বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন
১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শরৎকাল, ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সবার চোখ এখন যার ওপর : সেনাপ্রধান মিন অং

আন্তজার্তিক ডেস্ক
  • Update Time : সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
  • ১২৩ Time View

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ শাসক দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আটকের পর দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।

সোমবারের এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনায় চলে এসেছেন মিয়ানমারের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

মিন অং হ্লাইং-এর পরিচয়
২০২১ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন। সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তিনি ২০১১ সালের ৩০শে মার্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

তিনি মিয়ানমারের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা কাউন্সিলেরও (এনডিএসসি) সদস্য। মিন অং এর আগে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম চিফ অব স্টাফ ছিলেন । ২০১১ সালের গোড়ার দিকে চার তারকা এবং ২০১৩ সালের মার্চে পাঁচ তারকাপ্রাপ্ত জেনারেল পদে আসীন হন। পদমর্যাদায় তিনি মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সমতুল্য।

মিন অং বার্মার তাভয় (বর্তমানে দাউই, মিয়ানমার) শহরে ১৯৫৬ সালের ৩রা জুলাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা থাং হ্লেইং একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, যিনি নির্মাণ মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন।

রেঙ্গুন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে তিনবারের প্রচেষ্টায় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে যোগ দেন। কিন্তু স্বল্পভাষী ও গম্ভীর ব্যক্তিত্বের জন্য সহপাঠীরা তাকে এড়িয়ে চলত বলে শোনা যায়।

“সে খুবই অল্প কথার মানুষ ছিল, পারতপক্ষে জনসম্মুখেও তেমন আসতো না।” মিন অং-এর ব্যাপারে ২০১৬ সালে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তার সহপাঠী।

পড়াশোনা শেষে ১৯৭৪ সালে তিনবারের প্রচেষ্টায় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে যোগ দেন। স্নাতক সম্পন্নের পর মিন অং হ্লেইং মোন রাজ্যে কমান্ডার পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ২০০২ সালে তাকে পূর্বাঞ্চলের শান রাজ্যে ট্রায়াঙ্গল রিজিওন কমান্ডের কমান্ডার হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

“খুব ধীরগতিতেই তার পদোন্নতি হতো। অফিসার কর্পস মিডল র‍্যাংক ছাড়িয়ে তার পদোন্নতিতে আমি অবাকই হয়েছিলাম।” ২০১৬ সালে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিন অং-এর ডিফেন্স সার্ভিস অ্যাকাডেমির ক্লাসের এক সদস্য।

ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক আলিয়ঁস আর্মির মত দুটি বিদ্রোহী দলের মাঝে কেন্দ্রীয় মধ্যস্ততাকারী ছিলেন তিনি।

সামরিক পদবি
২০০৮- ২০০৯ পর্যন্ত তার পদবি ছিল মেজর জেনারেল, ২০০৯ এর শেষভাগ পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন, ২০১১ এর প্রথম দিকে জেনারেল, ২০১২ এর প্রথম দিকে উপ-সিনিয়র জেনারেল এবং ২০১৩ সালে সিনিয়র জেনারেল হন।

সেনা কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিবিদ
২০০৯ সালে কোকাঙে বিদ্রোহী মিয়ানমার ন্যাশনালিটিস ডেমোক্র্যাটিক আলিয়ঁস আর্মির বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনার পর তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।২০১০ সালের জুন মিন অং জেনারেল শ্ব মানকে সরিয়ে সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ৩০ শে মার্চ তিনি সিনিয়র জেনারেল থান শ্বয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর নতুন কমান্ডার-ইন-চিফ হন।

২০১১ সালের নভেম্বরে দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনা সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে মিন অং হ্লাইংয়ের বৈঠক হয় এবং চীনাদের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে চীনাদের সাথে আলোচনায় তিনি নেতৃত্ব দেন। কাচিন সংঘাতের বিষয়ে চীনের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট শি- জিনপিং এর সাথেও তিনি আলোচনায় অংশ নেন বলে পত্রিকাটি জানায়।

২৭শে মার্চ ২০১২ তে নাইপিদোতে এক বক্তৃতার সময় তিনি জাতীয় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অব্যাহত ভূমিকার উল্লেখ করেন। পরের মাসের ৩ তারিখেই মিন অং-কে ভাইস-সিনিয়র জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দেওয়ার ঘোষনা দেয় মিয়ানমার সরকার। এটি মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ। ২০১৩ সালের মার্চে তিনি সিনিয়র জেনারেল পদে পদোন্নতি পান।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব বদলের কথা থাকলেও আরও পাঁচ বছরের জন্য নিজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেন মিন অং। সেসময় থেকেই সামরিক পরিচয়ের বাইরেও নিজেকে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেন। সংসদে ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত আসন বাদ দেওয়ার অথবা সংবিধানের ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে অং সান সু চি’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ উন্মোচনের ব্যাপারে কখনোই আগ্রহ ছিল না তার।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অভিযোগ অনুযায়ী, মিন অং হ্লাইংয়ের সৈন্যরা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে এবং রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ‘পদ্ধতিগত বৈষম্য’ আরোপের এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে ।

বিশেষত, তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর মধ্যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ অন্তর্ভুক্ত।

মিন অংয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ
মিয়ানমারে উত্তপ্ত জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুক ১৯ জন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সংস্থাসহ অং হ্লাইইংকে ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনের পরই ফেসবুক এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরে ২০১৯ সালের ১৬মে তারিখে টুইটারও তাকে নিষিদ্ধ করে।

২০১৯ এর জুলাইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে মিন অং হ্লেইংয়ের মার্কিন সম্পদও তারা জব্দ করে নেয়।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসসহ বেশ কয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান।

এছাড়াও একই বছর জাতিসংঘের তদন্তকারীরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানায়।

More News Of This Category
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102