লেসন প্ল্যান আছে। এই তিনটির মধ্যে সমন্বয় করে যখন ক্লাস শুরু হবে তখন থেকে একটি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠলে তার আগের শ্রেণির সঙ্গে বর্তমান ক্লাসের কোথায় লিকেজ আছে এবং শিখন বিষয়গুলো জরুরি ওই লিংকেজগুলো করে দিয়েছি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো নির্ধারিত তারিখ ঠিক করে এটি তৈরি করা হয়নি। কারণ এরই মধ্যে আরেক দফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তারিখ ধরে লেসন প্ল্যান তৈরি করলে নতুন করে আবার তৈরি করতে হবে। আমাদের যে লেসন প্ল্যান আছে তার মধ্যে আগের ক্লাসের যেসব লেসনের লিংকেজ আছে সেগুলো দিয়েছি। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠবে তখন দশক পর্যন্ত যোগ শিখানো হয়েছে। শিক্ষার্থীকে শতকের যোগ দিলে পারবে কি-না সেটা যাচই করার জন্য টিসার গাইডে (শিক্ষক গাইড) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্কুল খুললে শিক্ষকরা পাঠদানের জন্য লেসন প্ল্যান করবেন। তখন শিক্ষার্থীদের ওই বিষয়টি চেক করে দেখবেন অর্থাৎ পূর্ব পাঠের আলোচনা করবেন শিক্ষক। শিক্ষকরা এটা ফলো করলে শিক্ষার্থীর ঘাটতি থাকবে না। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে এটি কার্যকর হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণি থেকে বেশি জোড় দেওয়া হয়েবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি একটি সেমিনারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, স্কুল খোলার পর কতগুলো ক্লাস নেওয়ার সুযোগ থাকবে, তার ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত সিলেবাস তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থী পরের শ্রেণিতে ওঠার জন্য যোগ্য হল কি-না, তা যাচাই করতে পরের ক্লাসের জন্য সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, যেসব চ্যাপ্টারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লিংকেজ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সিলেবাস তৈরির নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিক মৌলিক সক্ষমতা অর্জনের বিষয় চিহ্নিত করে নতুন করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে জোর দিচ্ছি।